বগুড়ায় সক্রিয় জাল টাকার কারবারি চক্র, ধরা পড়ছে শুধু বাহক

স্টাফ রিপোর্টার : ঈদের সামনে বগুড়ায় সক্রিয় হয়ে উঠেছে জাল টাকার কারবারি চক্র। শহর-বন্দর-উপজেলায় জাল টাকা ছড়িয়ে দিচ্ছে এই চক্র। ৩-৪ হাত বদলের মাধ্যমে জাল টাকার কারবার চলে। জালটাকা ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে নিত্যপণ্যের বাজারে। তবে চক্রের বাহকরা ধরা পড়লেও অধরা থেকে যাচ্ছে পর্দার আড়ালে থাকা গডফাদাররা।
বগুড়া জেলা গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)’র একটি টিম গত ৭ মার্চ বিকেল সাড়ে ৪ টার দিকে দুপচাঁচিয়া উপজেলার পশ্চিম আলোহালিপাড়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে দুই লাখ ৪৪ হাজার টাকার জালনোটসহ রাসেল মন্ডল (৩০) নামে একজনকে গ্রেফতার করে। পরে ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে জালনোট সম্পর্কে বেশ কিছু তথ্য দেয় রাসেল। সে বলে সে জাল টাকার বাহক মাত্র। জালনোট প্রস্তুতকারি চক্রের গড়ফাদাররা থাকে পর্দার আড়ালে। তবে তাকে তারা চেনে না। গ্রেফতারকৃত রাসেল মন্ডল দুপচাঁচিয়া উপজেলার বনতেতুলিয়ার গ্রামের মৃত আশরাফ আলীর ছেলে।
অভিযানে নেতৃত্ব দেয়া ডিবির এসআই মো: আব্দুল কুদ্দুস বলেন, রাসেল আরও স্বীকার করেছে যে, জয়পুরহাটের আক্কেলপুরে এক নারীর কাছ থেকে ২ লাখ ৪৪ হাজার টাকার জালনোট সংগ্রহ করে সে। এরপর সেই জালনোটগুলো লাখ প্রতি আসল ২০ হাজার টাকার বিনিময়ে একজনের কাছে বিক্রি করবে বলে তার কথা হয়। কথা অনুযায়ী দুপচাঁচিয়ায় জালটাকাগুলো বিক্রির জন্য সেই ক্রেতার অপেক্ষায় ছিল সে।
এসআই কুদ্দুস আরও বলেন, রাসেলের কাছে পাওয়া গেছে ৪৮৮টি ৫শ’ টাকার জাল নোট। যার পরিমাণ দাঁড়ায় ২ লাখ ৪৪ হাজার টাকা। জালনোটগুলো একটি শপিংব্যাগে নিয়ে দুপচাঁচিয়ার ওই এলাকায় রাস্তায় দাঁড়িয়েছিল। এ সময় সে পালানোর চেষ্টা করলে তাকে গ্রেফতার করা হয়। ধৃত রাসেল আরও স্বীকার করে যে, তাদের নেটওয়ার্ক বিশাল। ঈদের বাজারকে সামনে রেখে তাদের আরও অনেক সদস্য লাখ লাখ টাকার জাল নোট নিয়ে মাঠে নেমেছে।
চক্রের কেউ কেউ গ্রাম-গঞ্জে, হাট-বাজার ও মার্কেটে গিয়ে ২-১শ’ টাকা মালামাল কিনে ব্যবসায়ী বা দোকানিদের কাছে জাল ৫শ’ টাকা নোট দেয়। এরপর সেই নোট নিয়ে বাঁকি টাকা ফেরত দেন দোকানিরা। এতে দোকানীরা ঠকে যায়। কিন্তু তারা বাকি আসল টাকা পেয়ে লাভবান হয়।
আরও পড়ুনব্যবসায়ীরা বলেন, ঈদ আসলেই বাজারে জালনোট আতংক বিরাজ করে। প্রায়ই জালনোট নিয়ে বিড়ম্বনার শিকার হতে হয়। ১০০,২০০,৫০০ ও এক হাজার টাকার জালনোটও পাওয়া যায়। কোনটা আসল আর কোনটা তা বুঝে ওঠা যায়না। এতে ক্ষতিগ্রস্থ হন ব্যবসায়ীরা। জালনোট সম্পর্কে ধারণা রয়েছে এমন একাধিক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন,যুগের সাথে তাল মিলিয়ে অবিকল আসল নোটের মত জালনোট তৈরি করে বাজারে ছাড়া হচ্ছে। এতে প্রতারিত হচ্ছে সাধারণ মানুষ।
তারা বলেন, আসল টাকা নাড়াচাড়া করলে খসখসে ভাব অনুভূত হবে। অন্যদিকে জাল টাকা মসৃণ হবে। এ ছাড়া জাল টাকার ক্রমিক নম্বর একই হয়ে থাকে। অনেক জাল টাকায় সিকিউরিটি সুতার মত দাগ থাকলেও ভিতরে সুতা থাকেনা। জালটাকা পানিতে রাখলে কিছুক্ষণের মধ্যে নস্ট হয়ে যায়। কিন্তু আসল টাকা পানিতে রাখলে খুব তারাতারি নস্ট হয়না।
বগুড়া জেলা গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)’র ওসি মো: ইকবাল বাহার বলেন, শহর ও গ্রামিন বাজারে জালনোট ঠেকাতে তৎপর রয়েছে গোয়েন্দা পুলিশ। ইতিমধ্যে বগুড়ার দুপচাঁচিয়া থেকে জাল টাকার কারবারি চক্রের সদস্য রাসেলকে ২ লাখ ৪৪ হাজার টাকার জাল নোটসহ গ্রেফতার করা হয়েছে। এই চক্রের অন্যান্য সদস্যদের ধরতেও ডিবি কাজ করছে। তিনি বলেন জালটাকার মুল হোতা বা গড ফাদারদেরও আইনের আওতায় আনা হবে।
মন্তব্য করুন