সেনা অভিযানে ছয় হাজারের বেশি অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার
দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে ছয় হাজারের বেশি অবৈধ অস্ত্র এবং প্রায় দুই লাখ রাউন্ড গোলাবারুদ উদ্ধার করেছে সেনাবাহিনী। এসময় বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগে আড়াই হাজারের বেশি ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
আজ বুধবার (১৩ নভেম্বর) ইন এইড টু সিভিল পাওয়ারের আওতায় মোতায়েন করা সেনাবাহিনীর কার্যক্রম সম্পর্কিত প্রেস ব্রিফিংয়ে সেনাসদরের কর্নেল স্টাফ কর্নেল ইন্তেখাব হায়দার খান এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, ‘অবৈধ মাদকদ্রব্য উদ্ধার ও মাদক ব্যবসায়ীদের গ্রেফতার করা, বিভিন্ন অপরাধী ও নাশকতামূলক কাজের ইন্ধনদাতা ও পরিকল্পনাকারীদের গ্রেফতারে যৌথ অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। অভিযানে মাদককারবারিসহ মাদকের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সাত শতাধিক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়। এসময় বিপুল পরিমাণ ইয়াবা, ফেনসিডিল, মদ, গাঁজাসহ অন্যান্য মাদকদ্রব্য উদ্ধার করা হয়েছে।’
প্রেস ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, দেশের বিভিন্ন শিল্পাঞ্চলে ছয় শতাধিক অস্থিতিশীল পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছে সেনাবাহিনী। কারখানাগুলোকে চালু রাখার জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, বিজিএমইএসহ সংশ্লিষ্ট সবার সমন্বয়ে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এর ফলে বর্তমানে দেশের ২ হাজার ৮৯টি গার্মেন্টস কারখানার মধ্যে প্রায় সবগুলোই এ মুহূর্তে চালু রয়েছে। পাশাপাশি সাত শতাধিক বিভিন্ন ধরনের বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেছে, যার মধ্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সংক্রান্ত ১৪১টি, সরকারি সংস্থা/ অফিস সংক্রান্ত ৮৬টি, রাজনৈতিক কোন্দল ৯৮টি এবং অন্যান্য ঘটনা ৩৮৮টি। অপ্রীতিকর পরিস্থিতি, মানুষের জান ও মালের ক্ষতি প্রতিরোধে সারা দেশে অতিরিক্ত ১৩৩টি সেনা ক্যাম্প স্থাপন করা হয় এবং ১০ হাজারের বেশি অতিরিক্ত সেনাসদস্য মোতায়েন করা হয়। এছাড়া বিদেশি কূটনীতিক ব্যক্তি ও দূতাবাসগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য স্থায়ী ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে এবং সার্বক্ষণিক সেনা টহলের মাধ্যমে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হচ্ছে।
আরও পড়ুনদেশের পূর্বাঞ্চল ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল আকস্মিক বন্যায় সেনাবাহিনীর সদস্যরা স্থানীয় প্রশাসনের অনুরোধে দুর্গত এলাকায় স্বেচ্ছাসেবকদের সঙ্গে সম্মিলিতভাবে বিপদগ্রস্ত মানুষদের উদ্ধার, ত্রাণ বিতরণ এবং জরুরি চিকিৎসা সেবা দেয়। এছাড়া দুর্গত এলাকায় মোবাইল সংযোগ পুনঃস্থাপনে সহায়তা, মহাসড়কে ট্র্যাফিক চলমান রাখা, ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ ও সড়ক সংস্কার এবং বন্যা পরবর্তী পুনর্বাসনেও সেনাবাহিনী সক্রিয় ভূমিকা ছিল বলে প্রেস ব্রিফিংয়ে জানানো হয়। পরে দেশের মধ্য-উত্তরাঞ্চলের চারটি জেলা বন্যা আক্রান্ত হলে একইভাবে সেনাবাহিনীর সদস্যরা স্থানীয় প্রশাসনের অনুরোধে উদ্ধার, ত্রাণ বিতরণ এবং জরুরি চিকিৎসা সেবা কাজে অংশ নেয়। পাশাপাশি পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে ও সাম্প্রদায়িক সংঘাত এড়াতে এবং কক্সবাজার জেলায় এফডিএমএন ক্যাম্প এলাকায় সার্বিক নিরাপত্তা বজায় রাখতে সেনাবাহিনী নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষার পাশাপাশি সেনাবাহিনী বৈষম্য-বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিভিন্ন সময়ে যারা আহত হয়েছেন, তাদের সুচিকিৎসার ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। আজ পর্যন্ত ৩ হাজার ২৯৫ জনকে দেশের বিভিন্ন সিএমএইচে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে, যার মধ্যে ৪৩ জন এখনও চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
সংবাদ সম্মেলনে কর্নেল ইন্তেখাব হায়দার খান বলেন, দেশের বিরাজমান পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা, দেশের জনগণের জানমাল এবং রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ ও স্থাপনার নিরাপত্তা দেওয়াসহ সার্বিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। দেশের ৬২টি জেলায় সেনাসদস্যরা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় অন্তর্র্বতী সরকার, সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলো, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, স্থানীয় প্রশাসন, বিভিন্ন সংস্থা, গণমাধ্যম এবং স্থানীয় জনগণের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে সমন্বিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে সার্বক্ষণিক সক্রিয়ভাবে দায়িত্ব পালন করছে।
মন্তব্য করুন