ট্রেনে কাটা পড়ে মৃত্যু
একের পর এক দুর্ঘটনা ঘটছে। যেমন রোধ করা যাচ্ছে না সড়ক দুর্ঘটনা। তেমনি রেলপথেও থেমে নেই দুর্ঘটনা এবং দুর্ঘটনায় মৃত্যু। প্রতিদিনই ট্রেনে কাটা পড়ে মানুষ মারা যাচ্ছে। প্রধানত অসতর্কতা ও বেপরোয়াভাবে রেললাইন পারাপারের কারণে বেশির ভাগ মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে বলে জানিয়েছে রেল সংশ্লিষ্টরা। রেললাইন পারাপারের সময় অসচেতনতা ও হুড়াহুড়ির কারণে ট্রেনে কাটা পড়ে মূল্যবান প্রাণ হারাচ্ছে মানুষ। অনেকেই আবার কানে ইয়ার ফোন লাগিয়ে মোবাইলে কথা বলা অবস্থায় বা রেললাইনে বসে আড্ডা দিতে গিয়েও ট্রেনে কাটা পড়ছে। পত্র-পত্রিকার খবরে প্রকাশ লালমনিরহাটে এমনি এক মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে।
লালমনিরহাটের পাটগ্রামে ট্রেনে কাটা পড়ে চারজনের মৃত্যু হয়েছে। গত সোমবার উপজেলার আলাউদ্দিন নগর এলাকার রেলপথে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতরা সবাই রেল লাইনের ওপর বসে গল্প করছিলেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। ট্রেনে কাটা পড়ে নিহতরা হলেন উপজেলার জোংড়া ইউনিয়নের ইসলাম নগর গ্রামের আজিজার রহমান (৬৫), মোবারক হোসেন (৫৫), মকবুল হোসেন (৪৫) ও একই ইউনিয়নের মমিনপুর গ্রামের আব্দুল ওহাব (৪২)। পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, গত সোমবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে পাটগ্রাম উপজেলার আলাউদ্দিন নগরে রেললাইনের ওপর বসে গল্প করছিলেন এই চার শ্রমিক। এ সময় বুড়িমারি থেকে সান্তাহারগামী করতোয়া এক্সপ্রেস ট্রেনটি তাদের ওপর দিয়ে চলে গেলে চারজনই ঘটনাস্থলে নিহত হন। তারা সবাই দিনমজুর ছিলেন। মাঠে কাজ শেষে তারা রেললাইনের ওপর বসে গল্প করছিলেন।
উল্লেখ্য, সারা দেশে রেললাইনে ২৫টি দুর্ঘটনাপ্রবণ জায়গা রয়েছে। এর মধ্যে রাজধানীর ভেতরে ৩টি এবং বাইরে ২২টি। প্রতি বছর সারা দেশে কাটা পড়ে ও দুর্ঘটনা ৯১৪ জনেরও বেশি মানুষের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। এসব দুর্ঘটনায় সব সময়ই অপমৃত্যুর মামলা করা হয়। বেশির ভাগ দুর্ঘটনা ঘটছে অসতর্কতায় রেললাইন পার হতে গিয়ে বা রেললাইনের ওপর বসে গল্প গুজব করার সময়। এ সময় অনেকে কানে ইয়ার ফোন লাগিয়ে আড্ডায় মগ্ন থাকে। ফলে ট্রেনের আগমন টের পায় না।
এ ছাড়াও সারাদেশে রেলওয়ের ঝুঁকিপূর্ণ লেভেলক্রসিং এর কারণে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে এবং অনেকেরই অকালে প্রাণ যাচ্ছে। সারা দেশে রেলওয়ের লেভেল ক্রসিংয়ের সংখ্যা ২ হাজার ৫৪১টি। এর মধ্যে অনুমোদিত মাত্র ৭৮০টি। বাকি এক হাজার ৭৬১টি অনুমোদনহীন। সব মিলিয়ে দুই হাজারের বেশি ঝুঁকিপূর্ণ ক্রসিং এখন মৃত্যুর ফাঁস হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই তথ্য নি:সন্দেহে উদ্বেগজনক।
আরও পড়ুনআমরা বলতে চাই যখন একের পর এক দুর্ঘটনা ঘটতে থাকে, তখন তা নিশ্চিতভাবেই ভীতিপ্রদ বাস্তবতাকে স্পষ্ট করে। আর শুধু এই ঘটনাটি নয়- এর আগেও বিভিন্ন সময়ে রেল দুর্ঘটনা ঘটেছে। সেটাও হয় গেটম্যান না থাকা, অসচেতনতা, নানা ধরনের অনিয়ম সহ বিভিন্ন কারণে দুর্ঘটনা ঘটেছে। এ ছাড়া ট্রেনে কাটা পড়ে মৃত্যু সহ নানাভাবেই দুর্ঘটনা ঘটেছে। ফলে রেল সংক্রান্ত দুর্ঘটনায় মৃত্যুর মতো বিভীষিকা নেমে আসছে একের পর এক - এই পরিস্থিতি এড়ানোর সুযোগ নেই। এ ক্ষেত্রে নিয়ম নীতি মেনে চলা, সচেতনতা বৃদ্ধিসহ প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণের বিকল্প নেই। মনে রাখতে হবে, শুধু যোগাযোগের উন্নয়ন ও সেবা নিশ্চিত করলেই হবেনা, যাতায়াতের সার্বিক নিরাপত্তাও নিশ্চিত করা জরুরি।
লেভেলক্রসিংগুলো যেখানে থাকার দরকার সেখানে নেই। যত্রতত্র ক্রসিং থাকা এবং মানুষের অসচেতনতার কারণে দুর্ঘটনা ঘটছে। সবচেয়ে বড় বিষয়, সংশ্লিষ্ট দফতরগুলো বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে পরামর্শ নিতে চায় না। দুর্ঘটনা কমাতে চাইলে অবৈধ ক্রসিং বন্ধ করে অনুমোদিত ক্রসিংয়ে গেটকিপার দিয়ে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। মূলত যানবাহন চালকদের উদাসীনতা ও জনগণের সিগন্যাল অমান্য করে রেললাইন পার হওয়ার কারণেই মূলত দুর্ঘটনাগুলো ঘটে থাকে।
যানবাহন চালকদের উদাসীনতা ও জনগণের সিনগ্যাল অমান্য করে রেললাইন পার হওয়ার কারণেই দুর্ঘটনা ঘটছে। ট্রেন যাওয়ার সময় যখন গেটবার ফেলা হয় তখন দেখা যায় অনেক যানবাহন চালক নিষেধ অমান্য করে রেললাইন অতিক্রম করছে। সাধারণ মানুষের অসচেতনতা লেভেলক্রসিং গুলোতে মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। এ ব্যাপারে সরকারের আরো কঠোর নজরদারি প্রয়োজন।
মন্তব্য করুন