রেমিট্যান্স প্রবাহে রেকর্ড
দেশের সার্বিক অর্থনীতিতে রেমিট্যান্সের উল্লেখযোগ্য অবদান রয়েছে। ফলে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে গেলে তা যেমন উদ্বেগজনক, তেমনি রেমিট্যান্স বাড়লে সেটি আশাব্যঞ্জক বাস্তবতাকে স্পষ্ট করে। খাত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর প্রবাসীরা আগের থেকে বেশি রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছেন। পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংকের কঠোর তদারকির কারণে অযৌক্তিক আমদানি বন্ধ হয়েছে। রপ্তানি আয় এবং রেমিট্যান্সের ডলার দিয়েই আমদানি দায় পরিশোধ সম্ভব হচ্ছে। তাই পুনরায় রিজার্ভ গঠনে আশার আলো দেখা যাচ্ছে।
দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ প্রবাসী আয় এসেছে ডিসেম্বরে। বিদায়ী বছরের শেষ মাসে ২৬৩ কোটি ৯০ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এ তথ্য পাওয়া গেছে। সম্প্রতি প্রবাসী আয়ের প্রবাহ জোরালো হওয়ার ধারাবাহিকতায় এক মাসে রেকর্ড পরিমাণ রেমিট্যান্স দেশে এলো। এর আগে ২০২০ সালের জুলাই মাসে সর্বোচ্চ পরিমাণ প্রবাসী আয় দেশে এসেছিল। করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে ওই মাসে আসা রেমিট্যান্সের পরিমাণ ছিল ২৫৯ কোটি ডলার।
গত কয়েক মাসে জোরালো আয়ের প্রবাহ এবং বিদেশি ঋণের অর্থ ছাড়ের কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার মোট রিজার্ভ দুই হাজার ৬০০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে গেছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের হিসাব পদ্ধতি বিপিএম ৬ জানুয়ারি। রিজার্ভ ২ হাজার ১৫০ কোটি ডলারে উন্নীত হয়েছে। পাশাপাশি মেয়াদোত্তীর্ণ বিদেশি দায়ের পরিমাণও কমে এসেছে।
আগস্টে নতুন সরকার গঠনের পর প্রতি মাসেই ২০০ কোটি ডলারের বেশি প্রবাসী আয় এসেছে। তবে ডিসেম্বরে আসা ২৬৩ কোটি ৯০ লাখ ডলারের প্রবাসী আয় পুরানো সব রেকর্ড ভেঙেছে। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে প্রবাসী আয় এসেছিল ১৯৯ কোটি ১০ লাখ ডলার। সে হিসাবে গত মাসে প্রবাসী আয়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩২ দশমিক ৩৪ শতাংশ। আর ২০২৩ সালের চেয়ে বিদায়ী বছরে ২৩ শতাংশ বেশি প্রবাসী আয় দেশে এসেছে।
বৈধপথে রেমিট্যান্স আসার পেছনে সচেতনতা কাজ করছে। আবার বৈধপথে ডলারের মূল্য বৃদ্ধিতে হুন্ডি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন তারা। এতে রেমিট্যান্স আসার গতি বাড়ছে। গত দুই বছরে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ব্যাপকভাবে কমে যাওয়া নিয়ে আলোচনা হয়। স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নতুন গভর্নর আহসান এইচ মনসুর রিজার্ভ বাড়বে বলে আশ্বাস দেন। তার বাস্তব প্রতিফল আমরা দেখতে পাচ্ছি।
বাংলাদেশ ব্যাংক ডিসেম্বরের হালনাগাদ যে তথ্য প্রকাশ করে তাতে দেখা যায় সদ্য শেষ হওয়া মাসে যে রেমিট্যান্স এসেছে তা ২০২৩ সালের একই মাসের চেয়ে ৩২ দশমিক ৬৬ শতাংশ বেশি। এ নিয়ে টানা পাঁচমাস বিলিয়নের ওপর রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা।
আরও পড়ুনআর চলতি বছর মার্চ ও এপ্রিল ছাড়া প্রতি মাসে দুই বিলিয়ন ডলারের বেশি পাঠাচ্ছেন প্রবাসীরা। একক মাস ডিসেম্বরে ২ দশমিক ৬৪ বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্সকে অনেকে ব্যাংকের ইতিহাসে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স বলে তথ্য দিচ্ছেন।
রেমিট্যান্সের যে প্রবৃদ্ধি দেখা যাচ্ছে, সেটি নতুন বাংলাদেশের সূচনা। প্রবাসীরা দেশের গণঅভ্যুত্থানকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন। তারা মনে করছেন বাংলাদেশ এখন আমার, এ দেশ গঠনে ভূমিকা রাখতে হবে। প্রবাসীরা মূলত দেশের রাজনৈতিক পরিবর্তনের উৎসবে শামিল হচ্ছেন। প্রবাসীদের এ উৎসাহ ধরে রাখতে হলে সরকারকে কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে।
দেশ যদি সঠিক পথে পরিচালিত হয়, তাহলে প্রবাসীরা বৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠাতে আরও বেশি অনুপ্রাণিত হবেন। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বিমান বন্দরে প্রবাসীদের জন্য সেবার মান বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। প্রবাসীরা যদি তাদের প্রাপ্য সম্মানটুকু পান, তাহলে দেশের রেমিট্যান্স প্রবাহের প্রবৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে। মনে রাখা দরকার, প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স দেশের সামগ্রিক অর্থনীতির জন্যই ইতিবাচক।
ফলে, প্রবাসী আয়ের বিষয়টিকে সামনে রেখে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের পাশাপাশি নতুন নতুন শ্রম বাজার খুঁজে বের করা এবং দক্ষ জনশক্তি নিশ্চিত করা জরুরি। আর সেই লক্ষ্যে বাড়াতে হবে প্রশিক্ষণের পরিধিও।
মন্তব্য করুন