আদালতে এক আসামির স্বীকারোক্তি
দুপচাঁচিয়ায় গৃহবধূকে হত্যা করে ডিপ ফ্রিজে রাখার ঘটনার নয়া মোড় : নারীসহ গ্রেপ্তার ৩
স্টাফ রিপোর্টার/দুপচাঁচিয়া (বগুড়া) প্রতিনিধি : বগুড়ার দুপচাঁচিয়ায় গৃহবধূ উম্মে সালমা খাতুনকে হত্যা করে ডিপ ফ্রিজে রাখার ঘটনার নতুন মোড় নিয়েছে। বাড়ির ভাড়াটিয়াকে অনৈতিক কাজে বাধা এবং তাকে বাড়ি থেকে বের হয়ে যাওয়ার সময় সীমা বেধে দেয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে পরিকল্পিতভাবে তাকে হত্যা করা হয়েছে। নারী ভাড়াটিয়া মাবিয়া এই হত্যাকান্ডের ‘মাস্টার মাইন্ড’। ওই নারীসহ তিনজন এই হত্যাকান্ডে জড়িত।
আজ শুক্রবার (১৫ নভেম্বর) ভোররাতে জেলা ডিবি ও দুপচাঁচিয়া থানা পুলিশের যৌথ টিম এই তিনজনকে গ্রেপ্তার করে। একটি মোবাইল ফোনের সূত্র ধরে তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃতরা হলো উপজেলা সদরের উত্তরসাজাপুর গ্রামের আয়ুব আলীর স্ত্রী মাবিয়া (৫০), উপজেলার গুনাহার ইউনিয়নের তালুচ পশ্চিমপাড়া থেকে আব্দুর রহিমের ছেলে মোসলেম (২৮)কে ও তালুচ বাজার এলাকার নারায়ন চন্দ্র দাসের ছেলে সুমন (৩০)।
এর মধ্যে আসামি মোসলেম আজ শুক্রবার (১৫ নভেম্বর) বিকেলে আদালতে হত্যার দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছে। বিচারক তার দেয়া জবানবন্দি ১৬৪ ধারায় রেকর্ড করে তাকে কারাগারে পাঠিয়েছেন। পুলিশ সূত্র জানায়, হত্যাকান্ডের শিকার দুপচাঁচিয়া ডিএস কামিল মাদ্রাসার উপাধ্যক্ষ এসএম আজিজুর রহমানের স্ত্রী গৃহবধূ উম্মে সালমা খাতুনের খোয়া যাওয়া দুটি মোবাইল ফোনের কল লিস্ট যাচাই-বাছাই করা হয়।
এরপর তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে নিশ্চিত হয়ে হত্যার শিকার উম্মে সালমার বাড়ির চতুর্থ তলার ভাড়াটিয়া আয়ুব আলীর স্ত্রী মাবিয়া (৫০) গ্রেপ্তার করা হয়। পরে একই উপজেলার গুনাহার ইউনিয়নের তালুচ পশ্চিমপাড়া থেকে আব্দুর রহিমের ছেলে মোসলিম (২৮) ও তালুচ বাজারের নারায়ন চন্দ্র দাসের ছেলে সুমন (৩০)কে গ্রেপ্তার করে।
ঘটনার কয়েক দিন আগে হত্যাকান্ডের শিকার গৃহবধূ উম্মে সালমা ভাড়াটিয়া মাবিয়াকে অনৈতিক কাজে জড়িত থাকার কারণে বার বার বাড়ি ছেড়ে দেওয়ার কথা বলেন। কিন্তু সে বাড়ি না ছেড়ে দিয়ে টালবাহানা করতে থাকে। এরপর তাকে জোরপূর্বক বাসা ছেড়ে দেওয়ার জন্য বলা হয়। জোড়পূর্বক বাড়ি ছেড়ে দেয়ার কথা বলায় মাবিয়ার মধ্যে ক্ষোভ জন্মে।
এই ক্ষোভ থেকে মাবিয়া উম্মে সালমাকে হত্যার পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা অনুযায়ী ঘটনার দিন সকালে উপজেলার গুনাহার ইউনিয়নের তালুচ পশ্চিমপাড়া থেকে আব্দুর রহিমের ছেলে মোসলিম (২৮)কে ও তালুচ বাজারের নারায়ন চন্দ্র দাসের ছেলে সুমন (৩০) কে তার ফ্লাটে নিয়ে আসে মাবিয়া। এরপর দুপুর ১টার দিকে মাবিয়া গৃহবধু উম্মে সালমাকে ডাক দিয়ে তার বাসায় ঢুকে গল্প করা শুরু করে।
আরও পড়ুনএক পর্যায়ে ভাড়াটিয়া মাবিয়া বাড়ির মালিকের স্ত্রী উম্মে সালমাকে ক্লোরোফম দিয়ে অজ্ঞান করে। এরপর সেখানে মোসলিম ও সুমন প্রবেশ করে মোট তিনজন মিলে হাত, মুখ, পা বেঁধে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। পরে তার মরদেহ ডিপ ফ্রিজে রেখে আলমারিতে কুড়াল দিয়ে চোট দিয়ে ব্যর্থ হয়ে গৃহবধূর ব্যবহৃত দুটি মোবাইল ফোন ও ওয়াইফাই এর রাউটার নিয়ে ঘরে তালা দিয়ে পালিয়ে যায়।
পুলিশ খোয়া যাওয়া দুটি মোবাইল ফোন ও ওয়াই-ফাই এর রাউটার মোসলিম এর হেফাজত থেকে তার নানার বাড়ির মাটির দোতলা একটি ঘর থেকে উদ্ধার করে এবং হত্যাকান্ড ঘটিয়ে যে ভ্যানে করে তারা ঘটনাস্থল ত্যাগ করে সে ভ্যানটি সুমনের বাড়ি থেকে উদ্ধার করা হয়। হত্যার ঘটনার পর ঘরে তালা দিয়ে যে চাবিটি আসামি মাবিয়া নিয়ে গিয়েছিলো সেটিও ওই ফ্লাটের একটি কক্ষ থেকে চাউলের কৌটা থেকে উদ্ধার করে।
এদিকে, গ্রেপ্তারের পর আজ শুক্রবার (১৫ নভেম্বর) বিকেলে এই তিনজনকে বগুড়ার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট মেহেদী হাসানের আদালতে হাজির করা হয়। এদের মধ্যে আসামি মোসলেম এই হত্যাকান্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে হত্যাকান্ডের বর্ণনা দেয় এবং হত্যাকান্ডে জড়িত আরও ২ জন মাবিয়া ও সুমনের নাম বলে। মোসলেম জানায়, তারা মোট ৩ জনই উম্মে সালমা খাতুনের হত্যা ঘটনায় জড়িত। তাদের সাথে আর কেউ ছিলনা।
জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তাদের দেয়া জবানবন্দি ১৬৪ ধারায় রেকর্ড করে মোসলেমকে কারাগারে পাঠিয়ে দেন এবং অপর ২ আসামি মাবিয়া ও সুমনকে ২ দিনের রিমান্ড মুঞ্জুর করেন। এ বিষয়ে হত্যাকান্ডের শিকার উম্মে সালমা খাতুনের স্বামী মাওলানা এসএম আজিজুর রহমান জানান, তার ভাড়াটিয়া মাবিয়া বিভিন্ন অনৈতিক কার্যকলাপে জড়িত ছিলো। বিষয়টি তার স্ত্রী টের পেয়ে তাকে বাড়ি ছাড়তে বলে। এতে সে প্রতিহিংসামূলক পূর্ব পরিকল্পিতভাবে তার স্ত্রীকে হত্যা করিয়েছে। তার ছেলে সাদ বিন আজিজুর এই হত্যাকান্ডের সাথে কখনোই জড়িত থাকতে পারে না বলে তার বিশ্বাস।
অপরদিকে, এর আগে মা সালমা খাতুনকে হত্যার ঘটনায় ছেলে সাদ বিন আজিজুর রহমানকেও গ্রেপ্তার করে ৩ দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। র্যাব তাকে গ্রেপ্তার করে।
মন্তব্য করুন