ভিডিও মঙ্গলবার, ০৭ জানুয়ারি ২০২৫

স্কুল-কলেজে রাজনৈতিক কমিটি

স্কুল-কলেজে রাজনৈতিক কমিটি। ছবি : দৈনিক করতোয়া

“যাহা বায়ান্নো -তাহাই তেপান্ন” বাংলা ভাষার একটি বহুল প্রচলিত প্রবাদ। অথবা “যেই লাউ - সেই কদু”। কিংবা “খাড়া বড়ি থোর- থোর বড়ি খাড়া”। যেটাই হোক না কেন পরিস্থিতি একই রকম, খুব একটা হেরফের হলো না। বলছিলাম, জুলাই-আগষ্ট পট পরিবর্তনের পর দেশে স্কুল-কলেজের ম্যানেজিং কমিটি গঠন প্রসঙ্গে। অনেক পূর্ব থেকেই এক্ষেত্রে দীর্ঘ অনিয়ম-অব্যবস্থাপনা চলে আসছিল। বলা চলে বহুদিনের পুরনো সমস্যা।

বিগত ফ্যাসিবাদী আওয়ামী যুগে নৈরাজ্যের চরমে উঠেছিল স্কুল-কলেজের কমিটি করার ব্যাপারটি। তখন আওয়ামী লীগের আইন প্রণেতারা এই সুস্বাদু বলয়ে ঢুকে পড়ে মধু খাওয়ার নেশায় তালগোল পাকিয়ে হ-য-ব-র-ল পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছিলেন তা সবারই বোধ করি স্মরণে আছে। সাংসদ নিজে একাকী আর কয়টা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কমিটিতে নেতা হয়ে কলকাঠি নাড়বেন।

তাই তাদের ভাই, ভাতিজা, ছেলে-মেয়ে বা আত্মীয়স্বজন তথা বংশাবলী পর্যন্ত বিদ্যালয় বা কলেজ কমিটিতে সভাপতি মনোনীত বা নির্বাচিত হয়ে লাঠি-ছড়ি ঘুরাতে আর লুটপাট করতে পারতেন অবাধে। স্কুল-কলেজ চেটেপুটে খাবার এমন মওকা ছাড়ে কে। আওয়ামী নেতা-কর্মীরা এ নিয়ে রমরমা বাণিজ্য গড়ে তুলেছিল। তাই বিগত স্বৈরাচারী সরকারের আর একটা স্বেচ্ছাচারিতার জ্বলন্ত নজির বা নিদর্শন হলো স্কুল-কলেজেও রাজনৈতিক সংক্রমণ বা নোংরা বিষ ঢুকানো।

এতে শিক্ষাঙ্গনে রাজনীতি আর দুর্নীতি অপ্রতিরোধ্য গতিতে সঞ্চারিত হয়েছে শিক্ষা বিদ্যাপীঠের সমস্ত শিরা-উপশিরায়। সেখানে জড়িত শিক্ষক-শিক্ষার্থী সবাই কামাই-রোজগার আর রাজনীতি ও ক্ষমতা চর্চার মধুরিমায় ব্যস্ত হয়ে পড়েছে।

এভাবে দেশের শিক্ষা ক্ষেত্রে রোগাক্রান্ত অসুস্থ পরিবেশ প্রায় স্থায়ীরূপ লাভ করেছে। এক পর্যায়ে বিগত পতিত সরকারের আমলেই হাইকোর্টের এক রায়ে কলেজ-বিদ্যালয় কমিটির সভাপতি পদে এমপিদের মনোনয়ন নিষিদ্ধ করা হয়। তা নিয়ে তৎকালীন সংসদেও হৈ চৈ হয়েছিল। কেননা আমাদের শিক্ষাঙ্গনে বিরাজমান কলঙ্কের মধ্যে এটা বর্তমানে ক্যান্সারে পরিণত হয়েছে।

যার মূলোৎপাটন জনগণ আশা করেছিল ছাত্র-জনতা বিপ্লবী অভ্যুত্থান পরবর্তী সময় থেকে শুরু হবে। কিন্তু সে আশার মনে হয় গুড়েবালি। শিক্ষাঙ্গনের সে অমানিশা কাটার আপাতত: তেমন সম্ভাবনা মনে হয় নেই। তা এজন্য যে, জুলাই-আগস্ট পট পরিবর্তনের পর আবার শুরু হয়েছে দলীয় তথা রাজনৈতিক ব্যানারে ও বিবেচনায় স্কুল-কলেজের ম্যানেজিং কমিটি তৈরীর ধুম বা হিড়িক। বিশেষ করে সভাপতির লোভনীয় এবং আকর্ষণীয় পদ-পদবী দখল।

সেটা এমনও হচ্ছে যে, কর্তৃপক্ষের চিঠি পাওয়ার সাথে সাথে তৎক্ষণাত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার কপি পোস্ট-শেয়ার করে অমুক নেতা তমুক কলেজ বা হাইস্কুলের সভাপতি হয়েছেন তার জন্য তাকে ফুলেল শুভেচ্ছা, অভিনন্দন ইত্যাদি ভাইরাল হয়ে চলেছে। প্রশংসা আর অভিনন্দনে ভাসছেন সেই নেতা বা নেত্রী। যার মধ্যে বর্তমান বিএনপি ঘরানার নেতারাই প্রায় একচেটিয়া।

অথচ তারা তো এখনো ক্ষমতায়  যায়নি। তা সত্ত্বেও আওয়ামী লীগের শূন্য স্থান তারা পূরণ করে চলেছে। আবার তাদের মধ্যে দলীয় দৃষ্টিতে প্রার্থী বাছাইয়ে পছন্দ-অপছন্দের দরুন মতবিভেদও দেখা যায়। এমনকি চাউর হচ্ছে বিরূপ কমেন্টসও।

তাহলে আওয়ামী লীগের যুগেও যে মারাত্মক ব্যাধি আবার বিএনপি রেজিম শুরুই হয়নি তা সত্ত্বেও দুরারোগ্য একই সামাজিক সংক্রমণ এবং রুগ্নতা দেখা দিয়েছে প্রবলভাবে। সরকারের কোন্ আইন বা বিধানে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এসব হুকুম জারি করে যাচ্ছে, দলীয় কেউকেটাদের শিক্ষা কমিটিতে দিচ্ছে ভোগ-উপভোগের জায়গা করে সেটা জনগণের মধ্যে প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।

আরও পড়ুন

এটা কতটুকু শিক্ষা ব্যবস্থার জন্য মঙ্গলজনক, শিক্ষার উন্নয়নে এর ইতিবাচক-সহায়ক প্রভাব কি, কতটুকুই বা নীতি-আদর্শের দিক থেকে বাঞ্ছনীয় এবং বিচার-বিবেক সম্মত তা ভাবার অবকাশ রয়েছে। আমাদের শিক্ষার মান এমনিতেই ভয়াবহ নিম্নমানের তলানিতে পৌঁছে গেছে যা বৈশ্বিক মানের ধারে-কাছেও যায় না। এই পতন, পচন ও ধস ঠেকাতে বরং উচিত ছিল রাজনৈতিক ব্যক্তিদের বা নেতাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কমিটিতে প্রবেশের সুযোগ চিরতরে বন্ধ করে দেয়া।

বরং তা না করে এখন পূর্বের নষ্টামীর ধারাই বহাল তবিয়তে চালু করা বা বহাল রাখা হচ্ছে। আগের আওয়ামী সরকার যত অপকর্ম বা দুস্কর্ম করেছে তার মধ্যে ক্ষমতা কুক্ষিগত করার হীন লক্ষ্যে শিক্ষাঙ্গন দখল, কলুষিত, দূষিত ও বিধ্বস্ত করার এই পন্থা-প্রক্রিয়া ছিল সবচেয়ে জঘন্য, লোমহর্ষক। অথচ বর্তমানে দল নিরপেক্ষ এবং রাজনীতি বর্জিত অন্তর্বর্তী সরকার কিভাবে এই অকল্যাণকর ও শিক্ষাঙ্গন বিনাশী ব্যবস্থা সচল ও কার্যকরী রাখার অনুমোদন দিয়ে চলেছে তা বোধগম্য নয়।

অন্যান্য সংস্কারের পাশাপাশি শিক্ষা সংস্কারের জন্য যখন জোর দাবি ও লেখালেখি হচ্ছে। তেমন প্রেক্ষাপটে আমরা চাই অযোগ্য, অদক্ষ, অশিক্ষিত, স্বল্পশিক্ষিত, মূর্খ এবং রাজনীতির দুর্বৃত্তায়ন কবলিত তথাকথিত সমাজ নেতৃত্বকে শিক্ষার মতো পবিত্র ও জ্ঞানচর্চার দিগন্তে অন্তর্ভুক্তির অপসংস্কৃতি অবশ্যই অপসারণ বা পরিহার করতে হবে।

পক্ষান্তরে শিক্ষা অনুরাগী, সৎ ও স্বচ্ছ ভাবমূর্তির অরাজনৈতিক ব্যক্তিকে এই কমিটিতে ঠাঁই দিলে ভালো হতো। সমাজের জ্ঞানী ও বিদ্বজ্জনদের জায়গা করে দিতে হবে শিক্ষাঙ্গনের পবিচালনা হাল ধরতে ও তত্ত্বাবধান করতে।

এ ছাড়া আমরা যে জ্ঞানভিত্তিক সমাজ ও আধুনিক আলোকিত বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তিমুখী প্রজন্মের স্বপ্ন দেখতে চাই- অধরাই থেকে যাবে সে প্রত্যাশা আরো কতকাল তা কেউ বলতে পারবে না। তাই শিক্ষা সেক্টরে এই অবনতিশীল অবস্থার পরিবর্তনে একটা সামাজিক আন্দোলনের বিকল্প নেই মনে হয়। তা নাহলে আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম বা ভবিষ্যৎ বংশধর প্রকৃত শিক্ষার আলোর সংস্পর্শ থেকে বঞ্চিত হতেই থাকবে সেটা আশংকা করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে।

 

আব্দুর রাজ্জাক রাজু
লেখক, সম্পাদক, সাপ্তাহিক চলনবিল বার্তা
তাড়াশ, সিরাজগঞ্জ
০১৭১৬-১৮৭৩৯২

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

পর্যটন খাতের যত্ন নিতে হবে

যারা বিএনপিকে ভয় পায় তারা নির্বাচন দীর্ঘায়িত করার চেষ্টা করছে : বগুড়ায় বিএনপির কর্মী সভায় আ: সালাম

বগুড়ার ধুনটে যমুনায় নৌকার নোঙরে নষ্ট জিও ব্যাগ, ভাঙনের ঝুঁকিতে বাঁধ

নাটোরের বাগাতিপাড়ায় সার ডিলারের দুই লক্ষাধিক টাকা জরিমানা

নকল ছবি কি না বুঝবেন সহজেই, হোয়াটসঅ্যাপে নতুন ফিচার

রংপুরে ৫৫ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধার