ভিডিও শনিবার, ০১ মার্চ ২০২৫

পাচার করা অর্থ ফেরাতে হবে

পাচার করা অর্থ ফেরাতে হবে

অর্থ পাচারের ঘটনা একটি বড় ধরনের অপরাধ। এ জন্য শাস্তির বিধান আছে, অর্থপাচার বন্ধে বিভিন্ন সময়ে নানা ধরনের উদ্যোগও গ্রহণ করা হয়েছে। তদুপরি বারবার অর্থপাচারের বিষয়টি আলোচনায় এসেছে। ফলে বিগত ফ্যাসিবাদি আওয়ামী সরকারের আমলে অর্থপাচারের ঘটনা জাতিকে স্থম্ভিত করেছে।

সুশাসনের গুরুত্বপূর্ণ একটি দিক হচ্ছে দুর্নীতিমুক্ত অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা। বিগত ১৫ বছরে এই অর্থ ব্যবস্থাপনা নজিরবিহীন দুর্নীতিতে ডুবেছিল। দেশ থেকে প্রতিবছর ১২ থেকে ১৫ বিলিয়ন ডলারের সমপরিমাণ অর্থ পাচার হয়ে গেছে।

এর আগে সংবাদমাধ্যমের সূত্রে এই পাচারের নানা তথ্য দেশবাসী জানতে পারে। পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রতিবছর পাচার হওয়া অর্থের পরিমাণ ১ লাখ ৪৪ হাজার কোটি টাকা থেকে ১ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা। টিআইবির এই তথ্যকে যদি ১৫-১৬ বছরের সময় পরিসরে বিবেচনা করা হয়, তাহলে পাচার হওয়া অর্থের পরিমাণ দাঁড়ায় ২১ লাখ ৬০ হাজার কোটি থেকে ২৭ লাখ কোটি টাকা।

লুটপাটের মাধ্যমে ব্যাংক ডাকাতির সঙ্গে জড়িতদের খুব দ্রুত আইনের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করতে কেন্দ্রিয় ব্যাংকের গভর্নরসহ সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। গত রবিবার প্রধান উপদেষ্টা তার কার্যালয়ে ‘বাংলাদেশের অর্থনীতি: সাম্প্রতিক চ্যালেঞ্জ এবং ভবিষ্যত করণীয়’  বিষয়ক এক সভায় এই নির্দেশ দেন। পরে রাজধানীর হেয়ার রোডে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক ব্রিফিংয়ে এ কথা জানান প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব শফিকুল আলম।

প্রেসসচিব বলেন, যারা ব্যাংক ডাকাতির সঙ্গে জড়িত, যাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আছে, তাদেরকে দ্রুত আইনের আওতায় আনার কথা বলছেন প্রধান উপদেষ্টা। অধ্যাপক ইউনূস বলেছেন তারা যেন আইনের আওতার বাইরে না থাকে। যে করেই হোক তাদেরকে আইনের আওতায় আনতে হবে। আমরাও প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যের সঙ্গে একমত পোষণ করি এবং অন্তর্বর্তী সরকারের এ ব্যাপারে জোরালো ভূমিকার প্রশংসা করি।

আরও পড়ুন

কিছু দিন আগে ব্যাংক থেকে অর্থ পাচারের তথ্য দিয়েছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর। ব্রিটিশ গণমাধ্যম ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে তিনি বলেছিলেন, শুধু ব্যাংক খাত থেকে পাচার হওয়া অর্থের পরিমাণ ১৭ বিলিয়ন বা ১ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। সাবেক প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশের একটি সরকারি সংস্থার কিছু সদস্যের সঙ্গে যোগসাজশ করে এই অর্থ দেশ থেকে পাচার করেছেন।

বাংলাদেশে দুষ্টচক্র বা সিন্ডিকেট বাজার থেকে শুরু করে ব্যাংকসহ সব প্রতিষ্ঠানে আছে। এই দুষ্টচক্র কিন্তু একা কাজ করে না। তারা যোগসাজশে কাজ করে। বাংলাদেশকে যদি দুর্নীতিমুক্ত করতে হয় তাহলে এই দুষ্টচক্রকে বিতাড়িত করতে হবে। যারা আমাদের সমাজে দুর্নীতি করে তাদের আমাদের বয়কট করা উচিত। এই দুর্নীতিবাজদের কোনো সামাজিক অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ করা যাবে না।পাচারের এ বিষয়টি শুধু বাংলাদেশে নয়, বৈশ্বিকভাবেও বিস্তৃতি পেয়েছে।

বিশ্বের বেশ কিছু দেশ আছে, যারা অর্থ পাচার করে তাদের দেশে নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে  উৎসাহ দিয়ে থাকে। অর্থের উৎস সম্পর্কে প্রশ্ন তোলে না। পাচার করা অর্থ ফেরতও দেয় না। বাংলাদেশের অনেকেই সহজে অভিবাসনের সুবিধা পাওয়া, সম্পদ পুঞ্জীভূত করা এবং ব্যবসায়িক স্বার্থে সেসব দেশে অর্থ পাচার করেছেন। অর্থ পাচারে সহযোগিতার জন্য বিভিন্ন দেশে সিন্ডিকেটও রয়েছে। আমরা মনে করি, যেসব প্রতিষ্ঠান অর্থ পাচার রোধে কাজ করে, সেসব প্রতিষ্ঠানকে শক্তিশালী করার মধ্য দিয়েই অর্থ পাচার বন্ধ হতে পারে।


আমরা মনে করি, দুর্নীতি নির্মূল করা সম্ভব হলে বাংলাদেশ হবে বিশ্বের বুকে একটি মর্যাদাশালী ও গর্বিত দেশ। দুর্নীতি নির্মূল করতে না পারা এটা আমাদের সামগ্রিক ব্যর্থতা। এ ব্যাপারে সরকারের কঠোর পদক্ষেপ জরুরি।

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

অপারেশন ডেভিল হান্ট : আরও ৬১৮ জন গ্রেফতার

পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাচ্ছে স্কাইপ

দিনাজপুরের ফুলবাড়ী পৌর শহরে দুই মাসেও ভেঙে পড়া স্লাব সংস্কার হয়নি

চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ সীমান্তে বিজিবি’র অভিযানে চোরাচালানকৃত ৩০টি ভারতীয় ফোন জব্দ

বগুড়ার কাহালুর পাঁচগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয়ে বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা

কুড়িগ্রামের দারিদ্র বিমোচনে চর বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দাবি