বগুড়াসহ উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় মাছের মেলাসহ বিভিন্ন আয়োজনে হলো নবান্ন উৎসব
করতোয়া ডেস্ক : বগুড়াসহ উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় নবান্ন উপলক্ষ্যে মাছের মেলাসহ বিভিন্ন উৎসব পালন করা হয়েছে। বাঙালীদের জীবন যাত্রায় নবান্ন উৎসব হলো অন্যতম উৎসব। উৎসব প্রিয় বাঙালীরা ফুরসৎ পেলেই উৎসবে মেতে ওঠেন। আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো নবান্ন উৎসবের সংবাদ নিয়ে এই প্রতিবেদন।
কালাই (জয়পুরহাট) : অগ্রাহয়ণ মাসের দ্বিতীয় দিনে জয়পুরহাটের কালাইয়ের নতুন ধান ঘরে ওঠার আনন্দে মেয়ে-জামাই, বিয়াই-বিয়ানসহ নিকট আত্মীয়দের নিয়ে নবান্ন উৎসবে মেতে ওঠেন কৃষক। পিঠা-পায়েসসহ নানা আয়োজনে স্বজনদের নিয়ে পালন করেন নবান্ন উৎসব। জামাইদের উদ্দেশ্যে বসে কালাই পৌরশহরের পাঁচশিরা বাজারে এক দিনের মাছের মেলা।
এই দিনকে ঘিরে পৌরশহরের পাঁচশিরা বাজারে ভোর ৪টা থেকে দিনব্যাপী চলে ছোট-বড় বিভিন্ন প্রজাতির মাছ কেনা-বেচার উৎসব। অগ্রাহায়ণ মাসের দ্বিতীয় দিনে জেলার পাঁচশিরা বাজারেই বসে সবচেয়ে বড় মাছের মেলা।
রোববার ভোররাত থেকেই মেলা জুড়ে ছিল ক্রেতা-বিক্রেতা আর কৌতুহলী মানুষের ঢল। এইদিনে প্রতিযোগিতা করে মেলা থেকে জামাইরা মাছ কিনে শ্বশুর বাড়িতে নিয়ে যান। এবার মেলায় সর্বোচ্চ ২৯ কেজি ওজনের কাতল মাছ বিক্রি হয়েছে ৩২ হাজার টাকায় এবং ১৯ কেজি ওজনের সিলভারকাপ মাছ বিক্রি হয়েছে ১৪ হাজার টাকায়। মেলার আয়োজন করেন স্থানীয় মাছ ব্যবসায়ীরা। জানা যায়, পঞ্জিকা অনুসারে অগ্রহায়ণ মাসের দ্বিতীয় দিনে এ মেলা বসে।
শিবগঞ্জ (বগুড়া) : নবান্ন উপলক্ষে আজ রোববার (১৭ নভেম্বর) বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার উথলীহাটে এবারও বসেছে বিশাল মেলা। মেলাটি মূলত: মাছের মেলা। বিভিন্ন আকারের ও প্রকারের মাছের সমাহার। তবে মেলায় মিষ্টির দোকান, খেলনার দোকান, শীতের সবজির বাজার ইত্যাদিরও কমতি ছিল না। শিশুদের বিনোদনের জন্য ছিল নাগরদোলাসহ বিভিন্ন ধরনের মাটির তৈরি খেলনা সামগ্রী।
নবান্ন উপলক্ষ্যে প্রতিবছরের মত তিনশ’ বছরের ঐতিহ্যবাহি মাছের মেলা হয় এই উথলীতে। বড় বড়, হরেক রকমের মাছের পসরা সাজিয়ে দোকানিরা বসে এই মাছের মেলায়। পাশাপাশি নতুন সবজি, মিষ্টি, মাংস, মাটির তৈরি তৈজসপত্র, দই, চিড়া কেনাবেচা হয় এ মেলায়।
এ মেলা এলাকায় জামাই মেলা নামেও পরিচিত। উথলী মাছের মেলাকে কেন্দ্র করে আশেপাশের ২২ গ্রামে স্বজনদের মিলনমেলায় পরিণত হয়। গ্রামের প্রতিটি বাড়িতেই মেয়ে-জামাইসহ আত্মীয়-স্বজনদের আগেই নিমন্ত্রণ করা হয়। মেলায় নতুন আলু বিক্রি হয়েছে ৩০০ টাকা কেজি দরে।
শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) তাহমিনা আক্তার বলেন, নবান্নের মেলা এই এলাকার একটি বিশেষ ঐতিহ্য। গ্রামে গ্রামে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। মেলায় কোনো প্রকার বিশৃঙ্খলা যেন না হয় সে জন্য প্রশাসনের তরফ থেকে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
আরও পড়ুননন্দীগ্রাম (বগুড়া) : বগুড়ার নন্দীগ্রামে নবান্ন উৎসবকে ঘিরে প্রত্যন্ত গ্রামে চলছে জামাই আপ্যায়ন। প্রতিটি বাড়িতেই দিনভর চলে নতুন চালের ভাত আর বড় মাছের রান্না। নবান্নের দাওয়াতে একদিন আগেই স্বামীর সঙ্গে বাবা-মায়ের কাছে ফিরেছেন মেয়ে। মেলা থেকে বড় মাছ, নতুন আলু, সবজি ও দই-মিষ্টি কিনে জামাই যাচ্ছেন শ্বশুরবাড়ি।
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের উৎসব ঘিরে মুসলিম পরিবারেও চলে জামাই আদর। এ বছর পৌর এলাকার ওমরপুর, উপজেলার রণবাঘা, কড়ইহাট, নাগরকান্দি ও ধুন্দার বাজারে বসে মাছের মেলা। সারি সারি দোকানের সামনে মানুষের ভিড় থাকলেও দামে অসন্তুষ্টির কথা জানিয়েছেন ক্রেতারা। নিম্ন আয়ের মানুষেরা ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে মাছ কিনেছেন।
আজ রোববার (১৭ নভেম্বর) ওমরপুর বাজারের মেলায় ৪৫ কেজি ওজনের বাঘাইড় মাছ এক হাজার ৩৫০ টাকা কেজি দাম হাঁকানো হয়। সেখানে অন্তত ২০টি দোকান বসে। মাছের দোকানের পাশে শীতকালীন হরেক রকমের সবজি ও দই-মিষ্টির দোকানও বসে।
গোবিন্দগঞ্জ (গাইবান্ধা): গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে দিনভর অনুষ্ঠিত হলো শত বছরের ঐতিহ্যবাহী নবান্ন মেলা। আজ রোববার (১৭ নভেম্বর) ভোরে শুরু এই মেলা চলে সন্ধ্যা পর্যন্ত। প্রতিবছরের ন্যায় পৌর এলাকার পুরাতন বন্দরে স্কুল মাঠে এই মেলা অনুষ্ঠিত হয়।
এলাকাবাসী জানান, হিন্দু সম্প্রদায়ের নবান্নকে কেন্দ্রে করে প্রতি বছর অগ্রহায়ণ মাসের প্রথম দিন এই মেলা বসে। মেলায় নতুন নতুর সবজি, বাহারী মিষ্টি, জিলাপী, গাইবান্ধার রসমুঞ্জরী, পানতোয়াসহ নানা ধরণের মিষ্টি, ছোটদের খেলনা, মাটির তৈরি তৈজষপত্র, পুতুল হাড়ি-পাতিল, অর্থ সঞ্চয়ের ব্যাংক, কাঠের সামগ্রী এই পাওয়া যায়। মেলাকে কেন্দ্র করে দূরদূরান্তের ব্যবসায়ী প্রতিবছর এই দিনটির জন্য অপেক্ষা করে থাকে। আর মেলার ক্রেতার গোবিন্দগঞ্জ ও পার্শ্ববর্তী এলাকার হিন্দু সম্প্রসাদায় ছাড়াও অন্যান্য সম্প্রদায়ের মানুষ। মেলায় এবার ১৫ কেজির কাতল মাছ সকলের নজর কাড়ে।
আদমদীঘি (বগুড়া) : নবান্ন উৎসবে উপলক্ষে আয়োজিত ক্রীড়া প্রতিযোগিতার বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করা হয়েছে। গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় আদমদীঘি উপজেলার সালগ্রামনবীন ক্লাব ও সেচ্ছাসেবী সংগঠন আয়োজিত সালগ্রাম ইবতেদায়ী মাদ্রাসা মাঠে এই পুরস্কার বিতরণী সভায় সভাপতিত্বে করেন প্রভাষক আবু মোতালেব।
প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন ও পুরস্কার বিতরণ করেন উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল মহিত তালুকদার। ওয়ালিউল ইসলাম মিলনের সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল মোত্তাকিন তালুকদার, মোমেনুর রহমান তালুকদার মিম, নজরুল ইসলাম, রহমতুল্ল্যা, সাবেক ইউপি সদস্য আবুল কালাম আজাদ প্রমুখ।
মন্তব্য করুন