সাপুড়েদের এখন কষ্টের জীবনযান

রংপুর প্রতিনিধি : আয় রোজগার কমে যাওয়ায় রংপুর অঞ্চলের সাপুড়েদের এখন কষ্টে জীবনযান করতে হচ্ছে। তারা জানায়, সাপুড়েদের আর আগের অবস্থা নেই। আগে সাপুড়ে ছিল অনেক। কদরও ছিল। আয় রোজগার বেশ ভালোই ছিল।
এখন সবকিছুর দাম বেশি, আয় নেই বললেই চলে। তাই অনেক সাপুড়ে পেশা বদলেছে। তাছাড়া আগের মতো সাপও দেখা যায় না। আগে সাপে কাটলে সাপুড়ের কাছে মানুষ ধর্ণা দিত। এখন সাপে কাটার চিকিৎসা থাকায় বেশিরভাগ মানুষ হাসপাতালে যায়। আমরাও হাসপাতালে যাওয়ার পরামর্শ দেই।
স্বাস্থ্য সংক্রান্ত এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, দেশে প্রতিবছর ৪ লাখেরও বেশি মানুষকে সাপে কামড়ায়। এদের মধ্যে প্রায় ৮ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়। সাপের আক্রমণের শিকার ৯৫ শতাংশই গ্রামাঞ্চলের। আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে ১০ দশমিক ৬ শতাংশ পরে শারীরিক এবং ১ দশমিক ৯ শতাংশ মানসিক সমস্যায় ভোগেন।
বেসরকারি এক উন্নয়ন সংস্থার জরিপে দেখা গেছে, দেশে প্রতি বছর ১ লাখে ২৪৪ জন সাপের কামড়ের শিকার হন। আর মৃত্যুবরণ করেন ৫ জন মানুষ। মোট আক্রান্তের ৯৫ ভাগই হলো গ্রামে। আর এসব সাপের কামড়ের ৪ ভাগের এক ভাগ বিষাক্ত সাপের কামড়ে হয়ে থাকে। যার মাঝে ১০ দশমিক ৬ শতাংশ শারীরিক এবং ১ দশমিক ৯ শতাংশ মানুষ পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে থাকেন।
জরিপে দেখা যায়, সর্প দংশনের পরে প্রতি হাজারে ২ জন মানুষের অঙ্গহানি ঘটে এবং ২ থেকে ২৩ ভাগ মানুষ বিভিন্ন দীর্ঘমেয়াদি শারীরিক অসুস্থতা ভোগ করেন। সর্পদংশনের পর শতকরা প্রায় ১০ ভাগ মানুষ দীর্ঘমেয়াদি অবসাদগ্রস্ততায় আক্রান্ত হন।
আরও পড়ুনবাংলাদেশ টক্সিকোলজি সোসাইটির হিসাব অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রায় ৯০টি প্রজাতির সাপ রয়েছে। তার মধ্যে সাত থেকে আট প্রজাতির অত্যন্ত বিষধর। এদের কামড়ে বেশি মানুষ মারা যায়। রংপুর শহরের বিভিন্ন এলাকায় নিয়মিত সাপ খেলা দেখিয়ে মানুষকে আনন্দ দেয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে থাকেন সাপুড়ে লাল চান্দ। এভাবেই রোজগার করেন তিনি।
লাল চান্দ বলেন, পরিবারেই সাপ দেখে বড় হয়েছি। সাপ ধরার দীক্ষাও অর্জন করেছি। আগে বড়দের সাথে গ্রামগঞ্জ ঘুরে সাপ খেলা দেখিয়েছি। এখন নিজেরই বয়স হয়েছে। দূরে যেতে পারি না। তাই ভাতিজাকে নিয়ে শহরের বিভিন্ন জায়গায় সাপ খেলা দেখাই। এতে যা আয় হয় তা দিয়েই চলছে সংসার।
এসব সাপ কোথায় পেয়েছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, কোথাও কোনও সাপ দেখা গেলে মানুষেই খবর দেয়। আমরা সেখানে গিয়ে সাপ ধরে নিয়ে আসি। সাপে কামড়ালে তাৎক্ষণিক হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। কখনোই ওঝা বা কবিরাজের কাছে নেয়া যাবে না।
মন্তব্য করুন