বগুড়া জিলা স্কুলের ১৮টি গাছ নামমাত্র মূল্যে বিক্রি ও কর্তন

স্টাফ রিপোর্টার : দেড় শতাধিক বছরের পুরানো ঐতিহ্যবাহী বগুড়া জিলা স্কুলের প্রধান ফটক নতুন রূপে নির্মাণের অজুহাতে ১৮টি গাছ কাটা হয়েছে। প্রকাশ্য নিলামে এসব গাছের নামমাত্র বিক্রিমূল্য দেখানো হয়েছে। ১১টি মেহগনিসহ ১৮টি গাছ বিক্রি করা হয়েছে ৩৩ হাজার ৫০০ টাকায়। এর আগে নতুন একাডেমিক ভবন নির্মাণের অজুহাতে ৫৫টি গাছ ১ লাখ ১৫ হাজার টাকায় প্রকাশ্য নিলামে বিক্রি করে দেওয়া হয়।
শহরের জিরোপয়েন্ট সংলগ্ন বিদ্যালয়ের পুরোনো ফটকের জায়গায় নতুন করে অত্যাধুনিক ফটক নির্মাণের তোড়জোড় চলছে। এর আগে ৯ ফেব্রুয়ারি ওই ১৮টি গাছ কাটা শুরু করে কর্তৃপক্ষ। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কাটা গাছগুলোর মধ্যে রয়েছে মিনজিরি ১টি, মেহগনি ১১ টি, পাম ট্রি ২টি, বকুল ১টি, লম্বু ২টি ও ১টি দেবদারু গাছ কেটে ফেলছেন নিলামে নেয়া ঠিকাদার।
সূত্র জানিয়েছে, চলতি বছরের ২৯ জানুয়ারি প্রকাশ্য ডাকে পানির দরে ৩৩ হাজার ৫০০ টাকায় গাছগুলো কিনে নেন তোফায়েল আহমেদ নামের একজন ঠিকাদার। তার কাছ থেকে সেখানেই ৫০ হাজার টাকার বিনিময়ে রানা মিয়া নামে একজন ব্যক্তি আবার গাছগুলি কিনে নেন। বগুড়া জিলা স্কুল সূত্রে জানা যায়, বিদ্যালয়ের প্রধান ফটক নির্মাণে ৩০ লাখ টাকা ব্যয় করছে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর। ফটক নির্মাণের জন্য ইতিমধ্যে ঠিকাদারকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে। নতুন করে ফটক নির্মাণ ও ফটকের দুই পাশে সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর স্থান নির্ধারণ চূড়ান্ত করেছে।
শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের পছন্দের জায়গায় ফটক নির্মাণে ১৮টি গাছ কেটে ফেলার সিদ্ধান্ত হয়েছে। গত ১৮ ডিসেম্বরে বগুড়া জেলা প্রশাসকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় এসব গাছ প্রকাশ্য নিলামে বিক্রির সিদ্ধান্ত হয়। ২৯ জানুয়ারি নিলাম অনুষ্ঠিত হয়।
বগুড়া জিলা স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ড্যানিয়েল তাহের বলেন, বিদ্যালয়ের প্রধান ফটক নির্মাণের জন্য শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর ১৮টি গাছ কাটার সুপারিশ করে। সে অনুযায়ী বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদে গাছ কাটার সিদ্ধান্ত হয়। গাছের মূল্য নির্ধারণে বন বিভাগকে চিঠি দেওয়া হয়। বন বিভাগ ১৮টি গাছের মূল্য ৩০ হাজার টাকা নির্ধারণ করে প্রতিবেদন দেয়। এরপর সাতদিন ধরে জেলা প্রশাসন এবং শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে গাছগুলো বিক্রির জন্য নিলাম বিজ্ঞপ্তির প্রকাশ করা হয়।
আরও পড়ুনএর নয়দিন পর প্রকাশ্য নিলামে সর্বোচ্চ ৩৩ হাজার ৫০০ টাকা ডাক ওঠায় তা সর্বসম্মতিক্রমে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। ৩৩ হাজার ৫শ’ টাকার সঙ্গে ভ্যাট ধরে ৩৫ হাজার ৫০০ টাকা তারা জমা দেয়। এর আগে যে ৫৫টি গাছ কাটা হয়েছে, সে সময় তিনি দায়িত্বে ছিলেন না তাই ওই বিষয়ে কিছু বলতে পারবেন না বলে জানান।
শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর বগুড়ার সহকারী প্রকৌশলী মো. আল আমিন বলেন, জিলা স্কুলের প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের মধ্যে যারা প্রকৌশলী তাদের নকশা করা ডিজাইনে কয়েক কোটি টাকা ব্যয়ে বগুড়া জিলা স্কুলে ৬ তলা বিশিষ্ট নতুন একাডেমিক ভবনের নির্মাণকাজ চলছে। এ ছাড়া ৩০ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রধান ফটক ও পকেট গেট নির্মাণ করা হবে। এসব উন্নয়ন কাজের জন্য বেশ কিছু গাছ কাটতে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ উদ্যোগ নিয়েছে।
ওই স্কুলের পরিচালনা পর্ষদের অন্যতম সদস্য এবং জেলা শিক্ষা অফিসার রমজান আলী আকন্দ বলেন, তিনি বিষয়টি সম্পর্কে তেমন কিছু জানেন না। আমাকে স্কুল থেকে কোন কিছু জানানো হয়নি। আমি একসময় এই স্কুলের প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেছি। গাছগুলো নিয়ম বর্হিভূতভাবে, নাকি নিয়মের মধ্যে কাটা হয়েছে সে বিষয়েও কিছু জানেন না।
মন্তব্য করুন