ভিডিও রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪

শীতে কাঁপছে দেশ

শীতে কাঁপছে দেশ

পৌষের আগেই শীতের দাপট। শীতের তীব্রতা বাড়ায় গত কয়েকদিন ধরেই কাঁপছে দেশের বিস্তীর্ণ জনপদ। একদিকে ঘন কুয়াশার কারণে কোথাও কোথাও সারা দিনও মিলছে না সূর্যের দেখা। অন্যদিকে হাড় কাঁপানো শীতের সঙ্গে ঘন কুয়াশার দাপটও বেড়েছে। আর এর প্রভাবে স্থবির হয়ে পড়েছে জনজীবন।

দেশের উত্তরাঞ্চলে গত এক সপ্তাহ ধরে চলছে শৈত্যপ্রবাহে। সকাল থেকেই ঘন কুয়াশায় সূর্যের  মুখ দেখা যাচ্ছে না। সঙ্গে যুক্ত হয়েছে কনকনে ঠান্ডা বাতাস। প্রচন্ড শীতে জনজীবন স্থবির। এই শীতে দুর্ভোগ বেড়েছে দরিদ্র মানুষের। শিশু ও বয়স্ক মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে ঠান্ডাজনিত নানা রোগে। হাসপাতালেও ভর্তি করতে হয়েছে অনেককে। কুয়াশার কারণে বিঘ্নিত হচ্ছে নৌ ও বিমান চলাচল।

ঋতু পরিবর্তনের ধারায় দেশে শীত ঋতু আসে। কিন্তু শীতের প্রস্তুতি দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর থাকে না। বিশেষ করে দেশের উত্তরাঞ্চল, যেখানে প্রাকৃতিক কারণেই শীতের প্রকোপ বেশি, সেখানকার দরিদ্র মানুষের কন্ঠ এই শীতে অবর্ণনীয়। উত্তরাঞ্চলে বিভিন্ন জেলায় শৈত্যপ্রবাহ স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় বিঘ্ন সৃষ্টি করেছে।


প্রতিবছরই শীত মৌসুমে ঠান্ডাপ্রবণ এলাকায় মানুষের কাজের সুযোগ কম থাকে। তবে এবারের শীতে দিনমজুরি কাজের পরিধি অন্য সময়ের চেয়ে কমেছে। এ পরিস্থিতি নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য দরকার মানবিক সহায়তা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঝড়-বৃষ্টি কিংবা বন্যা ঘিরে সরকারের বড় প্রস্তুতি থাকলেও শীতে তা দেখা যায় না। কারণ, শীতকে সরকারিভাবে এখনও ‘দুর্যোগ’ ঘোষণা করা হয়নি।

শীত ঘিরে রাষ্ট্রীয়ভাবে পরিকল্পনা বাজেট প্রণয়ন কিংবা কোনো নীতিমালাও নেই। ফলে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ও হাত গুটিয়ে বসে থাকে। সব মিলিয়ে শীত মোকাবিলায় সরকারি উদ্যোগে দীর্ঘদিনের যে সমন্বয়হীনতার বৃত্ত, তা থেকে বের হতে পারেনি সরকারও। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শৈত্য প্রবাহকে দুর্যোগ ঘোষণা দিয়ে রাষ্ট্রীয় নীতি ও পরিকল্পনা নেওয়া উচিত। শুধু শীতবস্ত্রের মধ্যে সহায়তা সীমাবদ্ধ না রেখে শৈত্যপ্রবাহে বিপর্যস্ত মানুষের খাদ্য সহায়তা সহ নানা প্রণোদনার ব্যবস্থা করা উচিত।

এ মৌসুমে তাপমাত্রা ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নামতে পারে বলে আগেই জানিয়েছেন আবহাওয়া অধিদপ্তর। ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তিন মাসে ১২টি শৈত্যপ্রবাহ ও শিলা বৃষ্টি হতে পারে। ইতোমধ্যে তাপমাত্রা ১০ এর ঘরে চলে এসেছে। এ অবস্থায় শীত মোকাবিলায় প্রস্তুতির ঘাটতি আছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

আরও পড়ুন


শৈত্য প্রবাহ ও ঘন কুয়াশার কারণে ব্যাহত হচ্ছে স্বাভাবিক কৃষিকাজও। এই সময়ের স্বাভাবিক বীজতলা তৈরি করা যাচ্ছে না। কুয়াশায় অনেক ফসল নষ্ট হচ্ছে। কৃষককে ক্ষতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে। প্রচলিত রীতি অনুযায়ী আমাদের দেশে নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসকে শীতকাল হিসেবে গণ্য করা হয়। তবে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ঋতুচক্রের হিসাব মিলছে না। সব ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগে সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগ পোহাতে হয় দরিদ্র মানুষকেই।

শীতার্তদের কষ্ট লাঘবে যা জরুরি তা হলো মানবিক সহায়তা, বিশেষত ছিন্নমূল দরিদ্র মানুষের মাঝে শীতবস্ত্র ও কম্বল বিতরণ করা। এ জন্য প্রশাসনের পাশাপাশি সমাজের সামর্থ্যবানদের এগিয়ে আসা উচিত। তা ছাড়া শীতে বেশি ভোগে বয়স্ক ও শিশুরা। শীতের তীব্রতায় বাড়ে সর্দি-কাশি, নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া, হাঁপানি সহ শীতজনিত নানা রোগ। পুষ্টিহীনতার কারণে রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতাও তাদের কম থাকে। ফলে শীতার্তদের পাশে দাঁড়ানো দরকার এখনই।

প্রসঙ্গত আমরা বলতে চাই, সামগ্রিকভাবে শীতের প্রকোপে জনজীবনের দুর্ভোগ ও ঠান্ডাজনিত রোগের বিষয়টি আমলে নিয়ে জনসচেতনতা বাড়ানোও জরুরি। আর সেই লক্ষ্যে প্রচার প্রচারণা চালাতে হবে। শীতের দাপট, এর পাশাপাশি  কুয়াশাসহ সার্বিকভাবে আবহাওয়ার পরিস্থিতি আমলে নিতে হবে। শীতার্ত মানুষের দুর্ভোগকে এড়ানো যাবে না। বিপর্যস্ত জনসাধারণের পাশে দাড়াতে হবে।

প্রতিবছরই দেশের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে শীতবস্ত্রসহ কম্বল বিতরণের খবর পাওয়া যায়। তবে তা সংগ্রহ ও বিতরণ করতে শীত প্রায় শেষ হয়ে যায় বললেই চলে এবং তা প্রয়োজনের তুলনায় যথেষ্ট নয়। এ ধরনের তৎপরতা আরও বিস্তৃত হওয়া উচিত। দেশে অনেক বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। তারাও পারে শীতার্ত দু:খী মানুষের পাশে দাঁড়াতে। আসুন আমরা যার যার জায়গা থেকে শীতার্তদের পাশে দাঁড়াই।

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আন্দোলনে যাচ্ছেন ২৫ ক্যাডারের কর্মকর্তারা

রাজশাহীতে নেসকো’র ভৌতিক বিল বন্ধসহ নানা হয়রানির প্রতিবাদে বিক্ষোভ

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে শীতকালীন ছুটি, বহিরাগতদের প্রবেশে বিধি-নিষেধ

টাঙ্গাইলে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় বাবা-ছেলের মৃত্যু

ছেলের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে মায়ের মৃত্যু

বগুড়ার ধুনটে পাট মজুদ করায় ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে মামলা: গুদাম সিলগালা