ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর নামছে
বিশ্বে পানির উৎস প্রতিদিনই কমছে। পানি সংকটের মুখে পড়ছে মানবজাতি। যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় মহাকাশ সংস্থা (নাসা) বলছে, পৃথিবীর ভূ-গর্ভে পানির যত মজুদ আছে তার এক-তৃতীয়াংশই মানুষের কর্মকান্ডের কারণে দ্রুত ফুরিয়ে যাচ্ছে। ভূ-গর্ভের বাকি দুই-তৃতীয়াংশই মানুষের কর্মকান্ডের কারণে দ্রুত ফুরিয়ে যাচ্ছে। ভূ-গর্ভের বাকি দুই-তৃতীয়াংশ পানির সঠিক পরিমাণ কত তা স্পষ্টভাবে জানা না থাকায় তা জানা এবং সে পানি কত সময় পর্যন্ত ব্যবহার করা যাবে তা বের করার চেষ্টা করছেন বিজ্ঞানীরা। নাসার মতে, পৃথিবীর ৩৭টি বৃহৎ পানির স্তরের মধ্যে ২১টির পানি ফুরিয়ে যাচ্ছে।
এ স্তরগুলোর অবস্থান ভারত ও চীন থেকে শুরু করে যুক্তরাষ্ট্র ও ফ্রান্সের সীমানার মধ্যে। নাসা ১৩টি পানির স্তরকে আখ্যায়িত করেছে চরম সংকটাপন্ন হিসেবে-যেগুলো প্রায় শুকিয়ে গেছে। এ স্তরগুলো ব্যবহার উপযোগী করা অর্থাৎ প্রাকৃতিক উপায়ে স্তরগুলো পানিতে পরিপূর্ণ করার সম্ভাবনাও ক্ষীণ। পানির স্তর নিচে নামার বিপদ থেকে নদ-নদীর দেশ বাংলাদেশও মুক্ত নয়। রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশেই পানির স্তর দ্রুত নিচে নেমে যাচ্ছে।
পত্র-পত্রিকার খবরে প্রকাশ, পাবনার ঈশ্বরদী ও নাটোরের লালপুরে ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর দিন দিন নিচে নেমে যাচ্ছে। শহরের বেশির ভাগ এলাকার নলকূপে হাজার চাপেও উঠছেনা পানি। অকেজো পড়ে আছে সেগুলো। শহরের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, পুকুরে গোসল সেরে বাড়ির বালতি, কলস ভরে পানি সংগ্রহ করছিলেন বেশ কয়েকজন। খাবার ও রান্নার জন্য প্রয়োজনীয় পানি সংগ্রহ করতে ছুটতে হচ্ছে যেখানে ডিপটিউবওয়েল কিংবা সাব মার্সিবল পাম্প আছে।
খবরে প্রকাশ, দেশের উত্তরাঞ্চলে বরেন্দ্র ভূমির কোনো কোনো এলাকায় ভূ-গর্ভের পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে। অকেজো হয়ে যাচ্ছে হস্তচালিত নলকূপ। সেই সঙ্গে গভীর নলকূপগুলোয় পর্যাপ্ত পানি উঠছে না। ফলে দেখা দিচ্ছে পানি সংকট। রাজধানীর ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর প্রতি বছর ১০ ফুট করে নিচে নেমে যাচ্ছে।
তথ্য মতে, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ও এশীয় ডেভেলপমেন্ট আউটলুক শীর্ষক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশে পানি সংকট ভয়াবহ। একদিকে সুপেয় পানি, অন্যদিকে ভূ-গর্ভস্থ পানির সংকটে পড়েছে বাংলাদেশ। যা আমলে নিয়ে সর্বাত্মক উদ্যোগ নিতে হবে। আমাদের উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষ সুপেয় পানির তীব্র সংকটে পড়েছে। জলবায়ুর প্রভাবে সবখানেই লবণাক্ত পানির আগ্রাসন। উপকূলে মানুষকে অনেক দূরে গিয়ে সুপেয় পানি সংগ্রহ করতে হয়।
আরও পড়ুনহিমালয় থেকে বঙ্গোপসাগরের দিকে প্রবাহিত ছোট বড় শত শত নদীর আশির্বাদে গড়ে ওঠা বঙ্গীয় বদ্বীপ ছিল মিঠাপানির আধার। এখানকার ভূ-গর্ভেও যত সহজে আদর্শ পানির দেখা মিলতো, তা প্রায় নজিরবিহীন। কিন্তু নির্বিচার দূষণ, দখল, ভরাটের কারণে ইতিমধ্যেই নদী-নালা, খাল বিলের উল্লেখযোগ্য অংশ ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। কৃষি সেচ ও নাগরিক ব্যবহারের জন্য মাত্রাতিরিক্ত উত্তোলন ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তরেও সৃষ্টি করেছে বিরূপ প্রতিক্রিয়া। গণমাধ্যমের খবরে বলা হচ্ছে প্রতিবছরই পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে-যেমন নগর ও শহরে, তেমনই দেশব্যাপী বিস্তৃত ফসলের ক্ষেতে। পানি উত্তোলনের ক্ষেত্রে কতটা দূরত্বে গভীর নলকূপ স্থাপন করতে হবে। সে ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট নিয়ম থাকলেও তা মানা হচ্ছে না।
আমরা মনে করি পানি সংকটের এই পরিস্থিতিতে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ও তা বাস্তবায়নের জোর দিতে হবে নীতি নির্ধারকদের। গভীর নলকূপ বসিয়ে সাময়িক সমাধান সম্ভব, ভবিষ্যতের নগরকে পানি-স্বস্তি দিতে হলে ভূ-উপরিস্থ পানি ব্যবহারের বিকল্প নেই। মনে রাখা জরুরি, ভূ-গর্ভস্থ পানি কেবল সীমিত নয়, এর মাত্রাতিরিক্ত উত্তোলন পরিবেশের জন্যও বিপর্যয়কর।
আমরা জানি, দেশের অধিকাংশ শহরই কোনো না কোনো নদীর তীরে অবস্থিত। সবগুলোতে যদি নদীর পানি ব্যবহারের ব্যবস্থা করা যায়, তাহলে সারাদেশেই ভূ-গর্ভস্থ পানির ওপর চাপ কমে আসবে। সে ক্ষেত্রে অভিন্ন নদীগুলোর স্বাভাবিক প্রবাহের বিকল্প নেই। আমরা চাই উদ্যোগ ও উদ্যম। সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি বিভিন্ন পক্ষের জন্যও এটা সত্য। সব পক্ষ আন্তরিক হলে পানি সংকট নিরসন কঠিন হবে না।
মন্তব্য করুন