সংকট না থাকলেও সিন্ডিকেটের থাবায় অস্থির বগুড়ার বীজআলুর বাজার
শাওন রহমান : বগুড়ায় সংকট না থাকলেও মৌসুমের শুরেু থেকেই বীজআলুর কৃত্রিম সংকট তৈরি করেছেন অসাধু ব্যবসায়ীরা। এভাবে কারসাজির মাধ্যমে কৃষকদের কাছ থেকে তারা টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন।
কৃষকদের অভিযোগ, পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকলেও বেশিরভাগ ব্যবসায়ী ও ডিলার তাদের দোকান ও গুদামে বীজআলু রাখছেন না। নির্ধারিত দামের চেয়ে টাকা বেশি দিলেই অজ্ঞাত স্থান থেকে তাদের কাছে বীজআলু পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে।
বগুড়া জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, বগুড়ায় সাড়ে ৫৫ হাজার হেক্টর জমিতে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর জন্য প্রায় ৯০ হাজার মেট্রিকটন বীজআলুর প্রয়োজন। এরমধ্যে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) ৭-৮ শতাংশ, বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ২০-২৫ শতাংশ এবং প্রয়োজনীয় বীজ কৃষক ব্যক্তিগত উদ্যোগে সংরক্ষণ করেন।
বগুড়ার বিভিন্ন এলাকার কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বগুড়ার স্থানীয় হাট-বাজার, ডিলার পর্যায়ে এবং হিমাগারগুলোতে আলুবীজ মানভেদে ৮০-১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আর ব্র্যাক সিড এ গ্রেডের বীজ ৮০ এবং বি গ্রেডের বীজ ৭৮ টাকা কেজিতে বিক্রি করলেও সিন্ডিকেট ব্যবসায়ী তা ১২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন মানের বীজআলু হিমাগারগুলোতে ৮৫-৯০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
আর বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) তাদের বিভিন্ন জাতের ও মানের বীজআলু বিক্রি করছে ৫৫ থেকে ৬৮ টাকা কেজি। তবে চাইলেও সেই বীজআলু সহজে মিলছে না। নির্ধারিত দামের চেয়ে টাকা বেশি দিলেই অজ্ঞাত স্থান থেকে মিলছে বীজআলু, এমন অভিযোগ কৃষকদের।
ডিলাররা বলছেন, আলু চাষ মৌসুম শুরুতে সবাই একসঙ্গে বীজ কেনায় চাহিদা বেড়ে গেছে। কিন্তু সে তুলনায় এবার সরবরাহ কম। এছাড়া যেসব কৃষক আগাম বুকিং দিয়েছেন তারাই আগে বীজ পাচ্ছেন। তাছাড়া বিগত বছরগুলোতে লাভ বেশি হওয়ায় কৃষকরা আরও বেশি পরিমাণ জমিতে আলু চাষ করার কারণে বেশি বীজ প্রয়োজন হওয়ায় অসাধু সিন্ডিকেট চক্র ফায়দা লুটছে।
বগুড়া জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র বলছে, বগুড়া গত বছর ৫৫ হাজার ২৬০ হেক্টর জমিতে ১১ লাখ ৯৩ হাজার ১১৬ মেট্রিকটন আলু উৎপাদন হয়। আর চলতি মৌসুমে সাড়ে ৫৫ হাজার হেক্টর জমিতে আলু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১১ লাখ ৯৯ হাজার ৯১০ মেট্রিকটন। বগুড়ায় এস্টরিক, গ্রানুলা, ডায়মন্ড, কার্ডিনাল ও রোমানা জাতের আলু বেশি চাষ হয়ে থাকে।
জানতে চাইলে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বগুড়ার উপ-পরিচালক মতলুবর রহমান বলেন, বগুড়ায় বীজআলুর কোন সংকট নেই। বগুড়ার হিমাগার, বিভিন্ন বেসরকারি কোম্পানিসহ কৃষক পর্যায়ে পর্যাপ্ত বীজআলু রয়েছে।
আরও পড়ুনদামে বেশির ব্যাপারে জানতে চাইলে এই কর্মকর্তা বলেন, বগুড়ায় ব্যাপক পরিমাণ জমিতে আলু চাষ হয়, আর মৌসুমের শুরুর দিকে বাড়তি চাহিদাকে পুঁজি করে একটি অসাধু সিন্ডিকেট কৃত্রিম সংকট তৈরি করে কৃষকদের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেয়। তিনি বলেন, এই অসাধু সিন্ডিকেট বন্ধ করতে সরকারের বিভিন্ন সংস্থাসহ তারা বাজার মনিটরিং করছেন।
এদিকে আমাদের শেরপুর (বগুড়া) সংবাদদাতা জানাচ্ছেন : বগুড়ার শেরপুরে সিন্ডিকেটের কব্জায় চলে গেছে আলুর বীজ। ফলে স্থানীয় বাজারে আলু বীজের কৃত্রিম সংকট তৈরি করে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেয়ার পাঁয়তারা চলছে। ডিলার ও ব্যবসায়ীদের কাছে বার বার ধর্ণা দিয়েও বীজ মিলছে না বলে কৃষকরা অভিযোগ করছেন। তারা জমি তৈরির আগেই বীজের সংকট নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন। কৃষকের চাহিদা অনুযায়ী মানসম্মত বীজ মিলবে কিনা তা নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। এ অবস্থায় আলু চাষ ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয় কৃষকরা।
এদিকে কৃষকদের জিম্মি করে অসাধু ব্যবসায়ী ও ডিলারদের সমন্বয়ে গড়ে ওঠা ওই সিন্ডিকেট ইচ্ছেমতো দামে আলু বীজ বিক্রি করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার মিশনে মাঠে নেমেছেন। এরই ধারাবাহিকতায় নির্ধারিত দামের চেয়ে প্রতি বস্তা বীজ আলু ৫শ’ থেকে এক হাজার টাকা বেশি নিয়ে অগ্রিম বিক্রি করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
ব্র্যাক সিড এন্ড এগ্রো’র টিএসও শফিকুল ইসলাম করতোয়া’কে জানান, গত বছরের তুলনায় দেড়শ’ মেট্রিক টন বীজ কম এসেছে এই অঞ্চলে। খুচরা বাজারে আলুর দাম বেশি থাকায় কৃষকরা এবার বেশি জমিতে আলু চাষ করবেন, ফলে বীজের চাহিদা বেড়েছে। তবে কোন অবস্থাতেই কোম্পানি নির্ধারিত দামের চাইতে বেশি দামে বিক্রি করা যাবে না।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোছা. ফারজানা আকতার করতোয়া’কে বলেন, ডিলাররা নির্ধারিত দামের বাইরে বেশি দামে বীজ বিক্রি করতে পারবেন না। এরপরও যারা সেটি করলে-তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। এছাড়া ব্রাক, এসিআইসহ বেসরকারি বীজ কোম্পানির কত টন বীজ শেরপুরে বরাদ্দ তা আমার জানা নেই। আমরা তাদের লোকজনকে ডেকে নির্ধারিত দামে যেন বিক্রি হয় সে ব্যবস্থা নেব।
মন্তব্য করুন