অনেকে জানেন না তারা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত
বড়দের পাশাপাশি উদ্বেগজনকহারে বাড়ছে শিশুদের ডায়াবেটিস
স্টাফ রিপোর্টার : কোন রকম উপসর্গ ছাড়াই শরীরে ডায়াবেটিস আছে এমন অর্ধেক রোগী জানেন না তারা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। বড়দের পাশাপাশি দেশে বাড়ছে শিশুদের ডায়াবেটিস। ইন্টারন্যাশনাল ডায়াবেটিস ফেডারেশনের তথ্য অনুসারে, বিশ্বে প্রায় ৪২ কোটি মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে ডায়াবেটিস রোগী উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে।
এক্ষেত্রে বাংলাদেশের চিত্র আরও ভয়ংকর। সারা বিশ্বে প্রতি ১০ জনে ১ জন প্রাপ্তবয়স্ক ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। বর্তমান বাংলাদেশে প্রতি ১০০ জনে প্রায় ১৪ জন প্রাপ্ত বয়স্ক (২০-৭৯ বছর) ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। প্রতি ৪ জনে ৩ জন ডায়াবেটিস রোগী নিম্ন এবং নিম্ন মধ্যবিত্ত দেশে বসবাস করে। ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে প্রতি ২ জনে ১ জন ব্যক্তি জানে না যে তার ডায়াবেটিস আছে। বাংলাদেশে প্রায় ৭ হাজার ৪২৫’র বেশী শিশু ডায়াবেটিস আক্রান্ত যাদের গড় বয়স (১০-১২) বছর।
বৃহস্পতিবার বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস। ‘সুস্বাস্থ্যই হোক আমাদের অঙ্গীকার’ এই প্রতিপাদ্য নিয়ে সারা বিশ্বের মত দেশেও পালিত হচ্ছে এদিবসটি। তবে সারাবিশ্বের মত বাংলাদেশেও আশংকাজনকহারে ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। বাংলাদেশ এন্ডোক্রাইন সোসাইটি করতোয়া’কে জানিয়েছে, বর্তমানে দেশে প্রায় ১ কোটি ৩১ লাখ মানুষ ডায়াবেটিসে ভুগছেন এবং সারা বিশ্বের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান অষ্টম।
দেশের চারটি অসংক্রামক রোগের মধ্যে অন্যতম এই ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা ২০২৫ সালের মধ্যে দেড় কোটি ছাড়াতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও আন্তর্জাতিক ডায়াবেটিক ফেডারেশনের তথ্য অনুযায়ী, পৃথিবীতে প্রতি ১০ সেকেন্ডে একজন ডায়াবেটিস রোগীর মৃত্যু হয় এবং দুই জন নতুন ডায়াবেটিস রোগী শনাক্ত হয়।
গবেষণা বলছে শুধু প্রাপ্তবয়স্করাই নয়, দেশে দিন দিনই বাড়ছে ডায়াবেটিস আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা। পেডিয়াট্রিকস ডায়াবেটিক ক্লিনিক অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টারের (পিডিসিআরসি) তথ্য অনুসারে, বর্তমানে ৭ হাজার ৪২৫-এর মতো শিশু ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। এর অর্ধেকের বেশি অর্থাৎ ৫৩ শতাংশই আবার ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগের।
২০১০ সালের পর থেকে গত বছর পর্যন্ত বিভাগ দুটিতে ৪ হাজার ৬৩৯ শিশুর দেহে রোগটি ধরা পড়েছে। ঢাকা বিভাগে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা ৩ হাজার ৩৯৯ ও চট্টগ্রাম বিভাগে ১ হাজার ২৪০। এছাড়া রংপুর বিভাগে ৮৯৭, রাজশাহীতে ৫৭৮, ময়মনসিংহে ৪৮৫, খুলনায় ৪৬২, বরিশালে ২৯২ ও সিলেট বিভাগে ৭২ শিশুর দেহে ডায়াবেটিস ধরা পড়েছে। জেলাভিত্তিক সবচেয়ে বেশি ডায়াবেটিস ধরা পড়েছে ঢাকায়, ১ হাজার ৬৮২ শিশুর দেহে।
আরও পড়ুনপিডিসিআরসি বলছে, দেশে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত শিশুর ৮৭ শতাংশই টাইপ-১ আক্রান্ত। বাকি ১৩ শতাংশ বা ১ হাজার ১৬৭ শিশু টাইপ-২ আক্রান্ত। তবে টাইপ-১ শিশুর ৯০ শতাংশের ক্ষেত্রেই আক্রান্তের কারণ জানা যায়নি। মাত্র ১০ শতাংশ শিশুর ক্ষেত্রে টাইপ-১ আক্রান্তের কারণ জানা গেছে। সাধারণত ভাইরাল ইনফেকশন ও জন্মের তিন মাসের মধ্যে গরুর দুধ সেবন এ দুই কারণে শিশুদের এ ধরনের ডায়াবেটিস হয়।
বড়দের সাথে সাথে এজন্য শিশুদের টাইপ-১ ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে গুরুত্ব দেয়া উচিত। নানা কারণে দেশে শিশুদের ডায়াবেটিস বাড়ছে। ক্রমবর্ধমান নগরায়ণের ফলে খেলার মাঠ হারিয়ে যাচ্ছে। রাজধানীসহ জেলা শহরগুলোয় ভাড়া বাড়ি কিংবা ফ্ল্যাটে পরিচালনা করা হচ্ছে স্কুল। সেখানে নেই খেলার মাঠ ও শিশুর মানসিক বিকাশের উপযুক্ত পরিবেশ। শিশুদের মধ্যে প্রযুক্তিনির্ভরতা বাড়ছে।
পরিবর্তন এসেছে খাদ্যাভ্যাসেও। পাঠ্যক্রমও বাড়াচ্ছে শিশুদের অত্যধিক মানসিক চাপ। এসব কারণে শিশুদের শরীরচর্চা কিংবা শারীরিক পরিশ্রম অনেকাংশে হ্রাস পেয়েছে। ফলে শিশুরা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হচ্ছে। শিশুর ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে ইনসুলিনের সহজলভ্যতা নিশ্চিতের পাশাপাশি দরকার সচেতনতা বাড়ানো।
এর কুফল সম্পর্কে প্রচার-প্রচারণাও বাড়াতে উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। টেলিভিশনের পাশাপাশি পাঠ্যবইয়েও ডায়াবেটিস প্রতিরোধে করণীয় বিষয়ে জোর দেয়া দরকার। সব বয়সের মানুষের খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনার পাশাপাশি নিয়মিত শরীরচর্চার মাধ্যমে সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে হবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
মন্তব্য করুন