ভিডিও শনিবার, ০১ মার্চ ২০২৫

কুড়িগ্রামের দারিদ্র বিমোচনে চর বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দাবি

কুড়িগ্রামের দারিদ্র বিমোচনে চর বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দাবি। ছবি সংগৃহীত

এম. আর মিন্টু, কুড়িগ্রাম : উত্তর জনপদের জেলা কুড়িগ্রাম। আর্থ-সামাজিক বৈষম্যের শিকার এজেলার মানুষ। এর ফলে দেশের সবচেয়ে দারিদ্র্যপীড়িত জেলার তকমা পেয়েছে কুড়িগ্রাম। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্যমতে, জেলায় দারিদ্র্যের হার ৭০ দশমিক ৮ শতাংশ। বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস) বলছে, জেলায় অতিদরিদ্রদের হার ৫৩ দশমিক ২ শতাংশ।

এর অন্যতম কারণ হলো নদী ভাঙন এবং চরে বসবাসকারী মানুষের অনিশ্চিত জীবনযাপন। এ পরিপ্রেক্ষিতে এসডিজির (টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য)বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে চর বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দাবি উঠেছে তৃণমূল থেকে। সম্প্রতি কুড়িগামে অনুষ্ঠিত এক নাগরিক সংলাপ থেকে জোরালো দাবি জানানো হয়েছে। এটির আয়োজন করে কুড়িগ্রাম জেলা চর উন্নয়ন কমিটি।

চর উন্নয়ন কমিটি কুড়িগ্রাম জেলার আহ্বায়ক সাংবাদিক অধ্যাপক শফিকুল ইসলাম বেবু বলেন, কুড়িগ্রামের জনসংখ্যা প্রায় ২৪লাখ। এ জেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, তিস্তা, দুধকুমার, ফুলকুমারসহ ১৬টি নদ-নদী। এগুলোর অববাহিকায় রয়েছে সাড়ে চার শতাধিক চর। প্রায় সাড়ে ৮০০ বর্গ কিলামিটার চরে বসবাস করেন সাড়ে ৫ লাখ মানুষ। এসব চরে বসবাসকারী মানুষের প্রধান আয়ের উৎস কৃষি। ভৌগলিকভাবে নদী ও চরবেষ্টিত জেলা হওয়ায় অন্যান্য জেলার চেয়ে এ জেলার সমস্যাগুলো অনেকটা ভিন্ন ধরনের।

এছাড়াও এ জেলার অধিকাংশ চর স্বাধীনতার পর হতে এখন পর্যন্ত উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডের আওতায় আসেনি, যে কারণে চরাঞ্চলের মানুষের ভাগ্যের কোন পরিবর্তনও হয়নি। যেগাযোগ, স্বাস্থ্য ,শিক্ষাসহ সব দিক থেকেই রয়েছেন পিছিয়ে। স্বাধীনতার পর থেকে জেলার চরের মানুষের জীবনমান উন্নয়নে অনেক এনজিও কাজ করছে। সরকারিভাবেও অনেক বরাদ্দ এসেছে। কিন্তু উন্নতি রয়েছে সেই তিমিরেই। চরের পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়া কন্যা সন্তানদের বিয়ের পিঁড়িতে বসতে হচ্ছে।

বাল্যবিয়ে, অপুষ্টিসহ নানা কারণে প্রতিবন্ধী মানুষ বেড়েই চলছে। বর্তমানে জেলায় ৯১ হাজার ৬৭২জন প্রতিবন্ধী রয়েছে। দরিদ্র্য সূচকে দেশের সর্বোচ্চ অবস্থান এই জেলার। কুড়িগ্রামসহ চরের বিপুল জনগোষ্ঠীর জীবন মান উন্নয়নে আলাদা মন্ত্রণালয় গঠনের বিকল্প নেই। পাহাড়িদের জন্য যদি আলাদা মন্ত্রণালয় থাকতে পারে। তাহলে দেশের পশ্চাৎপদ এই চরের জনগোষ্ঠীর জন্য কেন হবে না।

তিনি আরো বলেন, কুড়িগ্রাম জেলার মধ্যদিয়ে ভারতের প্রায় ১৪টি নদী বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। এছাড়া আরও দুটি আন্তঃসীমান্ত নদী এ জেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত। বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি ৭০ ভাগ পানি বহনকারী ব্রহ্মপুত্র নদও কুড়িগ্রাম জেলা দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। এসব নদীর কোল ঘেঁষে গড়ে উঠেছে জেলাটি। নদী দিয়ে বেষ্টিত হওয়ায় প্রতি বছর প্রায় সবগুলো উপজেলা বছরে ৩-৪ বার বন্যায় আক্রান্ত হয়। এ বছর জেলার নদী তীরবর্তী ৪১ ইউনিয়নের দুই শতাধিক গ্রামের লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েন। দুর্যোগ কবলিত মানুষের সংখ্যা প্রায় ৬৫ হাজার জন।

প্রতিবার বন্যায় যে পরিমাণ ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয় তা প্রয়োজনের অত্যন্ত অপ্রতুল। এছাড়া দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা না থাকায় বন্যা সমস্যার কোন টেকসই সমাধান করা সম্ভব হচ্ছে না। আরো আছে, ব্রহ্মপুত্র ও তিস্তা নদীর উভয় তীর তীব্র ভাঙন। এর ফলে উভয় তীরবর্তী এলাকার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। এতে অনেক মানুষ ভূমিহীন ও সহায়-সম্বলহীন হয়ে পড়েছেন। এছাড়াও সরকারি-বেসরকারি ও জনগুরুত্বপূর্ণ অনেক স্থাপনা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। সম্প্রতি জেলার ৯টি উপজেলার প্রায় ২ হাজার পরিবার নদী ভাঙনের শিকার হয়েছে। প্রতিবছর এমন ভাঙন যেন চরবাসীর নিয়তি। নদী ভাঙনের কারণে একটি তুলনামূলক স্বচ্ছল পরিবারও সহায় সম্বলহীন হয়ে অতি দরিদ্র হয়ে পড়ছে।

আরও পড়ুন

ইউনিসেফের তথ্য অনুযায়ী দেশে ১৮ বছরের কমবয়সী মেয়েদের বিয়ের হার ৬৬ শতাংশ। কুড়িগ্রামে এ চিত্র আরও ভয়াবহ। অর্থাৎ প্রায় ৭৮ শতাংশ। জেলায় বাল্যবিয়ের পেছনে পরিবারগুলোর আর্থসামাজিক অবস্থান অন্যতম দায়ী। দরিদ্রতা, সামাজিক নিরাপত্তাহীনতা, নারীর সম্ভ্রমহানির ভীতি, কর্মসংস্থানের অভাব, শিক্ষার সুযোগ না থাকাসহ নানা কারণে চরগুলোতে বাল্যবিয়ে বাড়ছে।

অসচেতনতা, বাল্যবিয়ে গর্ভবর্তী মায়ের পুষ্টির অভাব, প্রসবকালীন জটিলতা, প্রসবকালীন সময়ে প্রত্যন্ত চরাঞ্চল হতে যথাসময়ে ডাক্তারের শরণাপন্ন না হতে পারার কারণে অদক্ষ ধাত্রীর মাধ্যমে অনিরাপদ ডেলিভারি, দরিদ্রতা ও সামাজিক কুসংস্কার প্রতিবন্ধিতার অন্যতম কারণ হিসেবে বলা হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কুড়িগ্রাম জেলার ১ হাজার ২৪০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে চরাঞ্চলে রয়েছে ১৬৯টি বিদ্যালয় রয়েছে। মাধ্যমিক বিদ্যালয় নেই বললেই চলে। অথচ চরাঞ্চলের মানুষের শিক্ষা নিশ্চিত করতে প্রতিটি চরে কমপক্ষে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় থাকা অপরিহার্য। পর্যাপ্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান না থাকার কারণে সবচেয়ে বেশি শিক্ষাবঞ্চিত শিশুর সংখ্যা ব্রহ্মপুত্রের অববাহিকার দুর্গম চরাঞ্চলগুলো।

কুড়িগ্রাম জেলা চর উন্নয়ন কমিটির সদস্য সচিব সাংবাদিক আশরাফুল ইসলাম রুবেল বলেন, চর এলাকার মানুষের জীবন মান উন্নয়নে আমরা কাজ করছি, আশা করছি সরকার বিষয়টি সরকারের গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করবে। কুড়িগ্রাম জেলা চর উন্নয়ন কমিটির অন্যতম যুগ্ম আহবায়ক ও সমাজ কর্মী সাংবাদিক সাইয়েদ আহমেদ বাবু বলেন, আমরা চর উন্নয়ন বিষয়ক মন্ত্রণালয় গঠনের দাবিতে কুড়িগ্রাম সহ সারাদেশের চরের কোটি মানুষের জীবন মান উন্নয়নের জন্য কাজ করছি। দেশে চর মন্ত্রণালয় গঠিত হলে চর এলাকার মানুষের শিক্ষা, স্বাস্থ, বাসস্থান, যোগাযোগ, কর্ম সংস্থান ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা চর মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সমাধান সহজ হবে।

কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক নুসরাত সুলতানা জানান, চরের মানুষের জীবন মান উন্নয়নে সরকার বদ্ধপরিকর। পৃথক চর বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের গঠনে গুরুত্ব নিয়ে ইতিমধ্যে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

অপারেশন ডেভিল হান্ট : আরও ৬১৮ জন গ্রেফতার

পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাচ্ছে স্কাইপ

দিনাজপুরের ফুলবাড়ী পৌর শহরে দুই মাসেও ভেঙে পড়া স্লাব সংস্কার হয়নি

চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ সীমান্তে বিজিবি’র অভিযানে চোরাচালানকৃত ৩০টি ভারতীয় ফোন জব্দ

বগুড়ার কাহালুর পাঁচগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয়ে বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা

কুড়িগ্রামের দারিদ্র বিমোচনে চর বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দাবি