বগুড়ায় মাদককরবারিরা অপ্রতিরোধ্য ঝরে পড়ছে শিক্ষার্থীরা, কিশোর ও যুবা
স্টাফ রিপোর্টার : বগুড়ায় হাত বাড়ালেই মিলছে ইয়াবা, ট্যাপেন্টাডল, মদ, গাঁজা, হেরোইন ও ফেনসিডিলসহ সব ধরণের মাদক। র্যাব, পুলিশ ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অভিযান সত্ত্বেও মাদকের কেনাবেচা থেমে নেই। শহরের ২৫টির বেশি স্পটে মাদকের কারবার চলছে। এছাড়া অনলাইনেও মাদক কেনাবেচা হচ্ছে। মাদকের নেশায় বুঁদ হয়ে পড়েছে কিশোর-যুবা। এমনকি শিক্ষার্থীরও মাদকের নেশায় নীল হয়ে অকালেই ঝরে পড়ছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, শহরের মাদকের প্রধান ঘাঁটি চকসুত্রাপুরের হাড্ডিপট্টি। সেখানে মাদক কেনাবেচা এখন ওপেন সিক্রেট। কাকডাকা ভোর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত গোটা হাড্ডিপট্টিজুড়ে মাদকের কারবার চলে। সেইসাথে মাদক বিক্রেতারা ভ্রাম্যমাণভাবেও রেললাইনের আশেপাশে মাদক কেনাবেচা করে। রেল লাইনের পাশে যেন রীতিমত ‘মাদকের হাট’ বসে। কিন্তু দেখার কেউ নেই। হাড্ডিপট্টিতে সবচেয়ে বেশি চাহিদা ট্যাপেন্টাডল ট্যাবলেটের।
শিশু-কিশোর, যুবা ও শিক্ষার্থীদের হাতে সবচেয়ে বেশি তুলে দেওয়া হচ্ছে এই ট্যাবলেট। এছাড়া ইয়াবা, গাঁজা, ফেনসিডিল, মদ, চোলাই মদ এবং বাংলা মদ বিক্রি হচ্ছে অহরহ। খোঁজ নিয়ে আরও জানা যায়, হাড্ডিপট্টি এলাকায় চিহ্নিত ১৫ জন মাদকের কারবারে জড়িত। এর মধ্যে ১০ জনই নারী। তারা প্রত্যেকই মাদকসহ একাধিকবার ধরাও পড়েছে।
কোন কোন মাদককারবারি ১০ বারের বেশি গ্রেপ্তার হয়েছে। কারো ৮-১০টি করেও মাদক মামলাও রয়েছে। কিন্তু কিছুদিন জেল খেটে আইনের ফাঁকফোঁকর গলিয়ে বের হয়ে এসে ফের পুরোনো পেশায় ফিরে যাচ্ছে তারা। র্যাব, পুলিশ ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সদস্যরা বারবার তাদের গ্রেপ্তারও করছে। কিন্তু মাদককারবারিরা অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছে।
এদিকে খোঁজ নিয়ে আরও জানা যায়, হাড্ডিপট্টি ছাড়াও সেউজগাড়ী এলাকায় তিনটি স্পটে ইয়াবা, ট্যাপেন্টাডল ট্যাবলেট, ফেনসিডিল ও গাঁজা বিক্রি হচ্ছে। একই সাথে সেউজগাড়ী রেলওয়ে মাঠের কাছে আরও একটি স্পটে ইয়াবা ও গাঁজা বিক্রি হয়।
তবে সেউজগাড়ীসহ বগুড়া পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডে মাদক নির্মূল করতে মাঠে নেমেছেন স্থানীয় সাবেক কাউন্সিলর এরশাদুল বারী এরশাদ। ইতোমধ্যে তিনি কয়েকটি মাদক আস্তানা গুড়িয়ে দিয়েছেন। সেইসাথে মাদকসহ কয়েকজন কারবারিকে আটক করে যৌথ বাহিনীর কাছে সোপর্দ করেছেন। এদিকে স্টেশন সড়কে বগুড়া মোটর শ্রমিক ইউনিয়ন কার্যালয়ের পিছনে স্ইুপার পট্টির আশেপাশে মাদকের রমরমা বাণিজ্য চলে। সেখানে চোলাই মদ ও গাঁজার কারবার বেশি হচ্ছে।
আরও পড়ুনসেখানে তিনটি স্পট ছাড়াও ভ্রাম্যমাণভাবে এসব মাদক বিক্রি হয়ে থাকে। সেই ভোর থেকে রাতভর সেখানে মাদক কেনাবেচা হয়। এছাড়া পুরান বগুড়ায় দু’টি স্পটে, উত্তর চেলোপাড়ায় দু’টি, সুলতানগঞ্জ পাড়ায় একটি, ঘোনপাড়ায় একটি, বাদুড়তলায় একটি, কাটনারপাড়ায় একটি, বৃন্দাবনপাড়ায় একটি, ফুলবাড়িতে দু’টি, মালগ্রামে একটি ও নারুলিতে একটি স্পটে ইয়াবা, ট্যাপেন্টাডল ট্যাবেলট, গাঁজাসহ বিভিন্ন স্থানে সব ধরণের মাদকদ্রব্য বিক্রি হচ্ছে।
স্পটগুলো ছাড়াও অনলাইনে বিভিন্ন ধরণের মাদক কেনাবেচা হচ্ছে। মুঠোফোনে অর্ডার পাওয়ার সাথে সাথে কারবারিরা বাড়ি গিয়ে সেবনকারীদের কাছে মাদক পৌঁছে দিচ্ছে। মোটরসাইকেলে করে ভ্রাম্যমাণভাবেও ইয়াবা, ট্যাপেন্টাডল ট্যাবলেট, গাঁজা ও হেরোইন পৌঁছে দেওয়া হয়ে থাকে। শুধু শহরেই নয়, গ্রামে গ্রামে হানা দিয়েছে মাদক। বগুড়া সদর ছাড়াও শাজাহানপুর, কাহালু, নন্দীগ্রাম, আদমদিঘী, দুপচাঁচিয়া, শিবগঞ্জ, গাবতলী, সোনাতলা, সারিয়াকান্দি, শেরপুর ও ধুনট উপজেলার গ্রামে-গ্রামে, বন্দরে-বন্দরে মাদকের রমরমা বাণিজ্য চলছে। পাশাপাশি বাড়ছে মাদকসেবীর সংখ্যাও।
বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মিডিয়া ও ট্রাফিক) সুমন রঞ্জন সরকার বলেন, মাদককারবারিদের বিরুদ্ধে পুলিশের অভিযান জোরদার করা হয়েছে। সেইসাথে মাদকের বিরুদ্ধে যৌথ বাহিনীর অভিযান চলমান রয়েছে। মাদক নির্মূলে জনগণের সহযোগিতা প্রয়োজন। জনগণের সহযোগিতা পেলে পুলিশের মাদকবিরোধী অভিযানের গতি আরও বাড়বে।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর বগুড়া কার্যালয়ের উপ-পরিচালক রাজিউর রহমান বলেন, মাদক নির্মূলে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করা হয়েছে। মাদক বিক্রেতা ও সেবনকারীদের বিরুদ্ধে তাদের অভিযান চলছে। প্রায়ই মাদকসহ কারবারিদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।
মন্তব্য করুন