পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় গাছে গাছে মাটির হাঁড়ি ঝুলিয়ে দিয়েছে স্বেচ্ছাসেবীরা
হাফিজা বিনা : ঝড়-বৃষ্টি ও শীত থেকে সুরক্ষার পাশাপাশি পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা ও প্রজননে সহায়ক ভূমিকা পালন করার জন্য বগুড়া শহরের মফিজপাগলার মোড়ে সড়ক বিভাজনের গাছে গাছে মাটির হাঁড়ি স্থাপন করেছে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন।
আজ শুক্রবার (২২ নভেম্বর) দুপুরে খিদমা এসোসিয়েশন নামের এক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের উদ্যোগে পাখিদের জন্য এই নিরাপদ আশ্রয় তৈরি করে দেন সংগঠনের কর্মীরা। জীববৈচিত্র্য ভালো থাকলে পরিবেশ ভালো থাকবে, ভালো থাকবে পরিবেশে বসবাস করা মানুষেরাও এই বিষয়টি মাথায় রেখে এই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে জানান ওই সংগঠনের সদস্য ডা: মো: রুশোয়াত বিন ফেরদৌস আলভী।
গাছের ডালে বাঁধা হচ্ছে ছোট ছোট মাটির হাঁড়ি। বৃষ্টি এবং ঝড়ের সময় যেন হাড়িগুলো ছিড়ে না পড়ে এবং তাতে পানি না ঢোকে সে জন্য প্রত্যেকটি হাঁড়ি ফুটো করে দেয়া হয়েছে। আর গাছে হাঁড়ি বাঁধার এমন আয়োজন করা হচ্ছে পাখিদের জন্য।
গাছে পাখিদের অবাধ বিচরণ, নিরাপদ আশ্রয় তৈরি ও তাদের বংশবৃদ্ধির জন্য প্রথম অবস্থায় তারা এখানে ৩০টি হাঁড়ি ঝুলিয়ে দেয়। পর্যায়ক্রমে মাটিডালি থেকে বনানী পর্যন্ত ৩০০ হাঁড়ি লাগাবেন বলে জানান স্বেচ্ছাসেবীরা।
ডা: মো রুশোয়াত বিন ফেরদৌস আলভী এ ব্যাপারে বলেন, জীববৈচিত্র্য রক্ষার দায়িত্ব সবার। আমাদের এখানে নগরায়নের ফলে বড় বড় বিল্ডিং উঠছে। আর এসব করতে যেয়ে পাখিদের নিরাপদ আশ্রয়স্থল গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। দিনভর শহরের পাখিগুলোতে বিদ্যুতের তারের ওপরে, বড় বড় বিল্ডিংয়ের কানির্শের ওপর বসতে দেখা যায়।
তারা ঠিকমত কোথাও বসতে এবং তাদের বংশ বিস্তার করতে পারে না। তিনি জানান, জীববৈচিত্র্য ভালো থাকলে পরিবেশ ভালো থাকবে, আমরাও ভালো থাকব। হাঁড়িগুলো বসানোর মাধ্যমে দেশীয় পাখিরা নিরাপদ আবাসস্থল পাবে। সড়কের মাঝের গাছগুলো পাখিদের নিরাপদ আশ্রয় হয়ে উঠুক, সে প্রত্যাশা থেকেই এই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
আরও পড়ুনগাছে উঠে ডালে ডালে হাড়িগুলো ঝুলিয়ে দিচ্ছিলেন বিট পলিটেকনিক এর শিক্ষার্থী ফয়সাল । হঠাৎ করে শহরের মধ্যে এই উদ্যোগ কেন জানতে চাইলে তিনি জানান, সম্প্রতি দেশে ভয়াবহ বন্যার সময় রাস্তায় চলাচলকারী মানুষের কাছে ত্রানের টাকা তোলার সময় খেয়াল করি সড়ক বিভাজনের বকুল গাছসহ অন্যান্য গাছগুলোতে হাজার হাজার পাখি থাকে। কিন্ত তারা নিরাপত্তার জন্য বসে আবার তাৎক্ষণিক ঝাঁক ধরে উড়ে যায়।
তখন সংগঠনের সবার সাথে আলাপ-আলোচনা করে এই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। প্রাথমিক অবস্থায় ৩০০ হাঁড়ি লাগানো হবে। পর্যায়ক্রমে তা বাড়ানো হবে। পাখিদের জন্য স্থাপন করা এই মাটির হাঁড়ি ঝড়-বৃষ্টি ও শীত থেকে সুরক্ষার পাশাপাশি পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা ও প্রজননে সহায়ক ভ’মিকা পালন করবে। সংগঠনের সদস্যরা জানান, মানুষসহ প্রতিটি জীবকে সহযোগিতা করা একজন মানুষের সবচেয়ে বড় কাজ। অনেক আগে থেকেই তিনি এই কাজগুলো করে থাকেন।
এরই মধ্যে সম্প্রতি দেশের ফেনী ও নোয়াখালীতে ভয়াবহ বন্যায় যখন সবাই সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন তখন তিনিসহ ডা: সাঈদ সুলতান, ডা: আমিনুর রহমান হিরা ও ডা: আসিফ রব্বানীসহ আরও কয়েকজন স্বেচ্ছাসেবী মিলে মেডিকেল টিম নিয়ে তাদের সহযোগিতা করেছেন।
তাদের এই সংগঠনের মাধ্যমে প্রতিদিন রাতে বগুড়া রেলওয়ে স্টেশনে ৩০ জন অসহায় দরিদ্র মানুষের মাঝে প্যাকেট খাবার বিতরণ করেন। এছাড়াও প্রতি শুক্রবার মফিজপাগলার মোড়ের মসজিদসহ আরও একটি মসজিদে ৩০ প্যাকেট করে খাবার বিতরণ করেন। তাদের এই সংগঠনে ডাক্তার, শিক্ষার্থী, সাধারণ মানুষসহ বিভিন্ন পেশাজীবী নিয়ে ১০০ জন স্বেচ্ছাসেবী কাজ করেন।
মন্তব্য করুন