ভিডিও সোমবার, ২০ জানুয়ারি ২০২৫

নদীর স্নিগ্ধজলে পাখির মায়াবী কুহুতান

নদীর স্নিগ্ধজলে পাখির মায়াবী কুহুতান। ছবি : দৈনিক করতোয়া

নওগাঁ প্রতিনিধি : নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলা সদর থেকে এক কিলোমিটার দূরে কুঞ্জবন গ্রাম। এ গ্রামের পূর্বপাশ দিয়ে বয়ে গেছে আত্রাই নদী। এ নদীর দু’পাড়ের সড়ক আর সড়কের পাশে অসংখ্য গাছ। বয়ে যাওয়া নদীর স্বচ্ছ পানিতে পরিযায়ী পাখির কলকাকলিতে মুখর হয়ে থাকে চারপাশ।

শীতের শুরু থেকেই অসংখ্য পরিযায়ী পাখি এসে আবাস গড়েছে আত্রাই নদীর তীরের পুরো কুঞ্জবন এলাকা জুড়ে। পরিযায়ী পাখির কিচিরমিচির শব্দে এখন ঘুম ভাঙে নদীর দু’পারের বসবাসকারী মানুষদের। নিরাপদে পাখিগুলোর বসবাসের জন্য আবাস করে দিতে উদ্যোগ নিয়েছে স্থানীয় সামাজিক সংগঠন।

স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, প্রায় ১১ বছর থেকে নওগাঁর মহাদেবপুরের আত্রাই নদীর কুঞ্জবন এলাকা জুড়ে অতিথি পাখি আসছে শীত মৌসুমে। শীতপ্রধান দেশ থেকে নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য পরিযায়ী পাখিরা এসে কুঞ্জবনের নদীতে আশ্রয় নেয়।

শীতের শুরুতে আসতে থাকে পাখি। নদীতে বছরের ৪ থেকে ৫ মাস পাখিগুলো থাকে। সারাদিন নদীতে থাকলেও রাতে পাখিগুলো ফিরে যায় পাশের রামচন্দ্রপুর, মধুবনসহ কয়েকটি স্থানের গাছে। ভোরে আবারও ফিরে আসে আত্রাই নদীতে। প্রতিদিনই পরিযায়ী এসব পাখি দেখতে আসে দূর-দূরান্ত থেকে নানা বয়সী দর্শনার্থীরা।

পাখি দেখতে নওগাঁ শহরের তাজের মোড় থেকে এসেছেন সারোয়ার হোসেন দম্পতি। কথা হলে সারোয়ার বলেন, আত্রাই নদীতে পাখির কলরবে পুরো কুঞ্জবন এলাকা যেন মুখরিত হয়ে গেছে। এখানে এসে আমাদের খুব ভালো লাগছে। পাখিগুলোতে কেউ যেন বিরক্ত না করে সেদিকে প্রশাসনের খেয়াল রাখতে হবে।

নওগাঁ শহরের চকদেবপাড়া থেকে এসেছেন সজিব হোসেন। সজিব বলেন, প্রতিবছর এখানে অনেক পরিযায়ী পাখির সমাগম ঘটে বলে জানতে পেরে এসেছি। এতগুলো পাখি একসাথে কখনো দেখিনি। খুব ভালো লাগছে এখানে এসে। তবে নদীতে ড্রেসার মেশিন নামিয়ে বা কেউ যাতে পাখিগুলোতে শিকার না করে দেদিকে দৃষ্টি রাখতে হবে কর্তৃপক্ষের।

আরও পড়ুন

স্থানীয় বিচিত্র পাখি উৎপাদন গবেষণা পরিষদ নামের সামাজিক সংগঠনের পরিচালক মুনসুর সরকার বলেন, পরিযায়ী পাখিদের নিরাপদ অবস্থানের জন্য নদীর পানিতে বেশ কিছু বাঁশ দিয়ে ঘের তৈরি করে দেয়া হয়েছে। ঝাঁকে ঝাঁকে পাখি উড়ে এসে পানিতে পড়ছে। কেউ গা ভাসিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। কেউ গা পরিস্কার করছে। আবার কেউ বাঁশের ওপর বসে আরাম করছে।

তিনি আরও বলেন, চলতি শীত মৌসুমে বালিহাঁস, সরালি হাঁস, পানকৌড়ি, রাতচোরাসহ প্রায় ১৫ প্রজাতির পরিযায়ী পাখির বিচরণ ঘটেছে আত্রাই নদীতে। এছাড়া পিয়াং হাঁস, পাতি সরালি, লেঙজাহাঁস, বালিহাঁস, পাতিকুট, শামুকখোল, পানকৌড়ি, ছন্নি হাঁসসহ প্রায় ১২ জাতের দেশি পাখির সমাগম ঘটেছে। কেউ পাখি শিকার বা মাছ শিকার করতে গিয়ে পাখিদের বিরক্ত না করে সেজন্য আমরা কাজ করছি।

মাঝে মাঝেই আমরা মাইকিং করে জনসাধরণকে সতর্ক করছি। সরকারি উদ্যোগ নিয়ে এখানে পাখিদের নিরাপদ আবাসস্থল হতে পারে। মহাদেবপুর উপজেলার সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা শিল্পী রায় বলেন, আত্রাই নদীতে যেসব স্থানে পাখিদের অবাধ বিচরণ আছে।

সেই সব স্থানে যাতে কেউ নৌকা দিয়ে মাছ শিকার করার কারণে পাখিদের অবাধ বিচরণে বাধাগ্রস্ত না হয় এবং কেউ যেন পাখি শিকার করতে না পারে সে বিষয়ে মৎস্য অফিসের পক্ষ থেকে নজরদারি রয়েছে। এছাড়া কেউ যদি পাখি শিকার করে আমরা জানতে পারলে বনবিভাগের সাথে সমন্বয় করে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। স্থানীয় সামাজিক সংগঠনগুলোও পাখির অবাধ বিচরণে কাজ করে যাচ্ছে।

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

দুর্গাপুরে ইউএনওর হস্তক্ষেপে বন্ধ হলো বাল্যবিবাহ

মাদারীপুরে বোমার আঘাতে পা উড়ে যাওয়া যুবকের মৃত্যু

ব্রহ্মপুত্র নদে নাব্যতা সংকট চিলমারী-রৌমারী রুটে এক মাস যাবত ফেরি চলাচল বন্ধ

কোটায় উত্তীর্ণ ১৯৩ জনের ফলাফল স্থগিত

চাঁদাবাজির সময় শিক্ষার্থীদের হাতে ধরা, ২ পুলিশ সদস্য বরখাস্ত

বগুড়ার শেরপুরে হেরোইনসহ মাদক ব্যবসায়ী গ্রেপ্তার