প্রাকৃতিক দুর্যোগ কাটিয়ে শিম চাষে ঘুরে দাঁড়ানো চেষ্টায় পাবনার কৃষক
পাবনা প্রতিনিধি : সারাদেশে সবজির চাহিদার একটি বড় অংশ পূরণ হয় পাবনার ঈশ্বরদী ও আটঘরিয়া উপজেলায় উৎপাদিত সবজি দিয়ে। এখানকার মাটি অত্যন্ত ভালো ও কৃষকদের পরিশ্রমে সবজি প্রধান এলাকা হিসেবে পরিচিত এই উপজেলা।
তবে এবার অতিবৃষ্টিসহ নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে তাদের সবজির ক্ষেত বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বিশেষ করে আগাম জাতের সবজি চাষ করে বেশি ক্ষতির মুখে পড়েন কৃষক। তবে সেই ক্ষতি কাটিয়ে শিমের ফলন ভালো হওয়ায় ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখছেন কৃষকরা।
কৃষকদের সাথে আলাপ করে জানা যায়, অসময়ে এবছর দফায় দফায় বৃষ্টি, অতিবৃষ্টি ও প্রাকৃতিক দুর্যোগে শিম, গাজর, মুলা, বেগুন, পেঁয়াজ, শালগম, টমেটো, ফুলকপি, ওলকপি, বাঁধাকপি, আলুসহ সব ধরনের শীতকালীন সবজির আবাদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা যায়, ঈশ্বরদীতে গত সেপ্টেম্বর মাসে ৪৯২ দশমিক ৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। সবজির ফুল থেকে সবজি হওয়ার শুরুর সময় প্রায় ৩শ’ হেক্টরের শিমসহ ৬শ’-৭শ’ হেক্টর জমির সবজি নষ্ট হয়েছে।
কৃষকরা বলছেন, ঈশ্বরদীর বিভিন্ন গ্রামে উৎপাদিত সবজি সারাবছর ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের চাহিদা মিটিয়ে থাকে। অথচ এখানেই সবজির সংকট দেখা দিয়েছে। এবার একবারের জায়গায় তিনবার চাষ করার পর শেষ মুহূর্তে কৃষকরা ঘুরে দাঁড়িয়েছেন। শিমের রঙিন ফুলে ভরে উঠেছে মাঠের পর মাঠ। এখন প্রতিদিন ঈশ্বরদীতে বিক্রি হচ্ছে প্রায় ৪ কোটি টাকার শিম।
ঈশ্বরদী উপজেলার মুলাডুলি, আওতাপাড়া, আটঘরিয়া উপজেলার চাঁদভা, খিদিরপুর, হাপানিয়াসহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকার মাঠের যেদিকে তাকানো যায়, শুধু শিম আর শিম। সপ্তাহখানেক হলো আগাম জাতের ‘অটো শিম’ বাজারে উঠেছে। এখন দাম বেশি পাওয়ায় কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে। ক্রেতা-বিক্রেতাদের পদভারে মুখর হয়ে উঠেছে মুলাডুলির সবজি আড়ত। প্রতিদিন এখানে ৩ থেকে ৪ কোটি টাকার শিম বেচাকেনা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ী ও আড়তদাররা।
আরও পড়ুনতারা বলছেন, প্রতিদিন মুলাডুলির আড়ত থেকে ৪৫ থেকে ৫০ ট্রাক শিম যাচ্ছে ঢাকার বাজারে। এছাড়া চট্টগ্রাম, সিলেট, নারায়ণগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে শিম পাঠানো হচ্ছে। প্রতি কেজি শিম বিক্রি হচ্ছে ৯০ থেকে ১শ’ টাকা কেজি দরে।
মুলাডুলি সবজি আড়তদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক বলেন, গত ২০ বছর ধরে আড়তে শিমের কেনা-বেচা চলে উৎসবের আবহে। প্রতিদিন ঢাকা, বগুড়া, রাজশাহী, কুষ্টিয়া, সিরাজগঞ্জ, নাটোরসহ বিভিন্ন জেলা থেকে পাইকার ব্যবসায়ীরা আসেন এখানে সবজি কিনতে। তারা ট্রাকে করে সবজি নিয়ে যান।
ঈশ্বরদী উপজেলা কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, ঈশ্বরদীতে এবার ৬ হাজার ৮২ হেক্টর জমিতে শীতকালীন সবজি চাষ হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ লাখ ৫৮ হাজার ৩১৪ টন। তবে অতিবৃষ্টির কারণে এ লক্ষ্যমাত্রা পূরণের শঙ্কা রয়েছে।
ঈশ্বরদী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মিতা সরকার বলেন, এ বছর ঈশ্বরদীতে ১ হাজার ২৯০ হেক্টর জমিতে শিমের আবাদ হয়েছে। শিম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩০ হাজার ৫শ’ টন। অতিবৃষ্টিতে কিছুটা ক্ষতি হলেও বর্তমানে ভাল ফলন হচ্ছে। এতে কৃষকরা তাদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবেন বলে আশা করছি।
মন্তব্য করুন