দিগন্ত জোড়া মাঠে সরিষার হলুদ ফুলে রঙিন স্বপ্ন বুনছেন হিলির কৃষকরা
হাকিমপুর (দিনাজপুর) প্রতিনিধি : খাদ্য শস্যের ভান্ডার হিসেবে পরিচিত দেশের উত্তরের জনপদ দিনাজপুরের সীমান্তবর্তী হাকিমপুর হিলি উপজেলার দিগন্ত জোড়া মাঠ সরিষার হলুদ ফুলে ছেয়ে গেছে। পৌষের শেষে মাঘের হিমেল বাতাসে দোল খাচ্ছে হলুদ সরিষার ফুল। সরিষা ফুলের হলুদ রাজ্যে মৌমাছির গুঞ্জনে মুখরিত মাঠ। স্থানীয় কৃষি অফিসের সহায়তায় বাম্পার ফলনের হাত ছানিতে কৃষকের চোখে মুখে ফুটে উঠেছে আনন্দের হাসি। যেন সরিষার হলুদ হাসিতে স্বপ্ন দেখছে এখানকার কৃষকরা।
স্থানীয় উপজেলা কৃষি অধিদপ্তরের তথ্য মতে, চলতি রবি মৌসুমে হাকিমপুর উপজেলার একটি পৌরসভা ও তিনটি ইউনিয়নে ২,৬৪২ (দুই হাজার ছয়শ’ বিয়াল্লিশ) হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের সরিষা চাষ হয়েছে। কৃষকের শারীরিক পরিশ্রম ও নিবিড় পরিচর্যায়, বেড়ে ওঠা গাছ আর ফুল দেখে বেশি ফলনের স্বপ্ন দেখছেন উপজেলার কৃষকরা। বাজারে সয়াবিন ও সরিষা তেলের দাম বৃদ্ধি ও গতবছর স্থানীয় বাজারে সরিষার দাম ভালো পাওয়ায় কৃষকরা এবারও সরিষা চাষে বেশি আগ্রহী হয়ে পড়েছে। গত দুই বছরের তুলনায় এবার উপজেলায় সরিষার আবাদ হয়েছে প্রায় দ্বিগুণ।
উপজেলার আলিহাট ইউনিয়নের কোকতাড়া গ্রামের একজন কৃষক জানান, আমন ধান কাটার পর তিন মাস জমি ফেলে না রেখে পরিশ্রম করে জমি তৈরি করে সরিষা বীজ বপন করা হয়েছে। বীজ লাগানোর ৬০ থেকে ৭০ দিনের মাথায় সরিষা ফসল ঘরে আসে।
হাকিমপুর হিলি পৌরসভার, ছাতনী গ্রামের সরিষা চাষি মাসুদ হাসান বলেন, আমন ধান কাটার পর জমিগুলো পড়ে থাকে তাই প্রতিবছর আমার জমিগুলোতে সরিষা চাষ করি। এবারও সরিষা চাষ করেছি। গাছ অনেক ভালো হয়েছে আশা করছি ফলনও অনেক ভালো হবে।
আরও পড়ুনউপজেলার বোয়ালদাড় ইউনিয়নের বিশাপাড়া গ্রামের কৃষক আলম হোসেন বলেন, আমন কাটার পর সরিষা চাষ করলে আমাদের অনেক উপকার হয়। কারণ সরিষা কাটাই-মাড়াই করে সরিষা বিক্রয় করি এবং সরিষার অবশিষ্ট জ্বালানি হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহার করতে পারি। আবার সরিষা বিক্রির টাকা দিয়ে বোরো ধান লাগায়। এটা আমাদের একটা বোনাস ফসল।
হাকিমপুর উপজেলা কৃষি অফিসার মোছা. আরজেনা বেগম জানান, উপজেলায় এবার সরিষার চাষ বৃদ্ধি পেয়েছে। গত ২০২১ সালে এই উপজেলায় ৮২০ হেক্টর জমিতে সরিষার চাষ হয়। গত বছর ২০২৩ সালে উপজেলায় সরিষার চাষ হয়েছে ২ হাজার ৪শ’ হেক্টর জমিতে। এবারে চলতি মৌসুমে উপজেলায় ২ হাজার ৬৪২ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ হয়েছে।
সরিষার চাষ বৃদ্ধির লক্ষ্যে ইতোমধ্যে ২ হাজার কৃষকের মাঝে বিনামূল্যে ডিএপি, পটাশ ২০ কেজি ও ১ কেজি করে বীজ বিতরণ করেছি। মাঠ পর্যায়ে সরিষা চাষিদের সার্বক্ষনিক পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি আমরা। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এবারে রবি মৌসুমে উপজেলার সরিষা চাষিরা বাম্পার ফলন পাবে বলে আমরা আশাবাদী।
মন্তব্য করুন