অষ্টিওপোরোসিসের কারণ ও প্রতিকার
স্বাস্থ্যকথা ডেস্ক : অষ্টিওপোরোসিস হল হাড়ের ভঙ্গুরতা রোগ, যেখানে হাড়ের ঘনত্ব কমে যায় এবং তা দুর্বল হয়ে পড়ে, ফলে ভেঙে যাওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। এই রোগে হাড় ফাঁপা এবং ভঙ্গুর হয়ে যায়, বিশেষত পিঠের কশেরুকা spine), নিতম্ব এবং কবজির হাড় সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মধ্যে থাকে।
অস্টিওপোরোসিস কেন হয়?
কারণসমূহ
বয়স বৃদ্ধির কারণে: বয়সের সাথে হাড়ের ঘনত্ব স্বাভাবিকভাবে কমতে থাকে।
হরমোনের ভারসাম্যহীনতা: নারীদের মেনোপজের পর ইস্ট্রোজেনের ঘাটতি এবং পুরুষদের ক্ষেত্রে টেস্টোস্টেরনের অভাব হাড় দুর্বল করতে পারে।
জেনেটিক কারণ: পরিবারে কারো অস্টিওপোরোসিস থাকলে ঝুঁকি বেড়ে যায়।
পুষ্টির অভাব: ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি হাড়ের স্বাস্থ্যকে খারাপ করে।
ব্যায়াম ও শারীরিক পরিশ্রমের অভাব: নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম না করলে হাড় দুর্বল হয়ে পড়ে।
ধূমপান ও মদ্যপান: এগুলো হাড়ের ঘনত্ব কমিয়ে দেয়।
কিছু ওষুধের প্রভাব: স্টেরয়েডের মতো কিছু ওষুধ দীর্ঘদিন ব্যবহার করলে হাড় ক্ষয় হতে পারে।
অন্য রোগের প্রভাব: থাইরয়েড, কিডনি রোগ বা আর্থ্রাইটিসের মতো সমস্যাগুলির ফলেও অস্টিওপোরোসিস হতে পারে।
অস্টিওপোরোসিসের লক্ষণ: প্রাথমিক পর্যায়ে লক্ষণ দেখা যায় না। উচ্চতা ধীরে ধীরে কমে যাওয়া। কোমর, পিঠ বা নিতম্বে ব্যথা। সামান্য আঘাতেই হাড় ভেঙে যাওয়া। মেরুদন্ডের কশেরুকা ভেঙে পিঠ বাঁকা হয়ে যাওয়া।
চিকিৎসা ও প্রতিরোধ
আরও পড়ুনসুষম খাদ্য: ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার (দুধ, দই, পনির), সবুজ শাকসবজি এবং ভিটামিন ডি-এর জন্য মাছ, ডিম খাওয়া।
ভিটামিন ডি গ্রহণ: নিয়মিত সূর্যালোক গ্রহণ করুন। প্রয়োজনে ভিটামিন ডি সাপ্লিমেন্ট নিন।
নিয়মিত ব্যায়াম:ওজন বহনকারী ব্যায়াম যেমন হাঁটা, দৌড়ানো বা সাইক্লিং হাড় মজবুত করে।
ধূমপান ও অ্যালকোহল বর্জন: এগুলো হাড়ের ক্ষতি করে।
পিরিয়ডিক বোন ডেনসিটি টেস্ট: ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তিদের জন্য হাড়ের ঘনত্ব পরীক্ষা করে ঝুঁকি নির্ধারণ করা প্রয়োজন।
চিকিৎসা পদ্ধতি
ওষুধ: বিসফসফোনেটস হাড় ক্ষয় রোধে কার্যকর। ক্যালসিটোনিন হাড়ের ব্যথা কমায় এবং হাড় ক্ষয় রোধ করে। মেনোপজ-পরবর্তী মহিলাদের জন্য হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি। হাড় ভেঙে যাওয়া ঠেকাতে যাঙ্ক লিগ্যান্ড ইনহিবিটর ব্যবহার করা যেতে পারে। ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন ডি-এর সাপ্লিমেন্ট নিয়মিত গ্রহণ করা। যদি হাড়ের ভাঙন গুরুতর হয়, তবে অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হতে পারে।
অস্টিওপোরোসিস একটি নীরব রোগ হলেও এটি সময়মতো শনাক্ত এবং প্রতিরোধ করা সম্ভব। স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, নিয়মিত ব্যায়াম এবং চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী জীবনধারা পরিবর্তন করে এই রোগের ঝুঁকি কমানো যায়।
সৌজন্যে
ডা. এম ইয়াছিন আলী
চেয়ারম্যান ও চিফ কনসালটেন্ট
ঢাকা সিটি ফিজিওথেরাপি হাসপাতাল
মন্তব্য করুন