ভিডিও মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪

জয়পুরহাটসহ উত্তরাঞ্চলের পিঠা উৎসবের সেকাল-একাল

জয়পুরহাটসহ উত্তরাঞ্চলের পিঠা উৎসবের সেকাল-একাল, ছবি : দৈনিক করতোয়া

মোস্তাকিম ফাররোখ, জয়পুরহাট জেলা প্রতিনিধি : পৌষের কনকনে শীতে জয়পুরহাটসহ উত্তরাঞ্চলে বাঙালির ঘরে ঘরে পিঠা উৎসবের ধুম পড়ে যায়। অগ্রহায়ণ মাসে ধান কাটা শুরু হয়। ধান কেটে এনে বাড়ির উঠোনে রাখা ধানের মৌ মৌ গন্ধে বাড়ি ভরে যায়। ধান মাড়াই শেষে উঠানেই অস্থায়ী বড় বড় চুলা তৈরি করে চলে ধান সিদ্ধর পালা।

ধান সিদ্ধ ও শুকানো শেষে ঢেঁকিতে ধানভানা শুরু হয়। ধানভানা শেষ হলে শুরু হয় পিঠা উৎসবের প্রস্তুতি। শুরু হয় ঢেঁকিতে চালের আটাকোটা। ওই পিঠা উৎসবে আনন্দ আরও বাড়িয়ে দেয় যৌথ পরিবার। এই মাসেই বার্ষিক পরীক্ষা শেষে শীতে স্কুল ছুটি হতো দীর্ঘ দিনের জন্য। এর মধ্যেই চলে আসতো আত্মীয়-স্বজনরা। তখন বাড়ি ভরে যেত আত্মীয়তে।

নতুন চালের ভাত আর সঙ্গে নানা ধরনের নতুন সবজি, বাড়ির মুরগি আর পুকুরের মাছ যেন অমৃত খাওয়া। আর বিকেল হলেই শুরু হতো অঙ্গিনায় দাঁড়িয়াবান্ধা, গোল্লাছুট, ছি-বুিড়, ওপেন্টি বাইস্কোপ, কানামাছিসহ নানা রকমের খেলা। ভোরে খেজুরের রস খাওয়ার সাথে থাকতো গ্রামের কোঁচের ভাজা মুড়ি। এর ফাঁকে সন্ধ্যা অথবা ভোর সকালে পিঠা তৈরির ধুম পরে যেত।

পিঠা তৈরির জন্য কাকডাকা ভোরে দাদি, মা-চাচিরা ভাপা পিঠা তৈরি শুরু করতেন। তখন ভাপা পিঠা খাবার জন্য ডাকা হতো সকলকে। সকলেই আঙ্গিনায় চুলার চার পাশে সকলে সুতি র‌্যাপার গায়ে মুড়িয়ে বসে পড়তেন। ভাপাপিঠা তৈরি হতো আর একে একে সবার পাত ঘুরে ঘুরে তা দেওয়া হতো। চুলার আগুনের তাপে পিঠা খাওয়া যে কত মজার তা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না।

আরও পড়ুন

এর মধ্যে কোন একদিন দুধপিঠা, পুলি, চিতইপিঠা, রসেরপিঠা, কালাইপুরি, ঝাল-লবনের পিঠা, খেজুরের গুরের খির, পায়েস আরও কতো মজার মাজার পিঠা যেন মন ও প্রাণ জুড়িয়ে যায়। পিঠা উৎসব, একান্নবর্তী পরিবার আর শৈশব যেন একাকার হয়ে যেত।

এখন আর সেই ঘরে ঘরে পিঠা উৎসবও নেই একান্নবর্তী পরিবারও নেই। একক পরিবার ও ইট পাথরে সব ঢাকা পড়ে গেছে। আর নেই সেই আনন্দ আর উল্লাস। নেই মমত্ব। কালের বিবর্তনে সব হারিয়ে গেছে। বাড়িতে নয় এখন সেই পিঠা হাট-বাজারে স্থান পেয়েছে। হাট-বাজারে ও মহল্লার মোড়ে মোড়ে বাণিজ্যিক পিঠার দোকান। কোথাও কোথাও ৬ থেকে ৭টি চুলা বসিয়ে সন্ধ্যায় পিঠা তৈরি শুরু হয়। ক্রেতারা বেঞ্চে চুপচাপ বসে ভাপা, চিতই আর মাশকলাইয়ে পিঠা খেয়ে বাড়ি ফিরে যান।

এখন ওই পিঠার দোকাগুলোতে দুধ পিঠা তৈরি হয় না। তাই বাড়িতেই দুধ পিঠা তৈরি করতে হয়। দুধ পিঠা তৈরির জন্য বাড়িতে দুধ আর খেজুরের গুড় জ¦াল দেওয়া হয়। পরিশ্রমের ভয়ে দুধে ভিজানোর জন্য সাদা পিঠাও হাট বাজারের দেকান থকে তৈরি করে আনা হয়। আর বাড়িতে তৈরি করে রাখা দুধ ও খেজুরের গুড়ে জাল দিয়ে রাখা রসে ডুবিয়ে দুধ পিঠা তৈরি করা হয়। এই পিঠা শুধু খাওয়াই হয়, যাতে নেই কোন উৎসব, আনন্দ, সুখ।

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

পাবনার সুজানগরে গাজনার বিলের পানি সেচে ও গ্যাস ট্যাবলেট দিয়ে মাছ নিধন

বগুড়ায় ১৪৫০ এ্যাম্পুল নেশার ইনজেকশনসহ দুইজন গ্রেপ্তার

জয়পুরহাটসহ উত্তরাঞ্চলের পিঠা উৎসবের সেকাল-একাল

বগুড়ার শিবগঞ্জে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় সাবেক ইউপি সদস্য নিহত

দিনাজপুরের হিলিতে টিসিবি পণ্য বিক্রি শুরু

সবজির বাজারে স্বস্তি