ভিডিও বুধবার, ১৩ নভেম্বর ২০২৪

ভোগান্তিতে উত্তরাঞ্চলের যাত্রীরা

কাজীরহাট-আরিচা নৌপথে তিন মাস স্পিডবোট চলাচল বন্ধ

কাজীরহাট-আরিচা নৌপথে তিন মাস স্পিডবোট চলাচল বন্ধ, ছবি : দৈনিক করতোয়া

আবুল কালাম আজাদ, বেড়া (পাবনা) : ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে তিন মাসেরও বেশি সময় ধরে কাজীরহাট-আরিচা নৌপথে স্পিডবোট চলাচল বন্ধ রয়েছে। অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে ওঠা এই যোগাযোগ মাধ্যম বন্ধ থাকায় ভোগান্তিতে পড়েছেন পাবনাসহ উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলার মানুষ। অল্প সময়ে সহজে ঢাকার সাথে যাতায়াতের উপায় বন্ধ হয়ে গেছে তাদের।

চলাচলকারী যাত্রী ও বিআইডাব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে জানা যায়, কাজীরহাট-আরিচা নৌপথের দূরত্ব ১৩ কিলোমিটার। ২০১৬ সালে এই নৌপথে লঞ্চের পাশাপাশি স্পিডবোট চলাচল শুরু হয়। ভাড়া বেশি হলেও সময় কম লাগায় কিছুদিনের মধ্যেই এই বাহনটি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। পরে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে এই নৌপথে ফেরি চলাচল শুরু হয়। কিন্তু তারপরও স্পিডবোটে যাত্রী পারাপার না কমে বরং আরও বাড়তে থাকে।

প্রতিদিন এই বাহনটিতে প্রায় দেড় হাজার যাত্রী পারাপার হতেন। এই নৌপথের স্পিডবোটগুলোর চলাচল নিয়ন্ত্রণ করতেন পাবনার বেড়া ও মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। প্রতিদিন যে ৬০টি স্পিডবোট কাজীরহাট ও আরিচার মধ্যে চলাচল করত সেগুলোর মালিকও ছিলেন তারা। ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর স্পিডবোটের সাথে যুক্ত মালিক ও কর্মচারীদের বেশির ভাগই আত্মগোপনে যান।

এদিকে সরকার পতনের পর এই নৌপথের স্পিডবোট চলাচল কারা নিয়ন্ত্রণ করবেন তা নিয়ে দেখা দেয় মতবিরোধ। কাজীরহাট ও আরিচা এলাকার স্থানীয় বিএনপি নেতারা এ ব্যাপারে কয়েক ভাগে বিভক্ত হয়েছেন বলে জানা গেছে। কোন পক্ষের কয়টি স্পিডবোট চলবে তা নিয়ে দ্বন্দ্বের অবসান না হওয়াতেই চলাচল বন্ধ রয়েছে বলে জানা গেছে।

পাবনা শহরের কয়েজন যাত্রী জানান, পাবনা থেকে যমুনা সেতু হয়ে ঢাকায় যেতে পাঁচ থেকে ছয় ঘণ্টা সময় লাগে। আর যানজট থাকলে অনেক সময় ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা পর্যন্ত সময় লেগে যায়। অথচ কাজীরহাট-আরিচা নৌপথে স্পিডবোটে যাতায়াত করলে সময় লাগে সর্বোচ্চ চার ঘণ্টা। আবার বেড়া ও সাঁথিয়া উপজেলা থেকে কোচে যমুনা সেতু হয়ে ঢাকায় যাতায়াতে স্বাভাবিক অবস্থায় চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা সময় লাগে। অথচ এই ক্ষেত্রে স্পিডবোটে কাজীরহাট-আরিচা নৌপথ হয়ে ঢাকায় যাতায়াতে সময় লাগে তিন থেকে সাড়ে তিন ঘণ্টা।

যাত্রীরা জানান, স্পিডবোটে এই নৌপথ পাড়ি দিতে সময় লাগতো ১৫ থেকে ২০ মিনিট। দ্রুত যাত্রী পাওয়া যেত বলে স্পিডবোটের জন্য যাত্রীদের বেশি সময় অপেক্ষা করতে হত না। অথচ ফেরি ও লঞ্চে নৌপথ পাড়ি দিতে সময় লাগে এক থেকে দেড় ঘণ্টা। আবার এই বাহনের জন্য অনেক সময় নৌঘাটে এক থেকে দুই ঘণ্টা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়। তাই যাতায়াতের সুবিধার কথা বিবেচনায় এনে এই নৌপথে ন্যায্য ভাড়া নির্ধারণ করে অতি দ্রুত স্পিডবোট চালুর দাবি জানিয়েছেন সাধারণ যাত্রীরা।

বেড়া পৌর এলাকার দক্ষিণপাড়া মহল্লার সাব্বির হোসেন ঢাকার সাভারে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। তিনি জানান, স্পিডবোট চালু থাকাকালে তার বাড়ি থেকে সাভারে যেতে আড়াই থেকে তিন ঘণ্টা সময় লাগতো। এতে তিনি সপ্তাহে অন্তত তিনদিন বাড়ি থেকে অফিস করে আবার বাড়ি ফিরতেন। কিন্তু এখন অনেক সময় লাগে বলে বাধ্য হয়ে বাড়ি না এসে সাভারে থেকেই অফিস করেন।

আরও পড়ুন

সরেজমিনে কাজীরহাট ফেরিঘাটে গিয়ে দেখা যায়, স্পিডবোট চলাচল বন্ধ থাকায় সেখানে যাত্রীর সংখ্যা একেবারেই কমে গেছে। যারা লঞ্চ ও ফেরিতে চলাচল করতে পছন্দ করেন তারাই শুধু ফেরিঘাটে আসছেন। কিন্তু তাদের সংখ্যা খুব কম হওয়ায় ফেরিঘাটে থাকা দোকানগুলোতে বেচাকেনা একেবারেই কমে গেছে। ক্রেতার অভাবে আবার কিছু কিছু দোকান বন্ধ হয়ে গেছে। ঘুরে দেখা গেছে, ফেরিঘাট এলাকার ফাঁকা জায়গায় যমুনার পাড়ে ইঞ্জিনবিহীন স্পিডবোটগুলো ফেলে রাখা হয়েছে।

স্পিডবোট চালক বাপ্পী মিয়া বলেন, ‘ম্যালাদিন ধইর‌্যা বেকার হয়া আছি। কাজ না থাকায় সংসার আর চালাতে পারতেছি না।’ ফেরিঘাটের চায়ের দোকানি আব্দুল বাতেন জানান, স্পিডবোট চলাচল বন্ধ থাকায় এখন লঞ্চ ও ফেরির অল্প কিছু যাত্রী পার হতে আসে। এতে তার মতো ব্যবসায়ীদের বেচাকেনা একেবারেই কমে গেছে। স্পিডবোট চালু থাকা অবস্থায় প্রতিদিন পাঁচ থেকে ছয় হাজার টাকা বিক্রি হত। অথচ এখন বিক্রি হচ্ছে পাঁচশ’ থেকে এক হাজার টাকা।

বেড়া উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও কাজীরহাট এলাকার বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মো. রইজউদ্দিন বলেন, ‘আওয়ামী লীগের কতিপয় নেতা এই নৌপথে স্পিডবোট পরিচালনা করতেন। জনরোষের মুখে তারা স্পিডবোটগুলো ফেলে আত্মগোপনে আছেন। স্পিডবোট বন্ধ থাকায় সাধারণ মানুষ দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। তাই আমরা চাই দ্রুত যেন স্পিডবোটের চলাচল শুরু হয়।’

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) নগরবাড়ি-কাজীরহাট কার্যালয়ের বন্দর কর্মকর্তা (পোর্ট অফিসার) আব্দুল ওয়াকিল বলেন, ‘৫ আগস্টের পর থেকে স্পিডবোটগুলোর চলাচল বন্ধ আছে। ইতোমধ্যেই আমরা মালিক পক্ষকে এ ব্যাপারে চিঠি দিয়েছি। কিন্তু তাদের কোনো সাড়া পাইনি। এতে উর্ধ্বতন কতৃপক্ষকে অবগত করে তাদের রুট পারমিট বাতিল করা হয়েছে।

এখন এ নৌপথে স্পিডবোট চালানোতে আগ্রহী অন্যান্য স্পিডবোট মালিক পক্ষদের চিঠি দেওয়া হবে। এতে আশা করছি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমোদন সাপেক্ষে দ্রুতই স্পিডবোট চলাচল শুরু হবে।’

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

বগুড়ায় ৩ জনকে পিটিয়েছে দুর্বৃত্তরা

বড়দের পাশাপাশি উদ্বেগজনকহারে বাড়ছে শিশুদের ডায়াবেটিস

পাবনার ভাঙ্গুড়ায় ব্যবসায়ীর ৭ লাখ টাকা ছিনতাই

সবকিছুর সংস্কার প্রয়োজন নেই এটা করবে নির্বাচিতরা : ঠাকুরগাঁওয়ে মির্জা ফখরুল

ভোলা-২ আসনের সাবেক এমপি আলী আজম মুকুল গ্রেপ্তার

বড় ভাইয়ের মৃত্যুর খবর শুনে মারা গেলেন ছোট ভাই