সেহরি না খেয়েও পানি দিয়ে ইফতার করতে হয় প্রতিবন্ধী বাবা-ছেলের

নওগাঁ প্রতিনিধি : আমি চোখে দেখি না, আমার ছেলেও দেখতে পায় না। আমার স্ত্রী মানুষের বাড়িতে কাজ করে যে কয়টা টাকা পায় তা দিয়ে সংসার চলে না। রমজান মাসের কয়েকটা রোজা চলে গেল। সেহরির সময় না খেয়েও রোজা থাকতে হয় আবার ইফতারের সময় শুধু পানি দিয়েও ইফতার করতে হয়। আমার প্রতিবন্ধী ভাতার যে কয়টা টাকা পাই তা দিয়ে চাল কিনমু, তরকারি কিনমু, কাপড় কিনমু, না কী ওষুধ কিনমু?
ছলছল চোখে এসব কথা বলছিলেন ৬০ বছর বয়সী দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী মোজাফ্ফর হোসেন। তার বাড়ি নওগাঁর পত্নীতলা উপজেলার নন্দনপুর গ্রামে। তার ছোট ছেলে ১৯ বছর বয়সী মারুফও দৃষ্টি প্রতিবন্ধী। মাটির একটি জরজীর্ণ ঘরে অসহায় অবস্থায় দিন পার করছেন এই পরিবারটি।
জানা যায়, মোজাফ্ফর হোসেন ছোট বেলা থেকেই দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী। স্ত্রী ও তিন ছেলেকে নিয়ে ছিল তার সংসার। তিন ছেলের মধ্যে বড় দুই ছেলের সহযোগিতায় রাস্তায় রাস্তায় গান গেয়ে যে টাকা রোজগার করতেন তা দিয়ে সংসার চালাতেন মোজাফ্ফর । কিন্তু বড় দুই ছেলে বিয়ে করার পর তাদের ফেলে রেখে চলে যায়।
তারপর থেকে বাবা-মায়ের খোঁজ খবর নেয় না তারা। আর ছোট ছেলে মারুফ দশম শ্রেণিতে পড়াশোনা অবস্থায় সড়কে একটি ওষুধ কোম্পানি গাড়ির ধাক্কায় হারিয়ে ফেলে দুই চোখের দৃষ্টিশক্তি। এতে একই পরিবারে বাবা-ছেলে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী হয়ে পড়ায় অত্যন্ত মানবেতর জীবনযাপন করছেন মোজ্জাফর। অর্থের অভাবে ছেলের চিকিৎসাও করাতে পারছেন না।
দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী মোজাফ্ফর হোসেন অশ্রুসজল চোখে বলেন, আগে বড় দুই ছেলের সাহায্যে রাস্তায় রাস্তায় গান গেয়ে যে টাকা পাইতাম তা দিয়ে মোটামুটি সংসার চলতো। কিন্তু বড় দুই ছেলে বিয়ের পর ছেড়ে চলে যায়। ছোট যে ছেলে ছিল, সেও দুর্ঘটনায় আমার মতো দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী হয়ে পড়ে। এরপর আমার স্ত্রী মানুষের বাড়িতে বাড়িতে কাজ শুরু করে। কিন্তু যে কয় টাকা পায় তা দিয়ে আমাদের তিনজনের সংসার চলে না।
আরও পড়ুনআয় রোজগার করার মতো আর কোন সদস্য নেই পরিবারে। এখন বয়স হয়ে গেছে। আগের মতো রাস্তায় ঠিক মতো গানও গাইতে পারি না। এখন রোজার সময় ঠিকমতো সেহরি ও ইফতার যোগাড় করতে পারি না। অনেক সময় ইফতারে শুধু পানি ও সেহরিতে না খেয়েও রোজা থাকতে হয়।
মোজাফ্ফর বলেন, ডাক্তার বলেছে ছেলের চোখে অপারেশন করালে দেখতে পাবে। কিন্তু অপারেশনের জন্য অনেক টাকার প্রয়োজন, সেই টাকা নেই আমার কাছে। তাই বিত্তবানরা যদি আমাদের একটু সহযোগিতা করতেন তাহলে আমরা ছেলে চোখে দেখতে পেতো।
এবিষয়ে উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা ফিরোজ আল মামুন বলেন, তারা যদি প্রতিবন্ধী ভাতা না পান, তাহলে খোঁজ খবর নিয়ে তাদের সেই ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে। প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ দরখাস্ত করলে তাদের চিকিৎসার জন্য কোন সহযোগিতার সুযোগ থাকলে করা হবে।
মন্তব্য করুন