আট বছর একই কর্মস্থলে
বগুড়ায় সরেজমিন গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ
স্টাফ রিপোর্টার : বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট’র আওতাধীন বগুড়ার চেলোপাড়াস্থ সরেজমিন গবেষণা কেন্দ্র’র প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. শহিদুল আলমের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার করে অধীনস্ত কর্মকর্তাদের হয়রানী, সার-বীজের টাকা আত্মসাৎ, কৃষকদের বঞ্চিত করে দলীয় লোকদের প্রশিক্ষণ দেওয়াসহ নানা অভিযোগ উঠেছে। একটানা আট বছর একই কর্মস্থলে অবস্থান করে তিনি সবকিছু তার নিয়ন্ত্রণে নিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
ফসল সম্প্রসারণ ও সম্ভাবনা চিহ্নিতকরণের মাধ্যমে লাগসই কৃষি প্রযুক্তি উদ্ভাবনের চেষ্টা করে চলেছে কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের আওতাধীন প্রতিষ্ঠানটি। এই প্রতিষ্ঠানে প্রায় আট বছর ধরে কর্মরত রয়েছেন প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা (ইনচার্জ) ড. শহীদুল আলম। গবেষণা কেন্দ্রের সহায়তায় স্থানীয় চাষিদের কল্যাণের পাশাপাশি তিনিও লাভবান হয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
গবেষণা প্রতিষ্ঠানে সার, বীজ বাইরে বিক্রি করে অর্থ আত্মসাৎ, প্রশিক্ষণের কথা বলে ভুয়া ভাউচারে টাকা তুলে নেয়া, প্রণোদনার টাকা আত্মসাৎ করাসহ তার অধীন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দমিয়ে রাখার অভিযোগও রয়েছে।
২০১৬ সালে শিবগঞ্জ মসলা গবেষণা কেন্দ্র থেকে বদলি হয়ে চেলোপাড়াস্থ সরেজমিন গবেষণা কেন্দ্রর প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেন। বগুড়ায় তিনি ইনচার্জ হিসেবে যোগদান করেন। ২০১৬ সাল থেকে এখন পর্যন্ত একই কর্মস্থলে রয়েছেন বহাল তবিয়তে। চাকরি জীবনে আওয়ামী লীগের এমপিদের কাছাকাছি থাকার চেষ্টা করেছেন।
তার বাড়ি বগুড়ার সোনাতলায় হওয়ায় তিনি ওই এলাকার সংসদ সদস্য আব্দুল মান্নান এবং পরবর্তীতে তার স্ত্রী সাহাদারা মান্নানের ঘনিষ্টজন হিসেবে পরিচিতি পান। এ কারণে সাহাদারা মান্নান এমপি হওয়ার পর তিনি সরকারি কর্মকর্তা হওয়ার পরও তাকে ফুলের তোড়া দিয়ে শুভেচ্ছা জানান। এই এমপি তাকে সব সময় সহায়তা করেছেন। বিশেষ করে দলীয় লোকজনদেরকে কৃষক হিসেবে দেখিয়ে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন।
আরও পড়ুন২০১৬ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত সারিয়াকান্দি ও সোনাতলা উপজেলায় চর উন্নয়ন প্রকল্প ও ফার্ম মেশিনারিজ প্রকল্পের কৃষকদের প্রশিক্ষণ দেখিয়েছেন কমপক্ষে ১২৭টি। কিন্তু বাস্তবে প্রশিক্ষণ কর্মসূচি এতো হয়নি বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে সারিয়াকান্দিতে প্রশিক্ষণ আয়োজন ও কৃষক বাছাইয়ের দায়িত্ব দেন প্রধান বৈজ্ঞনিক কর্মকর্তার আত্মীয় বৈজ্ঞানিক সহকারী উপজেলার বাসিন্দা আবু মাসুদ ও আরেক আত্মীয় ল্যাব সহকারী শাহ কামালকে।
এই তিনজন মিলে শুধু প্রশিক্ষণই নয়, অফিসের ভুয়া বিল-ভাউচারে কেনাকাটা থেকে শুরু করে সবই করেন। এভাবে প্রশিক্ষণ খাতেই বছরে বহু টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। একই অফিসে কর্মরত এবং এই অফিস থেকে বদলি হওয়া কর্মকর্তারা অভিযোগ করে বলেছেন, তাদেরকে বিভিন্ন ক্রয় কমিটির প্রধান করা হলেও কী কেনা হয়েছে কত টাকার কেনা হয়েছে তারা তা জানতেন না, তারা শুধু ভাউচারে সই করতেন।
তবে ড. মো. শহিদুল আলম এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, তার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করা হয়েছে। তিনি বলেন, যে দল যখন ক্ষমতায় থাকে তাদের সাথে মিল দিয়ে থাকতে হয়। প্রশিক্ষণ প্রসঙ্গে এই কর্মকর্তা বলেন, যাদেরকে আওয়ামী লীগ বলা হচ্ছে তাদের সবারই জমি আছে, তারা কৃষক। সার-বীজ তিনি একটি দোকান থেকেই কিনতেন সেখান থেকে পরে বিল দেওয়া হতো দাবি করে তিনি বলেন, বিল-ভাউচারে সই নেয়ার বিষয়টি সঠিক নয়।
মন্তব্য করুন