পর্যটন খাতের যত্ন নিতে হবে
পর্যটন খাত শুধু একটি অর্থনৈতিক সুযোগ নয় বরং এটি একটি জাতির সংস্কৃতি, প্রকৃতি এবং ঐতিহ্যকে বিশ্ব দরবারে তুলে ধরার অন্যতম মাধ্যমও বটে। বাংলাদেশের মতো একটি দেশে, যেখানে রয়েছে প্রকৃতির রূপবৈচিত্র্য, ঐতিহাসিক নিদর্শনসমূহ এবং সমৃদ্ধ সংস্কৃতির সমন্বয়, সেখানে পর্যটন খাতের গুরুত্ব অপরিসীম।
তবে এই খাতকে সঠিকভাবে পরিচালনা এবং রক্ষণাবেক্ষণ না করলে এটি ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে। পর্যটন খাত দেশের জিডিপি বৃদ্ধিতে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখে। এটি গ্রামীণ অর্থনীতি উন্নয়নে সহায়তা করে এবং হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে। কক্সবাজার, সুন্দরবন, সেন্টমার্টিন, সিলেটের জাফলং নদী, পাহাড়ি অঞ্চল এবং ঐতিহাসিক স্থানগুলোতে প্রতিবছর লক্ষাধিক পর্যটক আসেন। তাদের আগমনের মাধ্যমে স্থানীয় ব্যবসা, হোটেল, রেস্টুরেন্ট এবং পরিবহন খাত সমৃদ্ধ হয়।
পর্যটন এলাকা আমাদের দেশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই পর্যটকদের পরিবেশ দূষণ সম্পর্কে জনসচেতনতা বাড়াতে হবে। যাতে পর্যটকরা পরিবেশ দূষণ হয় এমন গর্হিত কাজ করতে সংকোচবোধ করে। আর পর্যটকদের অসচেতনতা এবং প্লাস্টিক ব্যবহারের ফলে পরিবেশ দূষণ বাড়ছে।
এখান থেকে উত্তরণের জন্য জনসচেতনতা মূলক বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে কর্তৃপক্ষকে। এছাড়াও পর্যটন কেন্দ্রগুলো পর্যাপ্ত পরিবেশবান্ধব হওয়া উচিত। যাতে পর্যটকরা স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ পায়। অপরদিকে কর্তৃপক্ষের সমীচীন হবে পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। অনেক পর্যটন কেন্দ্রে সঠিক রাস্তা, স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটেশন এবং নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেই।
বাংলাদেশের অনেক স্থান আছে যেগুলোর ইতিহাস ও ঐতিহ্য রয়েছে। যেখানে গেলে অতীতের স্মৃতি সমূহ ভেসে ওঠে। তাই বাংলাদেশের মানুষ এই রকম দর্শনীয় স্থানগুলোতে যায়। যাতে তারা প্রাচীন ইতিহাস ও ঐতিহ্য সম্পর্কে অবগত হতে পারে। আবার পর্যটন স্পটে গেলে আমাদের চিত্ত যেমন প্রফুল্ল হয় অন্যদিকে জ্ঞানের তৃষ্ণা ও মেটে সমান তালে।
রবীঠাকুরও বলেছেন, "বিপুলা এ পৃথিবীর কতটুকু জানি, দেশে দেশে কতো না নগর রাজধানী কতো নদী গিরি সিন্দু মরু, কতো না অজানা জীব, কতো না অপরিচিত তরু, রয়ে গেলো অগোচরে"। তবে এখন বাণিজ্যিকীকরণের কারণে অনেক ঐতিহ্যবাহী স্থানের স্বকীয়তা হারানোর ঝুঁকিতে রয়েছে। আমাদের দেশের পর্যটন এলাকাগুলো পরিকল্পিতভাবে হওয়া উচিত। যদি অপরিকল্পিতভাবে হয় তাহলে কোনো নিয়ম ছাড়াই পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে ভিড় বাড়লে সেগুলো ধ্বংস হতে পারে।
পর্যটন এলাকায় প্লাস্টিকের ব্যবহার কমাতে হবে এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সঠিক পরিকল্পনা করতে হবে। আধুনিক রাস্তা, পরিবহন, আবাসন এবং নিরাপত্তার জন্য পর্যাপ্ত বিনিয়োগ করতে হবে। পর্যটকদের মধ্যে পরিবেশ সংরক্ষণ এবং স্থানীয় সংস্কৃতির প্রতি সম্মান বজায় রাখার বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে হবে। পর্যটন খাত উন্নয়নে স্থানীয় মানুষদের সম্পৃক্ত করতে হবে, যাতে তারা এই খাত থেকে সরাসরি লাভবান হতে পারে। পর্যটন খাতের বিকাশে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে, যেখানে পরিবেশ ও সংস্কৃতি উভয়ই রক্ষা পাবে।
আরও পড়ুনপর্যটন খাত শুধু একটি অর্থনৈতিক উৎস নয়, এটি আমাদের একধরনের পরিচয়ও বটে। তাই, এই খাতের যত্ন নেওয়া আমাদের সবার দায়িত্ব। সরকার, স্থানীয় মানুষ এবং পর্যটকদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমরা এই খাতকে টেকসই এবং সমৃদ্ধ করতে পারি। আসুন, আমরা আমাদের দায়িত্ব পালন করি এবং বাংলাদেশের পর্যটন খাতকে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় পর্যটন গন্তব্যে পরিণত করি।
ইমরান ফয়সাল
লেখক : শিক্ষার্থী, ঢাকা কলেজ, ঢাকা
imranfaisal4434@gmail.com
01870-357600
মন্তব্য করুন