ভিডিও শুক্রবার, ১০ জানুয়ারি ২০২৫

ভরা মৌসুমেও চড়া চালের বাজার

ভরা মৌসুমেও চড়া চালের বাজার

শাওন রহমান : চলছে আমনের ভরা মৌসুম। বিদেশ থেকেও চাল আমদানি উন্মুক্ত। ভারত থেকে এরই মধ্যে বেসরকারি পর্যায়ে বিপুল পরিমাণ চাল এসেছে, মায়ানমার থেকেও আসবে। অন্তর্বর্তী সরকার চালের দাম কমাতে আমদানি শুল্কও কমিয়েছে।

অনুকূল আবহাওয়ায় আমনের উৎপাদনও ভালো হয়েছে। সব মিলিয়ে চালের কোনো সংকট নেই। কিন্তু দাম নিয়ন্ত্রণে আসেনি, উল্টো বাজারে বাড়ছে চালের দাম। সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাব মতে, মোটা চালের দাম বেড়েছে এক সপ্তাহে কেজিতে তিন থেকে চার টাকা। আর মাঝারি চালের দাম বেড়েছে কেজিতে দুই টাকা। এই সময়ে সরু চালের দামও বেড়েছে দুই থেকে চার টাকা পর্যন্ত।

বগুড়ার ফতেহ আলী বাজারসহ শহরের বিভিন্ন বাজারের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কাটারিভোগ চাল ৭৪/৭৮ টাকা কেজিতে বিক্রি হলেও তা দাম বেড়ে ৭৬/৮০ টাকা, মিনিকেট চাল ৭৮/৮০ টাকা থেকে বেড়ে ৮০/৮২ টাকা, কেজিতে দুই টাকা পর্যন্ত বেড়ে বিআর-৭৫ চাল ৫২/৫৪, রঞ্জিত ৫৬/৫৭, বিআর-২৮ চাল ৬৫/৬৮, গুটি স্বর্ণা ৫৩/৫৪ টাকায় বেচাকেনা হচ্ছে। গত বছরের এই সময় বগুড়ার বাজারগুলোতে বিআর-২৮ চাল ৫৮/৬০, রঞ্জিত ৫২/৫৩, মিনিকেট চাল ৬৬/৬৮ এবং কাটারিভোগ ৬৮/৭০ টাকায় বিক্রি হয়। এক বছরের ব্যবধানে বিভিন্ন মানের প্রতি কেজি চালে দাম বেড়েছে ১০ থেকে ১৫ টাকা পর্যন্ত।

ফতেহ আলী বাজারের খুচরা চাল ব্যবসায়ী মিন্টু চন্দ্র দাস বলেন, পাইকারি মোকামে প্রতি কেজি চালে দুই থেকে তিন টাকা পর্যন্ত দাম বেড়েছে। আর বস্তা প্রতি বেড়েছে একশ’ টাকা পর্যন্ত। বিশেষ করে সরু ও মোটা চালের দাম আগে বেড়েছে, পরে বেড়েছে মাঝারি চালের দাম।

চাল ব্যবসায়ী রনি ইসলাম বলেন, আমনের ভরা মৌসুমেও বেশি দামে চাল কিনতে হচ্ছে। পাইকারিতে দাম বেশি পড়ায় খুচরাতে দাম বাড়িয়ে বিক্রি করতে হচ্ছে। তিনি অভিযোগ করে বলেন, খুচরা বাজারে কোন সিন্ডিকেট হয় না, সিন্ডিকেট হয় মিল ও পাইকারি পর্যায়ে। বাজারে সরকারের নিয়ন্ত্রণ না থাকা এবং বাজারে তদারকি অভিযান না থাকায় অসাধু ব্যবসায়ীরা সুযোগ নিচ্ছেন।

আরও পড়ুন

বগুড়া সদরের মিল মালিক ইউসুফ আলী বলেন, পাইকারিতে প্রতি কেজি কাটারিভোগ চাল (ভিআইপি) ৭২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা কয়েক দিন আগেও ৬৫/৬৮ টাকায় বিক্রি হয়। আর ভারত থেকে আমদানিকৃত এই চাল দিনাজপুরের হিলি বন্দরে ৬৯/৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

মূলতঃ পুরাতন তথা কাটারিভোগ চালের চাহিদা বেশি থাকা এবং এর বিপরীতে বাজারে যথেষ্ট ধান না থাকায় নতুন পুরাতন সব ধরনের ধানের দাম বেড়ে চালের দামে প্রভাব ফেলেছে। এই মিলার জানান, রঞ্জিত চাল পাইকারিতে প্রতি কেজি ৫৪/৫৬, নতুন বিআর-৪৯ চাল ৫৮/৬০ ও স্বর্ণা-৫ চাল ৫৪/৫৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা আগের চেয়ে দুই থেকে তিন টাকা পর্যন্ত বেশি।

অটো হাসকিং রাইস মিল শেরপুর বগুড়ার সাবেক সভাপতি আব্দুল কুদ্দুস মিল পর্যায়ে চালের দাম এক থেকে দুই টাকা পর্যন্ত বেড়েছে জানিয়ে বলেন, ধানের দাম বাড়ার কারণেই চালের দাম বেড়েছে। কাটারিভোগ ধান আগে ১৫শ’ থেকে ১৬শ’ টাকা মণ দরে বেচাকেনা হলেও বর্তমানে তা দুই হাজার টাকা মণ পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।    
তবে এমন অভিযোগ মানতে নারাজ কৃষি সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, কৃষকের কাছে বিক্রি বা উল্লেখ করার মতো ধান আর নেই। ধান সব মজুদ করেছেন মিলররা। সরকারের বাজার মনিটরিংয়ের দুর্বলতার সুযোগ নিচ্ছেন অসাধু ব্যবসায়ী ও মিল মালিকরা। এমন পরিস্থিতে চালের দাম হঠাৎ বেড়ে যাওয়াটা অস্বাভাবিক মনে করছেন তারা।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকারের মনিটরিং দুর্বলতা ও বাজারে কোন নিয়ন্ত্রণ না থাকায় নানা অজুহাতে মিলাররা বেশি দামে চাল বিক্রি করছেন। অন্তর্বর্তী সরকার দেশকে এগিয়ে নিতে নানামুখি তৎপরতা চালালেও বাজার নিয়ে তেমন কার্যকর কোন পদক্ষেপ নেই। শুল্ক কমিয়ে বাজার নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়, তা এখন দৃশ্যমান। তাই বাজার মনিটরিং জোরদার করতে হবে, না হলে সাধারণ মানুষের দীর্ঘশ্বাস আরও দীর্ঘায়িত হবে।

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

জার্মানিতে পাঁচ লাখের বেশি মানুষ গৃহহীন

থানা থেকে পালানো ওসিকে ধরতে অভিযানে সেনাবাহিনী-পুলিশ-র‌্যাব

এবার ডাইনি রূপে ধরা দিলেন জয়া আহসান!

লস অ্যাঞ্জেলসের দাবানল নিয়ে বাইডেনকে দুষলেন ট্রাম্প

ইউরোপকে বিভক্ত করার চেষ্টা করছেন ট্রাম্প, অভিযোগ জার্মানির

১০ জেলায় মৃদু শৈত্যপ্রবাহ