দিনাজপুরের বোচাগঞ্জে গরুর পরিবর্তে কাঠের ঘাঁনি টানছে মোটরসাইকেল
বোচাগঞ্জ (দিনাজপুর) প্রতিনিধি : গ্রাম বাংলায় এক সময় গরু বা মহিষ দিয়ে কাঠের ঘানি টানিয়ে কলু সম্প্রদায় সরিষা থেকে তেল উৎপাদন করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। কিন্তু কালের আবর্তে দেশের প্রায় সব অঞ্চল থেকেই হারিয়ে গেছে গরু-মহিষের সাহায্যে ঘানি দিয়ে নিংড়ানো সরিষার তেল।
বর্তমানে আধুনিক যন্ত্রপাতি বিশেষ করে ইলেক্ট্রিক মোটর চালিত ঘানি দিয়ে সরিয়ার তেল উৎপাদন করা হয়ে থাকে। আশ্চর্যজনক হলেও সত্য দিনাজপুরের বোচাগঞ্জে গরু-মহিষের পরিবর্তে বর্তমানে মোটরসাইকেল দ্বারা ঘানি ঘুরিয়ে উৎপাদন করা হচ্ছে।
বর্তমানে আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে সরিষার তেল উৎপাদনের ফলে গ্রামবাংলার শত বছরের ঐতিহ্য হারিয়ে যাওয়ায় কলু সম্প্রদায়ের লোকজন তাদের পৈর্তৃক পেশা পরিবর্তন করে বাধ্য হয়ে অন্য পেশায় ধাবিত হচ্ছেন। তার পরেও বংশ পরম্পরায় পূর্ব পুরুষের পেশা টিকিয়ে রেখেছে দিনাজপুরের বোচাগঞ্জ উপজেলার চারটি পরিবার। এরই মধ্যে দুই পরিবার গরু ছেড়ে দিয়ে 'যান্ত্রিক (মোটরসাইকেল ও অটোরিকশা) দিয়ে ঘানিতে সরিষার তেল উৎপাদন করে পেশা কে ধরে রেখেছেন।
বর্তমানে তেল উৎপাদন হয় লোহার ঢ়ানির সাহায্যে। আর এতে সরিষার তেলের বাজার দখল করে নেওয়ায় ঘানির সরিষার তেলের স্বাদ পাচ্ছেন না সাধারণ মানুষ। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলার এক নম্বর নাফানগর ইউনিয়নের ছোট সুলতানপুর গ্রামের ৩ জন ও রণগাঁও ইউনিয়নের কনুয়া গ্রামে একজন কাঠের ঘানিতে সরিষার তেল উৎপাদন করছেন।
আরও পড়ুনতবে স্থাপন করা হয়েছে গরু ও মহিষের পরিবর্তে যান্ত্রিক মোটরসাইকেল ও অটো রিক্সা। সরেজমিনে দুই পরিবারের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় ব্যাটারিচালিত মোটরসাইকেল ও অটোরিকশা চালিত ঘানির শব্দ। তেল উৎপাদনকারী পরিবারগুলো বলছে, গরু দিয়ে ঘানির তেল উৎপাদন করলে ঘানির সঙ্গে একজন মানুষকে সারাক্ষণ সময় দিতে হয়। এ ছাড়া গরু দিয়ে চালিত ঘানিতে সরিষর তেল উৎপাদন করতে হলে গরুর চোখ ঢেকে রাখতে হয়। যা পরিবারের লোকজন এটা পছন্দ করেন না।
তবে অনেকেই লাভ-ক্ষতির হিসেব না কষে সন্ধান করেন শতভাগ বিশুদ্ধ কাঠের ঘানির সরিষার তেল। ছোট সুলতানপুর গ্রামের বিষ্ণু পদ রায় বলেন, ত্রিশ বছর যাবৎ কাঠের ঘানিতে তেল উৎপাদন করছেন তিনি। এর আগে তার বাবা, তারও আগে তার দাদাও কাঠের ঘানিতে গরু-মহিষ দিয়ে তেল উৎপাদন করতেন। বর্তমানে মোটসাইকেল দিয়ে ঘানিতে তেল উৎপাদন করছেন। গরু’র সাহায্যে ঘানি টানলে সময় বেশি লাগে। এছাড়া একজন মানুষকে সব সময় তদারকি করতে হতো।
এ কারণে মোটরসাইকেল দিয়ে কাঠের ঘানিতে তেল উৎপাদন করছেন তিনি। একই গ্রামের বিজেন্দ্রনাথ বলেন, 'আইয়ুব খানের শাসনামল থেকে তার বাবা ঘানিতে সরিষার তেল উৎপাদন করতেন। তার বাবার মৃত্যুর পর দু-চার বছর পরে তিমি এই ব্যবসা শুরু করেন। তাদের এই চারটি পরিবারের যান্ত্রিক কাঠের মাড়াইকৃত খাঁটি সরিষার তেল দিনাজপুর জেলা সহ দেশের বিভিন্ন জেলায় যাচ্ছে।
মন্তব্য করুন