প্রবীর মিত্রের মৃত্যুতে শোকাতুর তারকারা
বিনোদন ডেস্ক : পরপারে পাড়ি জমিয়েছেন অভিনেতা প্রবীর মিত্র। রোববার (৫ জানুয়ারি) রাত ১০টা ১০ মিনিটে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮১ বছর। প্রবীর মিত্রের মরদেহ নেয়া হবে এফডিসিতে। আজ সোমবার (৬ জানুয়ারি) সেখানে শ্রদ্ধা জানানো শেষে বাদ জোহর তার জানাজা। এরপর আজিমপুর কবরস্থানে তাকে দাফন করা হবে।
প্রবীর মিত্রের মৃত্যুর খবরে সাধারণ মানুষের পাশাপাশি মিডিয়া অঙ্গনে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকেই শোক ও শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। শোক ও শ্রদ্ধা জানিয়ে শাকিব খান লিখেছেন, ‘যেখানে থাকুন, শান্তিতে থাকুন।’ মিশা সওদাগর লিখেছেন, ‘প্রবীর মিত্র দাদা আর নেই। কিছুক্ষণ আগে উনি ইন্তেকাল করেছেন। স্রষ্টা তাকে ক্ষমা করুক।’ জায়েদ খান লিখেছেন, ‘প্রবীর মিত্র দাদা আর নেই। কিছুক্ষণ আগে উনি ইন্তেকাল করেছেন। স্রষ্টা তাকে ক্ষমা করুক। হে আল্লাহ আমাদের শোক সইবার ক্ষমতা দাও।’ দিনাত জাহান মুন্নী শোক জানিয়ে লেখেন, ‘চলচিত্রে আমাদের আবেগের জায়গাজুড়ে ছিলেন প্রবীর মিত্র। অভিনয়ের বাইরে তিনি ছিলেন একান্ত নিভৃতচারী। তিনি চলচিত্রে সবসময় সৎ ব্যক্তির চরিত্রে অভিনয় করতেন। আজ তিনিও চলে গেলেন জীবন থেকে পরপারে। তার আত্মার শান্তি কামনা করছি।’
ইমন সাহা লিখেছেন, ‘কী হচ্ছে কে জানে? ঈশ্বর কী চান তা একমাত্র তিনিই জানেন। গত কয়েকদিন ধরে শুধু আপন মানুষ হারানোর বার্তাই দিয়ে যাচ্ছি। প্রবীর মিত্র কাকু আমাদের পরিবারের অত্যন্ত কাছের মানুষ ছিলেন। আমাদের চলচ্চিত্র প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের প্রতিটি ছবিতেই তার উপস্থিতি ছিল। তার মতো ভাল মানুষ এ জগতে বিরল। জীবনে কারো সাথে উচ্চস্বরে কথা বলেছেন বলে আমার চোখে পড়েনি। হাসি মুখ ছাড়া আপনাকে কোনোদিন দেখিনি। দীর্ঘ দিনের অসুস্থতা জানার পরও আপনার চলে যাওয়া মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে। ঈশ্বর আপনার মঙ্গল করুক।’ সাজ্জাদ হোসেন দুদুল লিখেছেন, ‘প্রিয় প্রবীর চাচা, আপনি আমাদের মাঝে নেই শুনতে ভীষণ কষ্ট হলো। কিন্তু ঈশ্বরের বিধান আমরা মেনে নিতে বাধ্য। আমার বাবা আমজাদ হোসেনের প্রায় সব ছবিতে আপনি অভিনয় করেছেন। আপনার জন্য বাবা আলাদাভাবে যত্ন নিয়ে চরিত্র তৈরি করতেন। আপনি কতো বড় মাপের শিল্পী তা বাংলাদেশের সকলে জানে। আপনার অভিনয় নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই। আমার পরিচালনাতেও কাজ করেছেন। আমাকে অনেক স্নেহ করতেন। আপনার ভালোবাসায় বন্দী আমরা। জীবনের শেষ বাস্তবতা কষ্ট ছাড়া আর কিছুনা। জীবন একটা স্মৃতি মাত্র। ওপারে ভালো থাকবেন চাচা।’
আরও পড়ুনঅনেকদিন ধরেই বয়সের ভারে ন্যুব্জ হয়ে পড়েছিলেন প্রবীর মিত্র। অক্সিজেন স্বল্পতাসহ বেশকিছু জটিলতার কারণে গত বছরের ২২ ডিসেম্বর রাজধানী ঢাকার একটি হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি। তার ছোট ছেলে সিফাত ইসলাম গণমাধ্যমকে জানান, কিছু শারীরিক জটিলতায় গুণী এই অভিনেতাকে হাসপাতালে ভর্তির পর আইসিইউতে নেওয়া হয়। সেখান থেকে তাকে কেবিনে আনেন চিকিৎসকরা। এরপর আবারও এইচডিইউতে রাখা হয়েছিল তাকে। কিন্তু শেষ রক্ষা হলো না। হাসপাতালেই শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।
১৯৪৩ সালের ১৮ আগস্ট কুমিল্লার চান্দিনায় জন্মগ্রহণ করেন প্রবীর মিত্র। পুরান ঢাকায় বেড়ে ওঠেন তিনি। ১৯৬৯ সালে প্রয়াত এইচ আকবরের ‘জলছবি’র মাধ্যমে বড় পর্দায় অভিষেক হয় তার। ছবিটি মুক্তি পায় ১৯৭১ সালে। ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে নায়ক হিসেবে কাজ করলেও তিনি ছিলেন মূলত একজন চরিত্রাভিনেতা। প্রবীর মিত্র অভিনীত কাজের তালিকায় রয়েছে ‘তিতাস একটি নদীর নাম’, ‘জীবন তৃষ্ণা’, ‘সেয়ানা’, ‘জালিয়াত’, ‘ফরিয়াদ’, ‘রক্ত শপথ’, ‘চরিত্রহীন’, ‘জয় পরাজয়’, ‘অঙ্গার’, ‘মিন্টু আমার নাম’, ‘ফকির মজনু শাহ’, ‘মধুমিতা’, ‘অশান্ত ঢেউ’, ‘অলংকার’, ‘অনুরাগ’, ‘প্রতিজ্ঞা’, ‘তরুলতা’, ‘গাঁয়ের ছেলে’, ‘পুত্রবধূ’সহ চার শতাধিক সিনেমা।
মন্তব্য করুন