মাদকের বিরুদ্ধে লড়াই চলছেই
![](https://dailykaratoa.com/public/images/2025-02/23_original_1738775120.jpg)
মাদক নিয়ে সমাজ ভীষণ উদ্বিগ্ন। কিন্তু যথাযথ কর্তৃপক্ষের উদ্বেগ যদি যথাযথ হতো, তাহলে এতদিনে এ সমস্যার সম্পূর্ণ সমাধান না হলেও উদ্বেগের অবসান ঘটত। কোথাও কোনো ঘাটতি নিশ্চয়ই রয়েছে। ফলে গণমাধ্যমের প্রতিবেদন, সেমিনার-আলোচনা, প্রতিরোধমূলক সাংস্কৃতিক প্রচারণা, সামাজিক-উন্নয়ন প্রতিষ্ঠানের সুপারিশ এবং পুলিশ ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অভিযানের পরও মাদকের বিস্তৃতি বাড়ছে। সমাজের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা আরো বাড়ছে।
জনমনে প্রশ্ন দেখা দিচ্ছে। পতিত ফ্যাসিবাদি আওয়ামী সরকারের আমলে তাদের রাজনৈতিক নেতা -কর্মী, এই মাদক ব্যবসাকে সারা দেশে ছড়িয়ে দিয়েছে। ছোট-বড় নেতা, থেকে শুরু করে কক্সবাজারের ইয়াবা সম্রাট এক আওয়ামী নেতার তত্ত্বাবধানে দেশে মাদক সাম্রাজ্য গড়ে তোলা হয়। উক্ত আওয়ামী নেতার সরাসরি নিয়ন্ত্রণে ছিল মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে আসা ইয়াবা, ফেনসিডিল সহ নানা জাতের মাদকদ্রব্য। ফ্যাসিস্ট সরকার উৎখাত হলেও তাদের তৈরি করা সিন্ডিকেট নির্মূল হয়নি বরং তা অক্ষত রয়েছে। ব্যবসা আগের মতোই চালু আছে। নেতারা পলায়ন করলেও তাদের সিন্ডিকেট আগের মতোই মাদক ব্যবসা করে যাচ্ছে।
সব দেশেই কিছু দ্রব্য নেশার উপকরণ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। সবই ‘মাদক বা ড্রাগ’ হিসেবে চিহ্নিত নয়, যদিও বয়স গোষ্ঠীভেদে এসবের ব্যবহারে সতর্কতার নীতি মান্য করা হয়। বয়:ক্রমিক বিধি নিষেধও থাকে। নীতি-বিধি না মানলে নিন্দা সমালোচনার মুখে পড়তে হয়। পত্র-পত্রিকার খবরে বলা হয় পতিত ফ্যাসিবাদি সরকারের আমলে শীর্ষ পর্যায়ের দশ গডফাদারের নিয়ন্ত্রণে থেকে ৬৩ জন মাদক কারবারি দেশে ইয়াবাসহ বিভিন্ন মাদকদ্রব্য ছড়িয়ে দিচ্ছেন বলে তথ্য পেয়েছে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা। তাদের বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন থানায় মাদক সংক্রান্ত ১০টি মামলা করা হয়েছে। তারা মাদক কারবার করে কোটি কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ গড়েছেন।
কক্সবাজার, টেকনাফ, উখিয়া, চট্টগ্রামসহ মিয়ানমার সীমান্ত এলাকা থেকে প্রতিদিন হাজার হাজার পিস ইয়াবা আসছে রাজধানীসহ সারা দেশে। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন আসে এত সংখ্যক ইয়াবা কীভাবে দেশের অভ্যন্তরে আসছে? ভারত থেকে সীমান্ত গলিয়ে আসে ফেনসিডিল, গাঁজা, আফিমসহ অন্যান্য মাদকদ্রব্য। বিগত পতিত সরকারের প্রভাবশালী ব্যক্তিরা এসব মাদকদ্রব্যের ব্যবসার সাথে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত ছিল। যখন একটি দেশে ইয়াবার চালান রাজধানীতে আসে পাজেরোর মতো বিলাসবহুল গাড়িতে।
আরও পড়ুনতখন তার চেয়ে আতঙ্কজনক পরিস্থিতি আর কী হতে পারে। এমনকি পরিবহণের ঝুঁকি এড়াতে পতিত আওয়ামী সরকারের আমলে কোনো কোনো কারবারি রাজধানী ও চট্টগ্রামে ইয়াবা তৈরির কারখানা পর্যন্ত স্থাপন করার দু:সাহস দেখিয়েছে। আর যখন এভাবে ইয়াবাচক্র তাদের তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছিল, তার ফলে যে তৎকালীন প্রশাসনের দুর্বলতাই প্রকাশ পেয়েছিল তা বলার অপেক্ষা রাখে না। অথচ এটা কোনোভাবেই প্রত্যাশিত ছিল না।
উল্লেখ্য, প্রথমদিকে ইয়াবাকে তেমন গুরুত্ব না দিয়ে বলা হয়েছিল এটি বড় লোকের নেশা। সময়ের ব্যবধানে এ রাজকীয় নেশা এখন মধ্যবিত্ত এমনকি নিম্ন বিত্তকেও পেয়ে বসেছে। শুধু রাজধানীতে নয়- সারাদেশেই ছড়িয়ে পড়েছে এর বিস্তার। একটি দেশের যুব সমাজ তথা মেধাবী প্রজন্ম যদি নেশার খপ্পরে পড়ে তার আগামী দিন কতটা ভয়ঙ্কর হতে পারে তা সহজেই অনুমেয়। আমরা বলতে চাই মাদকচক্রের গডফাদারদের আইনের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করুন। এ ভয়াবহ আগ্রাসন ঠেকাতে আরও কোশলী ও কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
মন্তব্য করুন