কাজ ফেলে ঠিকাদার চলে গেছে
মেয়াদ শেষের এক বছর পরও পার্কে স্বাধীনতা স্তম্ভ নির্মাণ শেষ হয়নি
স্টাফ রিপোর্টার : নির্ধারিত সময়ের এক বছর পরও বগুড়া পৌরসভার এ্যাডওয়ার্ড পার্কে স্বাধীনতা স্তম্ভ নির্মাণের কাজ শেষ করতে পারেনি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। অন্যদিকে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান বলছে, পৌরসভার এক কাউন্সিলর ওই কাজ তার কাছ থেকে কিনে নিয়ে কাজ না করে ফেলে রেখে চলে যাওয়ায় কাজটি শেষ হয়নি।
বগুড়া পৌরসভার পক্ষ থেকে পৌর এ্যাডওয়ার্ড পার্কে স্বাধীনতা স্তম্ভ নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের প্রতীক হিসেবে পার্কে এটি করার সিদ্ধান্ত হয়। পার্কে বেড়াতে আসা হাজার হাজার মানুষ ওই স্তম্ভ দেখে বগুড়ার মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা সংগ্রাম সম্পর্কে জানতে পারে এমন চিন্তা ভাবনা থেকে স্তম্ভ করা হচ্ছে।
এরই অংশ হিসেবে তৎকালীন মেয়র রেজাউল করিম বাদশা স্বাধীনতা স্তম্ভ (চত্বর) করার সিদ্ধান্ত নিয়ে একটি নকশা অনুমোদন করেন। মহান মুক্তিযুদ্ধে বগুড়া ছিলো ৭ নং সেক্টরের অধিনে এবং ৭ জন বীর শ্রেষ্ঠ‘র স্মরণে স্বাধীনতা স্কয়ারে ৭ টি স্বম্ভ, ৭টি গোলাকার আকৃতি হলো এবং স্তম্ভের উপর ৭টি করে বার দেওয়া হয়েছে।
মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রতিফলন ঘটাতে তৎকালীন মেয়র রেজাউল করিম বাদশা পার্কে এটি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। স্থাপনাটি নির্মাণে ৫৪ লাখ ৭০ হাজার টাকা ব্যায় করা হয়। বগুড়া শহরের নামাজগড় এলাকার ইয়াছিন ট্রেডিং এই কাজটি পান। তিনি কাজ পেয়ে স্থানীয় এক কাউন্সিলরের কাছে কাজটি হস্তান্তর করেন। কাজটি সম্পন্ন করার মেয়াদ ছিলো ২০২৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর।
নির্ধারিত সময়ে কাজটি শেষ করতে পারেনি নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান। পরে ওই প্রতিষ্ঠানকে কাজটি শেষ করতে এবছরের ৩১ মার্চ পর্যন্ত সময় বাড়িয়ে দেওয়া হয়। সময় বাড়িয়ে দিলেও ওই প্রতিষ্ঠানটি কাজ শেষ করতে ব্যর্থ হয়। কাজটির দেখভালের দায়িত্বে থাকা তৎকালীন ১০ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর গত মার্চ মাসে এই প্রতিবেদককে জানিয়েছিলেন, কাজটি যে দরে দেওয়া হয়েছে, সেই দরে করা সম্ভব হচ্ছেনা।
তিনি চাইছিলেন ওই কাজের জন্য বরাদ্দ বাড়ানো হোক। এই জন্য তিনি প্রকৌশল বিভাগে এবং মেয়র বরাবরে মৌখিকভাবে অবগত করার কথা জানিয়েছিলেন। পরবর্তীতে মেয়র তাকে কাজটি করতে বলেছিলেন, কিন্তু তিনি কাজটি আর শেষ করেননি।
আরও পড়ুনএদিকে জুলাই আন্দোলন এবং আগস্টে সরকারের পতনের পর গা ঢাকা দিয়েছেন, তৎকালীন ১০ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আরিফুর রহমান আরিফ। তিনি জনসম্মুখে না থাকায় কাজটি আর হচ্ছে না। বগুড়া পৌরসভার প্রকৌশল বিভাগ থেকে জানান হয়েছে, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কার কাছে কাজ বিক্রি করলো বা কে কাজ করলো তা তারা দেখছেন না।
তারা ঠিকাদারকে ডেকে কাজটি করতে বলে দিয়েছেন। চলতি মাসের মধ্যে কাজ শেষ করতে না পারলে তার লাইসেন্স কালো তালিকা ভূক্ত হতে পারে। ইতোমধ্যে কাজ ৮৫ ভাগ হয়েছে এবং এবং ঠিকাদারকে ৭৪ ভাগ কাজের বিল দেওয়া হয়েছে বলেও জানান পৌরসভার কর্মকর্তারা। যে পরিমাণ বিল ঠিকাদারের পাওনা আছে তা দিয়ে এই কাজ শেষ করা সম্ভব।
ইয়াছিন ট্রেডিং এর স্বত্ত্বাধিকারী শাহরিয়ার ইসলাম জানান, তিনি কাজটি ১০ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আরিফুর রহমানের কাছে বিক্রি করে দিয়েছেন। তিনি কাজ শেষ না করে চলে গেছেন। পৌরসভার পক্ষ থেকে তাকে কাজ শেষ করতে বলা হয়েছে। তিনি কাজটি কয়েক দিনের মধ্যেই শুরু করবেন। ইতোমধ্যে টাইলস্ এর ওর্ডার করেছেন।
পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী আবু হেনা মোস্তফা কামাল করতোয়া’কে জানান, ঠিকাদারকে কাজ শেষ করার জন্য ডেকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তিনি আগামী সপ্তাহের রোববার কিংবা সোমবার কাজ শুরু করার কথা বলেছেন। কাজ বেশি বাকী নেই। চলতি মাসেই কাজ শেষ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
মন্তব্য করুন