জুঁইদের লিচু খাওয়ার গল্প
৪র্থ শ্রেণির ছাত্রী জুঁই গ্রামের একটা প্রাইমারি স্কুলে পড়ে। চারপাশে বন জঙ্গলে ভরা তাদের শ্যামল গ্রাম। জুঁই কিছুটা চঞ্চল প্রকৃতির মেয়ে। কিন্তু ছোট হলেও গুছিয়ে কথা বলতে পারে। তাই তার বন্ধুরা তাকে অনুসরণ করে। ও যা বলে তাই করে, ও যা বলে তাই শোনে। বলা যায় জুঁই ৪র্থ শ্রেণির অলিখিত ক্যাপ্টেন। ক্যাপ্টেন্সি করার যথেষ্ট দক্ষতা ওর কাজে কর্মে ফুটে ওঠে। ভারি চটপটে একজন মেয়ে। জুঁইদের স্কুলটার পাশেই একটা লিচু বাগান। লাল খয়েরি লিচুতে পুরো বাগান টা রঙিন হয়ে উঠেছে। সবারই লোভ হয় লিচু খেতে।
স্কুলে তৃতীয় প্রিরিয়ডে অর্থাৎ টিফিনের আগের প্রিরিয়ডে জুঁই সবাইকে নিয়ে ছোট একটা মিটিংএ বসে। সেখানে সিদ্ধান্ত হয় যে আজ রঞ্জু কাকুর লিচু বাগান থেকে লিচু চুরি করে খাবে। ক্লাসের ত্রিশ জন ছাত্র-ছাত্রীর মধ্যে পঁচিশ জনই উপস্থিত। জুঁই বলল একজনও যেন ক্লাসে না থাকে। সবাই লিচু খেতে যাবো। যেমন ভাবনা তেমন কাজ। সবাই লিচু বাগানে গেল। লিচু বাগানে টঙ পেতে শুয়ে আছে রঞ্জু কাকু। কিভাবে পারবে লিচু? আর এত মানুষ বাগানে দেখলেও তো রঞ্জু কাকু বুঝে যাবে তারা লিচু খেতে এসেছে। তাই জুঁই সিদ্ধান্ত পাল্টালো। চুরি করা যাবে না। বুদ্ধি করে খেতে হবে। জুঁই সবাই কে বলল, তোরা সবাই রাস্তার ওপর থাক। দেখা যাক আমি কি করতে পারি? শান্তা তুই আমার সাথে আয়। আর তোরা শান্তা যখন ফিরে আসবে তখন ও যা বলে তাই শুনবি?
সবাই বলল ঠিক আছে তাই হবে। ধরা পড়িস না কিন্ত?
জুঁই বলল, আরে না না তেমন কিছু হবে না।
জুঁই আর শান্তা রঞ্জু কাকুর টঙে গিয়ে ডেকে উঠালো।
মাথায় হাত দিলো। বলল, জ্বর এসেছে নাকি তোমার কাকু ?
-না না জ্বর তো আসেনি আমার।
জুঁই বলল, যাই বলো কাকু তোমার একটু একটু জ্বর এসেছে। তোমার মাথায় পানি ঢেলে দেই।
রঞ্জু বলল, নারে পাগলি আমার জ্বর আসেনি।পানি ঢালা লাগবে না। আমার একটু ঘুম আসছে। তোমরা কি লিচু খাবে?
ওরা বলল, তুমি যদি দাও তবে খাব। না দিলে খাবো না।
রঞ্জু কাকু বলল, রাস্তার পাশে দেখো কয়েকটি গাছে লিচু ভালো পেকেছে তোমরা খেয়ে তাড়াতাড়ি স্কুলে চলে যাও? স্যারেরা তোমাদের সাথে রাগারাগি করবে।
জুঁই বলল, কাকু আমরা সবাই খাব?
-সবাই খাও গে।
- কয়টা খাবো কাকু?
- তোমরা যা পারো খেয়ে স্কুলে চলে যাও তাড়াতাড়ি।
- ঠিক আছে কাকু। আমরা আমাদের ইচ্ছে মতো খেয়ে চলে যাবনি।
জুঁই ও তার বন্ধুরা সবাই মিলে। যেমন ইচ্ছে বাগানের লিচু খেয়ে সাবাড় করে দিলো। ছোট ছোট লিচু গাছ। কয়েকটি গাছে একটি ও লিচু থাকলো না।
মনের আনন্দে লিচু খেয়ে ওরা যার যার মত ক্লাস করতে লাগলো।
ইতি মধ্যে রঞ্জু কাকু ঘুম ভেঙে গেলো। বাগানের অবস্থা দেখে তার খুব রাগ হলো, স্কুলে গিয়ে স্যারের কাছে বিচার দিলো।
স্যার জুঁইদের ডেকে পাঠালেন।
সবাই ভয়ে ভয়ে হেড স্যারের রুমে প্রবেশ করলো। রঞ্জু কাকু কে দেখে সবাই ভয়ে ভীমড়ি খেয়ে গেলো। জুঁই সবাইকে অভয় দিয়ে বলল, ভয়ের কিছু নাই আমি দেখছি।
রঞ্জুর কাকুর দেওয়া সকল অভিযোগ হেড স্যার সবাইকে রাগত স্বরে শোনালেন। এবং প্রশ্ন করলেন
তোমরা এত লিচু খেয়েছ?
জুঁই বলল হ্যাঁ স্যার খেয়েছি। আমরা সবাই মিলে খেয়েছি।
হেড স্যার এবার রেগে গিয়ে বললেন কেন খেয়েছ?
তোমাদের অভিভাবকদের কে ডেকে পাঠাচ্ছি।
জুঁই বলল, স্যার কেন ডাকবেন। আমরা তো অন্যায় করি নাই। রঞ্জু কাকু আমাদের খেতে বলেছে। তাই খেয়েছি।
আমাদের কি অন্যায়?
এবার হেড স্যার রঞ্জু কাকু কে জিজ্ঞেস করলেন
জুঁই যা বলল, তা কি সত্যি?
রঞ্জু কাকু আমতা আমতা করে বলল, সত্যি, তবে আমি তো ভেবে-----।
হেডস্যার ধুর মিয়া ওদের কে খাবার বলে আবার অভিযোগ নিয়ে এসেছো। জুঁই তোমরা ক্লাসে যাও।
জুঁই তার দলবল নিয়ে বিজয়ী বেশে ক্লাসের দিকে চলল।
মন্তব্য করুন