ভিডিও সোমবার, ০৩ মার্চ ২০২৫

করতোয়া’র কাছেই অনেক দুঃখ, কষ্ট প্রকাশ করতে পেরেছি : সুকুমার বাউল

করতোয়া’র কাছেই অনেক দুঃখ, কষ্ট প্রকাশ করতে পেরেছি : সুকুমার বাউল ,ছবি:তালহা মোস্তফা ।

 বিনোদনডেস্ক ( অভি মঈনুদ্দীন) :  উত্তরবঙ্গের গর্ব তিনি। তথা সমগ্র বাংলাদেশের অহংকার তিনি। তিনি সুকুমার বাউল। মাত্র কয়েকটি মৌলিক গানে কন্ঠ দিয়েই তিনি আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তা পেয়েছেন। ঢাকা থেকে গত শনিবার সকালে তার গ্রামের বাড়ি বগুড়ার সোনাতলা উপজেলার বিশ্বনাথপুর গ্রামে গিয়ে তার সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় অনেক কথাই উঠে এসেছে। তিনি বলেছেন মৌলিক গান গেয়ে তার প্রাপ্তির কথা, বলেছেন তার অপ্রাপ্তির কথা। বলেছেন ব্যক্তি জীবনের কথা। বিশ্বনাথপুর গ্রামে এক চালা টিনের ঘরেই সুকুমার বাউলের সাধারন জীবন যাপন। সেদিন সকালেই তার নিজে ঘরে বসে এবং পরবর্তীতে ঘরের পিছনে ঘুরতে ঘুরতে কথা বলেছেন করতোয়ার বিনোদন বিভাগের প্রধান অভি মঈনুদ্দীনের সঙ্গে। দীর্ঘ প্রায় দুই ঘন্টা ব্যাপী আলাপচারিতার মূল অংশ আজকের সাক্ষাৎকারে তুলে ধরা হলো..

প্রশ্ন: করতোয়ার পক্ষ থেকে আপনাকে শুভেচ্ছা। কেমন আছেন আপনি ?

উত্তর: ধন্যবাদ দৈনিক করতোয়া পরিবারকে। ধন্যবাদ এ কারণেই যে আমার গ্রামের বাড়িতে, আমার নিজ বাড়িতে এমন আয়োজন করে কোনো সাংবাদিক ভাই’ই কখনো আসেননি। আমার সত্যিই খুউব ভালোলাগছে। কারণ নিজের মনের অনেক কথা নিজ ঘরে নিজের বিছানায় বসেই বলতে পারছি। 

প্রশ্ন: ‘বলবো না গো আর কোনোদিন’ এই এক গানেই বাজিমাত করেছেন আপনি। এটাতো আপনার লেখা ও সুর করা গান। এর নেপথ্য গল্পটা জানতে চাই...

উত্তর: এই গানটা আসলে আমারই লেখা ও সুর করা। আজ থেকে এক দশকেরও বেশি সময় আগে বগুড়াতে গিয়ে এই গানটি রেকর্ড করি। একতারা ইউটিউব চ্যানেলে প্রচার হয়। একদিন তা দেখে ঢাকা থেকে ঈগল টিম আসে আমার বাড়িতে। তাদের সঙ্গে কথা বার্তা হয়। গানটি তারা নতুন করে করতে চান। আমার সঙ্গে হাফিজ নামে একটি ছেলেকে সঙ্গে নিয়েছিলাম। ঈগল থেকে কাগজ দেবার পর হাফিজ’কে দিয়ে জিজ্ঞেস করেছিলাম, হাফিজ কী লেখা আছেরে? সই করবো..। পরে সই করলাম। গান বের হলো। সেই গান আজ ত্রিশ কোটিরও বেশি ভিউ হলো। ভালোবাসায় মুগ্ধ হলাম আমি। এখনো হচ্ছি প্রতিনিয়ত। 

প্রশ্ন: এরপরতো ‘আপন মানুষ চেনা বড়ই দায়’, ‘মানুষ বড়ই স্বার্থপর’সহ আরো কয়েকটি গান গেয়েছিলেন। কোনো কোম্পানীর কেউ কী আর গান হিট হবার পর যোগাযোগ করেন?

উত্তর: না, কেউ আর যোগাযোগ করেনা। প্রথম রেকর্ড করার সময় যে সম্মানী দেন, এরপর গান থেকে প্রতিষ্ঠানের বা কোম্পানীর লাভ হলেও আমাকে আর কোনোরকম অর্থ দেয়া হয়না। অবশ্য আমি এসব বুঝিওনা, তাই এসব নিয়ে ভাবিও না। কারণ আমি বিশ্বাস করি, দুনিয়াতে একা এসেছি, একাই যেতে হবে। জীবনের এই পর্যায়ে এসে গান গেয়ে বিশেষত বাউল গান গেয়ে, লোক গান গেয়ে মানুষের যে ভালোবাসা পেয়েছি। এটাই অনেক কিছু আমার জন্য। তাই অপ্রাপ্তি নিয়ে আমার ভাবনা নেই। প্রাপ্তি যা মানুষের ভালোবাসাই। 

প্রশ্ন: গান শিখেছেন আপনি কার কাছে?
উত্তর: আমার দাদার ছোট ভাই প্রভু বৈরাগী বাউল গান করতেন। তার হাত ধরেই গানের ভুবনে আমার পথচলা শুরু। গানে আমার বাবা সুভাষ চন্দ্র মহন্ত ও মা শ্রীমতি সুভাষী রাণীরও পূর্ণ সমর্থনও ছিলো বলে আজ আমি সুকুমার বাউল হতে পেরেছি। দাদুর কাছে গানে তালিম নেবার পর তিনি কিচ্ছা গানে তালিম নেই ওস্তাদ চান বয়াতীর কাছে। এরপর পালা গানে তালিম নেই ওস্তাদ নবেজ সরকারের কাছে। কার্তিক সরকারের কাছে হুলি গানে তালিম নেই। এরপর লালনের গানে মুগ্ধ হয়ে লালন সঙ্গীতের প্রতি ঝুকে পড়ি ১৯৯০ সালের দিকে।

প্রশ্ন: একটা কষ্টের কথা বলছিলেন আপনি?

উত্তর: কষ্ট আসলে একটাই। আমার যেহেতু গানই পেশা, তো এই পেশা থেকে অর্থ রোজগার করে আমার বাবা মায়ের জন্য মনের মতো করে খরচ করতে পারলাম না। 

প্রশ্ন: এখন যে অর্থ আয় করেন...
এখন যা আয় করি তা দিয়ে সংসার চলে, স্ত্রী সন্তানদের জন্যই খরচ করতে করতে শেষ হয়ে যায়। টুকটাক যা শো করি তাই দিয়ে জীবন পার হয়ে যায়। আমার জীবনের তেমন কোনো চাহিদা নেই। এই বিশ্বনাথপুর গ্রামে আছি, টিনের চালা ঘরে যে খাটে আমি বসে আছি। এখানেই থাকতে, ঘুমাতে আরাম পাই, শান্তি পাই। এই শান্তিতে থাকতে থাকতেই একদনি পৃথিবী থেকে চলে যেতে চাই। 

আরও পড়ুন

প্রশ্ন: আপনার বেশির ভাগ গানেই বিরহ আসে বেশি, এর কারণ কী?
উত্তর: আমার প্রথম যে গানটা হিট হয় বলবো না গো-এটা বিরহের। এই গানের পর যারাই আমাকে দিয়ে গান করিয়েছেন তারা মনে করেন যে আমাকে দিয়ে বিরহের গান বা কষ্টের গান গাওয়ালে হিট হবে। হয়তো এ কারণেই আমার গাওয়া বেশিরভাগ গানই বিরহের গান হয়ে যায়। 

প্রশ্ন: এই যে গ্রামে থাকেন, আশেপাশের কেউ আসেনা গান শুনতে?
উত্তর: কাকা যারা ছিলো তারাতো কউে আর বেঁচে নেই। এছাড়াও ছোটবেলা থেকে যাদের সঙ্গে বেড়ে উঠেছি তারাও এলাকাতে আর নেই। তবে অনেক দূর থেকে হঠাৎ হঠাৎ কেউ কেউ আসেন গান শুনতে মন ভালো থাকলে শুনাই। যেমন আপনাদের আজ শুনালাম। 

প্রশ্ন: আপনার কাছে কেউ বাউল গানে তালিম নিতে আসেন?
উত্তর: সত্যি বলতে কী আমারতো লেখাপড়া নাই। যে কারণে কাউকে তালিম দেবার সাহস পাইনা। তাছাড়া আমিতো নিজেই শীষ্য হয়ে আছি। এভাবেই শীষ্য থাকতে থাকতেই যেন চলে যেতে পারি। 

প্রশ্ন: আপনার পরিবারের আর কাউকে গানের ভুবনে আনার ইচ্ছে আছে?
উত্তর: না, এই ইচ্ছেটা নাই। কারণ এখানে মিথ্যের খেলা চলে। মিথ্যেটা হলো যা আমি পরবর্তীতে জানতে পেরেছি, সেটা হলো আমার কথা বলে একটি বাজেট ঠিক করা হয়। সেখান থেকে একটি নির্দিষ্ট বাজেট রেখে দিয়ে তারপর আমাকে দেয়া হয়। আমার কথা বলে যে বাজেট নেয়া হলো সেখান থেকে টাকা রেখে দিয়ে পরে আমাকে দেয়া হয়। তো এই যে বাজেট নিয়ে মিথ্যের খেলা, এই খেলার মধ্যে আমি আমার নাতিকে রাখতে চাইনা। আমি চাই আমার নাতি পড়াশুনা করুক, এরপর একটা চাকুরী করবে।

প্রশ্ন: অনুষ্ঠান ছাড়া আর কোথাও যান না?
উত্তর: স্টেজ শো’র কাজ এলেই শুধু ঘর থেকে বের হই। এছাড়া আমি আর কোথাও যাইনা। কারণ ভালোলাগেনা। ঘরে থাকতেই ভালোলাগে আমার। শান্তি ঘর সংসারের মাঝেই খুঁজে পাই। আগে ঢাকা গেলে বাসে যেতাম। একবার বাসে যেতে গিয়ে দর্শকের ভীষণ চাপের মধ্যে পড়ি। এরপর থেকে ঢাকায় গেলে গাড়ি ভাড়া করে যাই। কাজ শেষে গাড়িতে করেই ফিরে আসি।

প্রশ্ন: আপনার নিজের কার গান ভালোলাগে?
উত্তর: আমার নিজের গান দর্শক শ্রোতাদের ভালোলাগে, এটাই অনেক বড়প্রাপ্তি। তবে আমার নিজের ভালোলাগে লালন সাইজি’র গান গাইতে। 

প্রশ্ন: শিগগিরই কোনো নতুন গান আসবে কী?
উত্তর: কিছুদিন আগে ‘আরতো হবেনা দেখা’ শিরোনামের একটি গান প্রকাশিত হয়েছে। গানটি লিখেছেন রাশেদ রানা। সুর সঙ্গীত করেছেন খায়রুল ওয়াসী। গেলো ১৩ ফেব্রুয়ারি গানটি প্রকাশের পর একটু একটু করে বেশ ভালো সাড়া পাচ্ছি। এছাড়াও আগামী ঈদের পর তারেক আনন্দের লেখা ও খায়রুল ওয়াসীরই সুর করা ‘বিশ্বাস ছিলোরে’ গানটি প্রকাশ হবে। ‘বিশ্বাস ছিলোরে’ গানটা নিয়েও আমি ভীষণ আশাবাদী। কারণ গানের কথা আমার খুউব মনে ধরেছে। দেখা যাক শেষ পর্যন্ত কী হয়। 

প্রশ্ন: ধন্যবাদ আপনাকে অনেক সময় দেবার জন্য...
উত্তর: ধন্যবাদ দৈনিক করতোয়া পরিবারকে, ধন্যবাদ এর সম্পাদক’কে। কারণ করতোয়া’র পক্ষ থেকে আপনারা আসলেন বলেই মনের অনেক অপ্রকাশিত কথা, অনেক দুঃখ, কষ্ট প্রকাশ করতে পেরেছি। 
  

    
    

    
  

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

পবিত্র রমজান মাসে বাজার নিয়ন্ত্রণ

বগুড়া শহরে আবারও যুবক খুন একজন ছুরিকাহত

এইচআর বিভাগে নিয়োগ দেবে ওয়ালটন, স্নাতক পাসেও আবেদন

বগুড়ার শিবগঞ্জের আলকদিয়া-কৃষ্ণপুর গ্রামে নেই কোন প্রাথমিক স্কুল পাকা হয়নি রাস্তা

বগুড়ার শেরপুরে নাশকতা মামলায় আ’লীগের দুই নেতা গ্রেফতার

বগুড়ায় ২শ’ পিস টাপেন্টাডলসহ মাদককারবারি গ্রেফতার