বিবাহবিচ্ছেদে কঠোর নীতি আরোপ করছে চীন

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : চীন সরকার বিবাহবিচ্ছেদে নানা বিধি-নিষেধ আরোপ করেছে। বিবাহবিচ্ছেদ যাতে না ঘটে সেজন্য নানা পন্থা অবলম্বন করছে সে দেশের সরকার। চীনে নারীদের বিচ্ছেদের ক্ষেত্রে অনুৎসাহিত করা হচ্ছে। এ দেশে এক সময় বিবাহবিচ্ছেদকে নিষিদ্ধ হিসেবে বিবেচনা করা হলেও, এ দেশের নারীরা এটিকে সরকারের চাপিয়ে দেওয়া সিদ্ধান্ত বলে দাবি করছে।
মেকং নিউজের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সরকারি নির্দেশে, পুলিশ এই ধরনের মামলায় হস্তক্ষেপ করা থেকে বিরত থাকছে এবং এগুলোকে ‘পারিবারিক বিরোধ’ বলে নিজেদের মধ্যে মিটিয়ে নেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছে। এছাড়া আদালতগুলোও প্রায়শই দম্পতিদের বিবাহবিচ্ছেদ মঞ্জুর করার পরিবর্তে পুনর্মিলন করতে উৎসাহিত করছে।
প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে, চীন সরকারের নীতির কারণে সে দেশের আদালতে সফল বিবাহবিচ্ছেদের হার উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, বিবাহবিচ্ছেদের মামলার মাত্র ৩৫ শতাংশ ক্ষেত্রে প্রকৃত বিবাহবিচ্ছেদ ঘটেছে, যেখানে দুই দশক আগে এই সংখ্যা ছিল প্রায় ৭০ শতাংশ।
বিবাহবিচ্ছেদের বিপরীতে সরকারি হস্তক্ষেপে দুই পক্ষের মধ্যস্থতাকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। বিচারকরা প্রায়শই নারীদের তাদের পরিবারের কাছে ফিরে যেতে উৎসাহ দেন। তবে এই সিদ্ধান্তে কিছু নারীদেরকে নির্যাতন বা অসন্তোষ সত্ত্বেও তাদের বৈবাহিক জীবন চালিয়ে যেতে হচ্ছে।
আরও পড়ুনবিবাহবিচ্ছেদের ক্ষেত্রে চীন সরকার আরেকটি নিয়ম চালু করেছে যা বিবাহবিচ্ছেদকারী দম্পতিদের জন্য ‘কুলিং অব পিরিয়ড’ নামে পরিচিত।
এই নিয়মের অধীনে, বিবাহবিচ্ছেদ চাওয়া দম্পতিদের তাদের বিচ্ছেদ চূড়ান্ত করার জন্য ৩০ দিন অপেক্ষা করতে হবে। এই সময়ের মধ্যে দম্পতিদের মধ্যে যদি মীমাংসা হয়ে যায় তাহলে আর বিচ্ছেদ পর্যন্ত বিষয়টি গড়াবে না। যদিও এই নীতিটি নারী অধিকার সমর্থকদের বিরোধিতার মুখোমুখি হয়েছে। তাদের যুক্তি, এই সময়কাল নির্যাতনমূলক সম্পর্কের ক্ষেত্রে নারীদের অসামঞ্জস্যপূর্ণ পরিবেশে থাকতে হবে।
নারী অধিকার কর্মীরা সরকারের নীতি এবং বিবাহবিচ্ছেদ চাওয়া নারীদের চাহিদার মধ্যে স্পষ্ট দ্বন্দ্বের কথা উল্লেখ করেছেন।
২০১৬ সালে গৃহকর্মী সহিংসতা আইন প্রণয়ন করা সত্ত্বেও ‘পারিবারিক বিরোধ’-এ হস্তক্ষেপে পুলিশের অনীহা অব্যাহত রয়েছে। এই আইন পুলিশকে সহিংস স্বামী/স্ত্রীকে সতর্কীকরণ জারি করতে এবং সহিংসতা অব্যাহত থাকলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের অনুমতি দেয়। তবে নারী অধিকারকর্মীদের দাবি, এই ব্যবস্থাগুলো নারীদের প্রতি সহিংসতা রোধে খুব কমই কাজ করছে।
তাদের দাবি, বিচারকরা প্রায়শই নারীদের পারিবারিক সহিংসতার দাবি খারিজ করে দেন এবং তাদের প্রমাণ উপেক্ষা করেন। এ কারণে নারীরা বিবাহবিচ্ছেদের আইনি অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
মন্তব্য করুন