ভিডিও বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪

ইজতেমা নিয়ে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ

ইজতেমা নিয়ে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ

টঙ্গীর তুরাগ তীরে বিশ্ব ইজতেমার মাঠ দখলকে কেন্দ্র করে এক রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে চারজন নিহত হয়েছেন। মঙ্গলবার রাত তিনটার দিকে মাওলানা জুবায়ের ও মাওলানা সাদের অনুসারিদের মধ্যে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় বেশ কয়েকজন আহত হন। বুধবার সকালে গাজীপুর পুলিশ কমিশনার মো: নাজমুল করিম খান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

এদিকে তাবলিগ জামাতের দুই পক্ষের সংঘর্ষে হতাহতের ঘটনার প্রেক্ষাপটে টঙ্গীর ইজতেমা মাঠ ঘিরে তিন কিলোমিটার এলাকায় সব ধরনের সভা, সমাবেশ, মিছিল এবং দুই জনের বেশি জমায়েত নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে পুলিশ। অন্যদিকে সংঘর্ষে হতাহতের ঘটনার বিচার ও ময়দান বুঝিয়ে দেওয়ার দাবিতে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন মাওলানা জুবায়েরের অনুসারিরা। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব:) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, ‘হত্যাকান্ডের সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের ছাড় দেওয়ার কোনো অবকাশ নেই। মামলায় জড়িতদের আইনের আওতায় আনা হবে’।

এ ধরনের হিংসাত্মক ঘটনা আমাদের জন্য এক লজ্জাজনক পরিস্থিতি ছাড়া আর কি-ই বা বলতে পারি। বিশ্ব ইজতেমায় দেশ-বিদেশের সমবেত লাখ লাখ মুসল্লির ইবাদত বন্দেগিতে মুখরিত হয়ে ওঠে টঙ্গীর তুরাগ তীর। বিশ্ব ইজতেমায় বিশ্বের বড় বড় ইসলামি পন্ডিতগণ বাংলাদেশ ও বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা মুসল্লিদের মধ্যে ধর্মীয় বয়ান করেন। বিশ্ব মানবের শান্তি ও কল্যাণ কামনা করে আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হয় এ গণজমায়েত। কিন্তু বেশ কিছুদিন ধরেই উত্তেজনা চলছে।

আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনী, বিজিবি, র‌্যাব, পুলিশসহ সশস্ত্র বাহিনীর প্রায় এক হাজার সদস্য মোতায়েন করা হয়। বিকাল থেকে মুসল্লিরা ইজমেতা মাঠ ত্যাগ করতে থাকেন। বিশ্ব ইজতেমার ৪২দিন আগে জোড় ইজতেমায় এ সহিংস ঘটনা হতবাক করেছে ধর্মানুসারীদের। ইসলাম শান্তির ধর্ম। এ ধর্মের একটি অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে এমন ঘটনা কোনোভাবেই কাম্য নয়। এ ঘটনা আসন্ন বিশ্ব ইজতেমায় মুসল্লিদের আগমনকে নিরুৎসাহিত করতে পারে বলে আশংকা করছেন অনেকেই। তাই বিশ্ব ইজতেমাকে সর্বাত্মক শান্তিপূর্ণ করার জন্য উভয় পর্বেই বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া উচিত বলে মনে করি আমরা।

২০১৮ সালে বাংলাদেশে তাবলিগের দুইপক্ষ বা দ্বন্দ্বের বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে। তাবলিগের দুইপক্ষ পরস্পর বিরোধী অবস্থানে থাকলেও বিষয়টি জটিলতায় রূপ নেয় ২০১৮ সালের ১ ডিসেম্বর ইজতেমা মাঠে সংঘর্ষকে কেন্দ্র করে। এবার আর কথার লড়াইয়ে সীমাবদ্ধ থাকল না। রক্তক্ষয়ী এক সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ল বিশ্ব ইজতেমার সাদ ও জুবায়েরপন্থিরা। ঝরে গেল কয়েকটি প্রাণ। বিষয়টি খুবই দু:খজনক। উল্লেখ্য, আগামী বছরের ৩১ জানুয়ারি থেকে ২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব ও ৭ থেকে ৯ ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয় পর্ব  অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। দ্বন্দ্বের এমন ঘেরাটোপে পড়ে এবারের বিশ্ব ইজতেমা নিয়েই অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।

আরও পড়ুন

৫ আগস্ট রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার পট পরিবর্তনের পর আমরা দেখেছি। নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে সাদপন্থিদের ফ্যাসিবাদের দোসর আখ্যা দিয়ে নিষিদ্ধের দাবিতে সমাবেশ করেন তাবলিগের জোবায়ের পন্থিরা। সাদপন্থিরাও পরে অনুরূপ সমাবেশের ডাক দিলে জোবায়েরপন্থিদের চাপে সরকারের হ্স্তক্ষেপে অবশেষে তা বাতিল করা হয়। তবে উভয়পক্ষই একে অপরকে ঠেকাতে যে বেপরোয়া তা ষ্পষ্ট। হতাশাজনক হলো, এত প্রাণহানির পরেও তাদের কোনো পক্ষের মধ্যেই ছাড় দেওয়ার মানসিকতা দৃশ্যমান হচ্ছে না।

প্রতিবছরই সুশৃঙ্খল ও শান্তিপূর্ণভাবে এ সমাবেশটি আমাদের দেশে সম্পন্ন হয়ে আসছে। এবারও এমনটিই প্রত্যাশিত। তাই মহান আল্লাহর দ্বীনের স্বার্থে সংশ্লিষ্ট সকলকে সবর করার এবং শান্ত থাকতে হবে। নোবেল বিজয়ী প্রফেসর ড. ইউনূসের সুদক্ষ নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার সকল বাধা অতিক্রম করে সামনে এগিয়ে চলেছে। ছাত্র-জনতার এ অর্জন ম্লান করতে দেয়া যাবে না।

দেশের এ ক্রান্তিকালে ধর্মীয় নেতাদের এ রকম বিভেদ-বিশৃঙ্খলা সার্বিক পরিস্থিতিকে আরো অস্থিতিশীল করে তুলবে। এ রকম বিশৃঙ্খলা এবং ধ্বংসাত্মক কাজ ইসলাম সমর্থন করে না। অতএব, দেশ এবং উম্মাহর স্বার্থে সকলেই ইতিবাচক মনোভাব দিয়ে এগিয়ে আসুন। ইজতেমা শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হবে এবং এ আয়োজন সবার জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে -এটাই আমাদের প্রত্যাশা।

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

নতুন বছরের শুরুতেই থাকবে শৈত্যপ্রবাহ

পাকিস্তানের বিমান হামলায় আফগানিস্তানে নিহত ১৫

মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ের ছাত্রলীগ নেতা গ্রেপ্তার

চেতনানাশক দিয়ে নিস্তেজ করা হয়েছিলো সবাইকে

ভারতে ১৮ বাংলাদেশি গ্রেফতার

শুভ বড়দিন আজ