ভিডিও রবিবার, ২২ জুন ২০২৫

দাদুর গল্পে মুগ্ধ কণা

সংগৃহীত,দাদুর গল্পে মুগ্ধ কণা

অনেক দিন আগের কথা আজও হৃদয়ের গভীরে মোচড় দিয়ে ওঠে,গাঁয়ের ফেলে আসা দিনগুলোর কথা। মাটির দেয়ালের ঘর গোলপাতার ছাউনী, নারা-পল গুঁজে চালের মটকা মেরে ঘরটিতে থাকতে হতো। অভাব অনটনের সংসার,তবুও সুখের ঘাটতি দেখা দেয়নি কখনো।।

ঘরের আসবাবপত্র আলমারি, আলনা, টিভি , ফ্রিজের কোন বালাই ছিল না।
মাটির তৈরি মাটিয়ার মধ্যে নতুন কাপড় চোপড় রাখতে হতো।

ঘরের খোলা বারান্দায়ে একটা মাদুর পেতে ঘুমাতে হতো।
তীব্র গরমের সময় একটা তালপাতার পাখা ছিল গরম নিবারণের একমাত্র অবলম্বন।
তবে এখনকার মতো তখনকার দিনে গরমটা বুঝি অনেকটাই কম ছিল। বাড়ির চারপাশে আম কাঁঠালের বাগ বাগিচা, খেজুর, তাল লিচু,বেল গাছের ছায়া পড়তো।
বিদ্যুতের পাখা ছিল না তবুও গরমের অনুভূতি ততটা অনুভব হয়নি।
এখন পৃথিবীর তাপমাত্রা রেকর্ড পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে, কলকারখানার ধোঁয়ায় এবং নির্বিচারে গাছ কাটার ফলে বায়ু দূষণের মাত্রা ক্রমশই বেড়েই চলেছে।

দাদুর কথাগুলো শুনে, কণা যেন একেবারেই থ মেরে গেল।
 তুমি সত্যিই বলছো দাদু?
 তখনকার দিনে তোমরা খুব ভালো ছিলে তাই না ?
হ্যাঁ হ্যাঁ দিদি ভাই, আমরা খুবই ভালো ছিলাম।
তখনকার দিনে কত আরাম আয়েশে দিন কাটতো, খেলার সময় খেলা ,পড়ার সময় হলে পড়তে বসতাম।
রাতের বেলা সবাই মিলে যাত্রা গান শুনতে যেতাম। 
ছুটির দিনে সকালে বিকালে ঘুরে ঘুরে বায়োস্কোপ এ সিনেমা দেখা,বেদেদের সাপ বানরের খেলা দেখে কতো মজাই না পেতাম।

তোরা পালকি দেখেছিস কণা?
হ্যাঁ, হ্যাঁ দাদু,বইতে পড়েছি ?
সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের পালকির গান কবিতা পড়েছি,পালকি চলে, পালকি চলে।
হ্যাঁ ঠিকই বলেছিস, তবে তোরা এখন বইতে পড়ছিস, আর ঐ পালকিতে চড়েই তখনকার দিনে আমাদের বিয়ে হয়েছে।
আর রাজা রানী ঘোড়ার পিঠে চড়ে তখনকার দিনে ঘুরে বেড়াত।
হ্যাঁ হ্যাঁ তাই নাকি দাদু?

দাদু,আমাকে একটু পালকিতে চড়াবে?
দূর বোকা পালকি কি এখন আর দেখা যায়?
এখন পালকি দেখতে যাদুঘরে যেতে হবে।
আমাকে একদিন যাদুঘরে নিয়ে যাবে দাদু?
হ্যাঁ, অবশ্যই নিয়ে যাবো।
আরও মন দিয়ে শোন, আগে আমরা খবর শুনতাম রেডিওতে,
তাও আবার এক সাথে অনেক লোক একত্রে বসে।

কেন, কেন দাদু?
রেডিওর তখন অনেক দাম ছিল,যে কেউ কিনতে পারতো না।
আর চিঠি পত্রের মাধ্যমে আত্মীয় স্বজনের মধ্যে যোগাযোগ রাখতে হতো।
চিঠি পৌঁছাতে কতো দিন সময় লাগতো দাদু?
তা  প্রায় এক সপ্তাহের বেশি।
তখন কতো কষ্ট করতে হতো তাই না দাদু?
হ্যাঁ ঠিকই, আনন্দ কষ্ট দুটোই ছিল ।
আমরা সাত আট মাইল পথ পায়ে হেঁটে  স্কুলে যেতাম।

স্কুলের পড়া না করলে মাস্টারমশাই ভীষণ জোরে মারতেন।
আর এখন তোরা দিব্যি আরামে রাত দিন মোবাইল ফোন নিয়ে সময় নষ্ট করিস। 
এখন শুনছি অনলাইনে ক্লাস করতে ইন্টারনেট ল্যাপটপ লাগবে।
হায়রে আমার কপাল,এই শেষ বয়সে এসে কতো কিছুই নতুন করে দেখছি ! 
আগের দিনে আমাদের অসুখ বিসুখ হলে কোন এলোপ্যাথিক ওষুধ খেতে পারতাম না।
এক হোমিওপ্যাথিকের এক ফোটা ওষুধের সাথে দশ ফোটা জল মিশিয়ে ঢকাস ঢকাস করে গিলে খেয়ে ফেলতে হতো।

তা না হলে কবিরাজের গাছগাছড়ার পুরিয়া কিংবা বিভিন্ন পাতা শিকড় বাঁকড়ের রস করে খেতে হতো।
আর তাতেই অসুখ বিসুখ সেরে যেত। 
সর্দি জ্বর হাঁচি কাশি হলে মা,গাছ গাছালির ছাল বাঁকড়ের রস করে খেতে দিতো। 
আর তাতেই সব অসুখ সেরে যেত।

আরও পড়ুন

আবার অনেকেই ঝাড় ফুঁকে বিশ্বাসী ছিল।
আগের দিনে মানুষের বিশ্বাস ঝাড় ফুঁক দিয়ে অসুখ বিসুখ সারানো যায়।
আবার ভূত প্রেত তাড়ানো যায়।

দাদু, তখনকার দিনেও কি ভূত ছিল?
ভূত প্রেত নিয়ে আমি দ্বিধা দ্বন্দ্বে আছি, দিদি ভাই?
তবে আমি অনেক বার ভূতের মুখোমুখি হয়েছি।
আমি ভূত বলে কখনো মানিনি, তবু ও আমাকে কয়েকবার ভূতে তাড়া করেছে।
দাদু আমার কিন্তু ভীষণ ভয় করছে, ভূতের গল্পটা এখন থাক?
ও তাই নাকি, আচ্ছা ঠিক আছে আমি আর বলছি না?
হ্যাঁ এখন যাও, স্কুলের সময় হয়ে গেল আর একদিন বাকিগুলো  না হয় বলবো?
দাদু এতকাল তোমরা ছিলে অন্ধকার জগতে, কতো কষ্টে তোমাদের  দিন কেটেছে।
আর এখন আমরা আলোর সন্ধানে ছুটে চলেছি।
এখন আমরা কতটা সুখী বলো দাদু?

না না কণা, তখনকার দিনে আমরা সব সময় টাটকা শাকসবজি ফলমূল খেয়েছি, আনন্দ ফূর্তি করে ঘুরে বেড়িয়েছি।
কোনো খাদ্য দ্রব্যে ভেজাল কিংবা কীটনাশক ওষুধ প্রয়োগ করতে হয়নি।
বিনা সারে কিংবা একটু আধটু জৈব সার প্রয়োগ করে ভালো ফসল পেয়েছি।
আর এখন তোরা বিষাক্ত রাসায়নিক যুক্ত ভেজাল খাদ্য খাচ্ছিস?

নিত্য নতুন অজানা রোগে দিন দিন কতো মানুষ অকালে ঝরে যাচ্ছে।
এখন দূষিত ধোঁয়ায় দম বন্ধ হয়ে আসছে। কার্বন-ডাই-অক্সাইডের মাত্রা ক্রমশই বৃদ্ধি পাচ্ছে।
 এখন ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা ফেসবুক, ইউটিউব ভিডিও গেমের প্রতি আসক্ত হয়ে উঠেছে ।
এতে করে উঠতি বয়সী ছেলে মেয়েদের চোখের বারোটা বেজে যাচ্ছে।
এসব কি ভালো লক্ষণ মনে করেছিস কণা?
তোরা এখন এতটুকু বয়সে মোবাইল থেকে কিছুটা দূরে থাকার চেষ্টা কর।
হ্যাঁ দাদু ,তোমার কথা আমি মনে রাখবো। 

আমি আর মোবাইল ফোনে গেম খেলবো না, কার্টুন দেখবো না?
আমি এখন নিয়মিত পড়াশোনা করবো, খাওয়া দাওয়া করবো।
কথা দিচ্ছি। দাদু ,তুমি আমাকে কিন্তু জাদুঘর দেখাবে, আমি পালকি, ঢেঁকি,
বায়োস্কোপ এ সব গুলোই দেখবো।

আর একদিন অলির বাঁশ বাগানে ভূত দেখাতে নিয়ে যাবে। 
দাদু বলল,ঠিক আছে কণা দিদি, আমি যতটা পারি তোমাকে ততটাই দেখিয়ে আনবো।

 

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

বগুড়ার শীর্ষ সন্ত্রাসী যুবলীগ নেতা মতিন সরকার গ্রেফতার

জয়পুুরহাটের আক্কেলপুরে দুর্ধর্ষ ডাকাতি, বিপুল পরিমাণ স্বর্ণ ও টাকা লুট

পাবনার সুজানগরে আবার পদ্মার ভাঙনের কবলে বাড়িঘর ও ফসলি জমি

বগুড়ার দুপচাঁচিয়ার নার্সারি করে স্বাবলম্বী সাইফুল

জয়পুুরহাটের আক্কেলপুরে যৌথ বাহিনীর অভিযানে মাদক ব্যবসায়ীসহ আটক ৩

বগুড়ায় সেনাবাহিনীর হাতে সন্ত্রাসী সিয়াম গ্রেফতার