পাহাড়ে হানাহানি

আধিপত্য বিস্তারের লড়াইয়ে পাহাড়ি দুই সন্ত্রাসী সংগঠনের গোলাগুলিতে খাগড়াছড়ির পানছড়িতে রূপসী চাকমা নামে এক গৃহবধূ নিহতের খবর পাওয়া গেছে। গত সোমবার উপজেলার দুর্গম হাতিমারা গ্রামে পাহাড়ি সংগঠন ইউপিডিএফ (প্রসীত) এবং জেএসএম’র (সন্তু লারমা) মধ্যে গোলাগুলির সময় ওই গৃহবধূ নিজ বাড়িতে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছেন। নিহত গৃহবধূ রূপসী চাকমা হাতিমারা গ্রামের হেমন্ত চাকমার স্ত্রী। আবারো দুই সংগঠনের মধ্যে লড়াই শুরু হওয়ায় স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
পার্বত্য অঞ্চলে এমন সংঘর্ষ নতুন নয়। ইতোপূর্বে হতাহতের ঘটনাও ঘটেছে প্রচুর। একটি সার্বভৌম দেশে পাহাড়ে এমন প্রাণঘাতী সংঘর্ষ আমাদের স্বাভাবিকভাবেই উদ্বিগ্ন করে। সেখানে স্থানীয় সংগঠনগুলোর আধিপত্যলাভের চেষ্টা, সীমান্ত পেরিয়ে প্রতিবেশী দেশগুলোয় থাকা বিচ্ছিন্নতাবাদীদের অপতৎপরতা রুখতে পাহাড়ে নিয়োজিত আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে সদা তৎপর থাকতে হয়।
এমন অবস্থায় সেখানে বসবাসরত সাধারণ নাগরিকদের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ ও সেনবাহিনী কার্যকর ভূমিকা পালনের বিকল্প নেই। পাশাপাশি নিরাপত্তা ঝুঁকিতে থাকা জায়গাগুলোতে সেনা ক্যাম্প বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তাও রয়েছে। স্মরণে রাখা দরকার, বিগত সরকার পতনের পর দেশ এখন নতুন করে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে। নানা ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করেই তা করতে হচ্ছে। ফলে যে কোনো সহিংস পরিস্থিতির পেছনে কোনো দুষ্টচক্রের ইন্ধন রয়েছে কিনা, জাতীয় স্বার্থে তা ও খতিয়ে দেখার প্রয়োজন রয়েছে।
পাহাড়ে ইউপিডিএফ এর দুই অংশ জেএসএস ছাড়াও কুঁকি- চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) সন্ত্রাসীরা আধিপত্য বিস্তারে নিজেদের মধ্যে হানাহানিতে লিপ্ত। এরা আসলে বিচ্ছিন্নতাবাদী। পত্র-পত্রিকার খবর অনুযায়ী, পার্বত্য চট্টগ্রামের রুমা, থানচি, রোয়াংছড়িসহ গহিন অরণ্যে তাদের বিচরণ। রাঙামাটির বিলাইছড়ির পাশাপাশি মিয়ানমার ও ভারতের মিজোরাম সীমান্তবর্তী এলাকায় রয়েছে তাদের শক্ত ঘাঁটি।
এসএমজি, চায়নিজ রাইফেল, একে-৪৭ সহ তাদের কাছে রয়েছে অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র। সশস্ত্র এই সংগঠনের সদস্যরা চাঁদাবাজি, খুন, অপহরণ, সশস্ত্র হামলাসহ নানা সন্ত্রাসী কর্মকান্ড চালিয়ে পাহাড়কে অশান্ত করে তুলছে। পার্বত্যাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় সশস্ত্র কেএনএফ ২০১৬ সাল থেকে সক্রিয়। ২০২০ সাল থেকে তারা পাহাড়ি এলাকায় ব্যাপকভাবে অপতৎপরতা শুরু করে।
আরও পড়ুন২০২২ সালে তারা কুকি-চিন ন্যাশনাল আর্মি (সামরিক শাখা) গঠন করে। গত দ্ইু বছরে পাহাড়ি এলাকায় অন্তত ৯টি বড় ধরনের সন্ত্রাসী ঘটনা ঘটিয়েছে কেএনএফ। তার আগে কেএনএফর সন্ত্রাসীদের চারটি হামলায় আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত আমাদের পাঁচ সদস্য নিহত হন।
আমরা মনে করি, পাহাড়ে সন্ত্রাস নির্মূল করতে হবে শক্তভাবে। সাম্প্রতিক সময়ে বান্দরবন, রাঙামাটি, কক্সবাজার পার্বত্য অঞ্চলে পাহাড়ি সন্ত্রাসীদের তৎপরতা জনমনের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি করেছে। গহিন জঙ্গলে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী আস্তানা গড়ে তুলেছে। তাদের সশস্ত্র ট্রেনিং ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও প্রকাশ করা হয়। বেশ কয়েকবছর থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামে সন্ত্রাসী সশস্ত্র কর্মকান্ড উদ্বেগজনকভাবে বাড়ছে।
পাহাড়কে শান্ত স্থিতিশীল রাখার পাশাপাশি জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। কোনোভাবেই সন্ত্রাসী, দেশ বিরোধী গোষ্ঠীকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দেওয়া যাবে না। এখন যে বা যারা সন্ত্রাসীদের মদদে আছে তাদেরও আইনের আওতায় আনতে হবে। জনগণ সন্ত্রাসী বাহিনীর যাবতীয় তৎপরতা ধ্বংস করে এলাকার শান্তিপূর্ণ পরিবেশ দেখতে চায়।
দুস্কৃতকারীদের আইনের আওতায় নিয়ে আসার পাশাপাশি পার্বত্য চট্টগ্রামে অবৈধ অস্ত্র ছেঁকে বের করতে হবে। এসব অস্ত্র কোথা থেকে আসে তাও খুঁজে বের করা জরুরি। এখনই শক্ত হাতে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া না হলে দুস্কৃতকারীরা আরো বেপরোয়া হয়ে উঠতে পারে।
মন্তব্য করুন