বাগজানায় কোয়েল পাখি পালন করে মাসে লক্ষাধিক টাকা আয় করেন আবুল বাশার
দুলাল অধিকারী বাগজানা (জয়পুরহাট) থেকে : ইচ্ছা শক্তি আর শ্রম মানুষের ভাগ্য বদলে দিতে পারে। এই আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে নিজের ভাগ্য বদলে ফেলেছেন আবুল বাশার। পাঁচবিবি উপজেলার আয়মারসুলপুর ইউনিয়নের মালিদহ গ্রামের আবুল বাশারের নিজের জায়গা জমি বলতে মাত্র ১৭ শতকের বসত ভিটা রয়েছে।
বাড়িতে গরু ছাগল পালন, এনজিও থেকে ঋণ এবং জমি বর্গা নিয়ে চাষ করে তিন সন্তানের পড়া লেখার খরচ চালিয়ে অতি কষ্টে চলতো তার সংসার। এনজি'র ঋণ, আত্মীয় স্বজনের কাছে থেকে ধার দেনা আর বাড়ির গরু ছাগল বিক্রি করে বড় ছেলে সাইফুলকে সৌদি আরবে পাঠান। সাইফুল সৌদি আরবের রেস্টুরেন্টে কোয়েল পাখির রোস্টের চাহিদা দেখে বাড়িতে কোয়েল পাখি পালনের পরামর্শ দেন বাবাকে।
ছেলের পরামর্শে আবুল বাশার প্রথমে ৫ হাজার কোয়েল পাখির বাচ্চা দিয়ে শুরু করেন খামার। সৌদি থেকে সাইফুলের দিক নির্দেশনা আর ছোট ছেলে স্কুল পড়ুয়া আবু হাসানের কঠোর পরিশ্রমে লালন পালন করতে থাকেন কোয়েল পাখি। এরপর আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি আবুল বাশারকে। তাদের কোয়েল পাখির খামার থেকে এখন প্রতি মাসে আয় লক্ষাধিক টাকা।
আবুল বাশারের ছোট ছেলে আবু হাসান জানায়, সৌদি আরব থেকে বড় ভাই সাইফুলের দিক নির্দশনায় পড়াশুনার পাশাপাশি কোয়েল পাখির খামার দেখাশুনা করি। ৫ হাজার কোয়েল পাখির পিছনে প্রতিদিন তিন হাজার টাকা করে খরচ হয়।
খামারে নেয়া বাচ্চা পাখির বয়স ৪৫ দিন পর থেকে প্রতিটি স্ত্রী পাখি ডিম দিতে শুরু করে। কোন কোন পাখি দিনে দুটি করেও ডিম দেয়। প্রতিদিন খামার থেকে গড়ে ১৫শ’ থেকে দুই হাজার ডিম সংগ্রহ করা হয়। প্রতি পিচ ডিম আড়াই টাকা থেকে তিন টাকা পিচ হিসাবে ৪ হাজার থেকে ৬ হাজার টাকা পাইকারি বিক্রি হয়।
আরও পড়ুনপ্রথম ৪৫ দিন পালনের জন্য গচ্ছিত টাকা খরচ করা হলেও পরবর্তীতে ডিম বিক্রির টাকা দিয়েই খাবার সরবরাহ করা হয়। প্রতিটি স্ত্রী পাখি ১৪ মাস বয়স পর্যন্ত ডিম দেয়। ১৪ মাস পর ৫৫/৬০ টাকা দরে প্রতিটি কোয়েল পাখি পাইকারি বিক্রি করা হয়। ডিম ও কোয়েল পাখি বিক্রি করে খরচ বাদে মাসে প্রায় লক্ষাধিক টাকা আয় হয় বলে আবুল বাশার জানান।
তিনি বলেন, আরও বেশি উদ্যোক্তা তৈরির জন্য নিজস্ব হ্যাচারী থেকে বাচ্চা উৎপাদন করে খামারিদের বাচ্চা সরবরাহের লক্ষ্যে মেশিন কেনার ব্যবস্থা করেছেন। এতে তার আয় আরও বাড়বে। ২০২৫ সাল থেকে এর কার্যক্রম শুরু করবেন বলে জানান। উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা হাসান আলী বলেন, “কোয়েল পাখিগুলি ছোট হওয়ার কারণে কম জায়গায় অনেক পাখি পালন করা যায়।
আবার খাবার ওষুধ খরচও কম। সে কারণে কোয়েল পাখির খামার একটি লাভজনক ব্যবসা। অন্যান্য পশু পালনে রোগ বালাইয়ের ঝুঁকির সম্ভাবনা বেশি থাকলেও কোয়েলের ক্ষেত্রে তা একেবারে কম। শুধু মাত্র রাণীক্ষেত ভ্যাকসিন সময়মত দিতে পারলে ওই পাখির আর কোন সমস্যা দেখা দেয় না। উপজেলা প্রাণি সম্পদ অধিদপ্তর থেকে উদ্যোক্তা তৈরিতে খামারীদের সব ধরনের সযোগিতা করা হয় বলে তিনি জানান।
মন্তব্য করুন