ভারতের স্পিন জালে কুপোকাত নিউজিল্যান্ড

মাঝারি লক্ষ্যতাড়ায় ব্যাট হাতে শুরুটা তেমন খারাপ হয়নি নিউজিল্যান্ডের। ৩ উইকেট নিয়ে শতরান পার করে কিউইরা। কেইন উইলিয়ামসনের দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে তখন পর্যন্ত লড়াইয়ে এক হাত এগিয়েই ছিল নিউজিল্যান্ড। তবে এরপরই ভারতের স্পিন জালে আটকা পড়ে কিউইরা।
উইলিয়ামসনের লড়াকু ফিফটির পর শেষদিকে একাই লড়েছেন মিচেল স্যান্টনার। একের পর এক চার-ছক্কায় প্রতিপক্ষ বোলারদের মনে ভয়ও ধরিয়েছেন। তবে অধিনায়কের সেই ক্যামিও ইনিংসেও ম্যাচ জিততে পারেনি নিউজিল্যান্ড। দুবাইয়ে 'এ' গ্রুপের শেষ ম্যাচে নিউজিল্যান্ডকে ৪৪ রানে হারিয়েছে ভারত।
ভারতের এই জয়ে নিশ্চিত হয়ে গেল সেমিফাইনালের লাইন-আপও। মঙ্গলবার (৪ মার্চ) দুবাইয়ে প্রথম সেমিফাইনালে 'এ' গ্রুপের চ্যাম্পিয়ন ভারতের মুখোমুখি হবে 'বি' গ্রুপের রানার আপ অস্ট্রেলিয়া। পরের দিন দ্বিতীয় সেমিফাইনাল ম্যাচে লাহোরে নিউজিল্যান্ড মুখোমুখি হবে দক্ষিণ আফ্রিকার।
২৫০ রানের লক্ষ্যে ব্যাটিংয়ে নেমে দলীয় ১৭ রানে ওপেনার রাচিন রবীন্দ্রের উইকেট হারায় নিউজিল্যান্ড। তবে পাওয়ারপ্লেটা খারাপ কাটেনি নিউজিল্যান্ডের। ১ উইকেট হারিয়ে ৪৪ রানে ১০ ওভার শেষ করে কিউইরা। পাওয়ারপ্লের পরপরই কিউইদের ব্যাটিং লাইনে হানা দেন বরুণ চক্রবর্তী। ২২ রান করা উইল ইয়াংকে বোল্ড করে সাজঘরে ফেরান এই রহস্য স্পিনার।
সময় যত গড়াতে থাকে উইকেটের প্রকৃতি তত বদলাতে থাকে। বল পুরনো হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে স্পিনারদের বিপক্ষে খেলা কঠিন হয়ে ওঠে। তবে কিউই ব্যাটাররা প্রতিরোধ দেখিয়েছেন। তৃতীয় উইকেটে ড্যারেল মিচেলকে নিয়ে ৪৪ রানের জুটি গড়েন উইলিয়ামসন। ব্যক্তিগত ১৭ রানে মিচেল আউট হওয়ার আগে স্কোরবোর্ডে ৯৩ রান তোলে নিউজিল্যান্ড।
উইকেটে টিকে থাকা কঠিন হয়ে উঠলেও জুটি গড়ার কঠিন চেষ্টা করে যেতে থাকে নিউজিল্যান্ড। এক প্রান্তে উইকেট গেলেও অন্য প্রান্তে শক্ত প্রতিরোধ দেখাচ্ছিলেন উইলিয়ামসন। চতুর্থ উইকেটে টম লাথামকে নিয়ে ৪০ রানের জুটি গড়েন তিনি।
দলীয় ১৩৩ রানে রবীন্দ্র জাদেজার বলে লাথাম আউট হওয়ার আগ পর্যন্ত খেলার নিয়ন্ত্রণ ছিল নিউজিল্যান্ডের হাতে। তবে এই উইকেট পতনের পর হুট করেই ভেঙে পড়ে কিউই ব্যাটিং লাইন। ৩৬ রানের ব্যবধানে ৪ উইকেট হারায় তারা। ১২০ বলে ৮১ রান করা উইলিয়ামসনও আর ধৈর্য্য রাখতে পারেননি। অক্ষর প্যাটেলকে স্টেপ আউট করে মারতে গিয়ে স্টাম্পিং আউট হন তিনি।
ইনিংসের শেষদিকে ৩১ বলে ২৮ রানের ক্যামিও ইনিংস খেলে কিছুটা আশা দেখিয়েছিলেন স্যান্টনার। তবে সেটা জয়ের ব্যবধান কমানো ছাড়া কোনো কাজে আসেনি।
ভারতের হয়ে পাঁচ উইকেট নিয়েছেন এই ম্যাচেই প্রথম খেলতে নামা বরুণ চক্রবর্তী। দুটি গুরুত্বপূর্ণ উইকেট নিয়েছেন কুলদীপ যাদব।
এর আগে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুটা ভালো করতে পারেনি ভারত। দলীয় ১৫ রানে দুর্দান্ত ফর্মে থাকা শুভমান গিলের উইকেট হারায় তারা। রোহিত শর্মাও বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। কাইল জেমিসনের বলে পছন্দের পুল শট খেলতে গিয়ে স্কয়ার লেগে ইয়াংয়ের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন তিনি।
দ্রুত ২ উইকেট হারানোর পর হাল ধরতে পারেননি বিরাট কোহলিও। গত ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান আজ আউট হয়েছেন ১১ রান করে। ম্যাট হেনরির বলে ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে অবিশ্বাস্য ক্যাচ ধরে কোহলিকে সাজঘরে ফেরান গ্লেন ফিলিপস।
চতুর্থ উইকেট জুটিতে হাল ধরেন অক্ষর প্যাটেল এবং শ্রেয়াস আইয়ার। ৩০ রানে ৩ উইকেট হারানোর পর ৯৮ রানের জুটি গড়েন তারা। এই দুজনের জুটিতে যখন বড় সংগ্রহের পথে এগোচ্ছিল ভারত, তখনই ব্রেকথ্রু এনে দেন পার্ট টাইম স্পিনার রাচিন রবীন্দ্র। উইকেটের অসম বাউন্সের বলি হয়ে ৪২ রান করে সাজঘরে ফেরেন অক্ষর।
অক্ষরের বিদায়ের পর পঞ্চম উইকেটে ৪৪ রানের জুটি গড়েন শ্রেয়াস আইয়ার এবং লোকেশ রাহুল। রানের গতি বাড়াতে গিয়ে এলোপাথারি শট মেরে আউট হন শ্রেয়াস আইয়ার। ৯৮ বলে ৪ বাউন্ডারি ও ২ ছক্কায় ৭৯ রান করে ফেরেন তিনি। আইয়ারের বিদায়ের পর দ্রুত ফেরেন লোকেশ রাহুল। ২৯ বলে ২৩ রান করে দলীয় ১৮২ রানে ফেরেন এই উইকেটরক্ষক ব্যাটার।
বল যত পুরনো হচ্ছিল, ব্যাটিং করা ততই কঠিন হয়ে উঠছিল। আর সে কারণেই হার্দিক পান্ডিয়া-রবীন্দ্র জাদেজাদের মতো পাওয়ার হিটাররা বাউন্ডারি মারতে পারছিলেন না। তবে হাল ছাড়েননি পান্ডিয়া। ৪ বাউন্ডারি ও ২ ছক্কায় ৪৫ বলে ৪৫ রানের ইনিংস খেলে দলকে ২৪৯ রানের সংগ্রহ এনে দেন। ২০ বলে ১৬ রান করেছেন জাদেজা।
নিউজিল্যান্ডের হয়ে ৮ ওভার বোলিং করে ৪২ রানে পাঁচ ইকেট নেন হেনরি। একটি করে উইকেট নিয়েছেন মিচেল স্যান্টনার, উইলিয়াম ওরোর্ক, রাচিন রবীন্দ্র এবং কাইল জেমিসন।
মন্তব্য করুন