রোহিঙ্গাদের সহায়তা বন্ধ করতে চেয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া লাখ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী ও লেবাননের সাধারণ মানুষের খাদ্য সহায়তা বন্ধ করতে চেয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের এক কর্মকর্তা গত ফেব্রুয়ারিতে এক ইমেইলে বলেছিলেন, রাষ্ট্রবিহীন রোহিঙ্গা ও লেবাননের জন্য সহায়তা যেন বন্ধ করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের জন্য লাভজনক নয় এমন সহায়তা বন্ধ করার যে উদ্যোগ ট্রাম্প প্রশাসন নিয়েছে, এটি তারই অংশ ছিল।
সহায়তা সংস্থা ইউএসএইডের ভারপ্রাপ্ত সহ-প্রশাসক পিটার মারোক্কো নামে এই কর্মকর্তা গত ১৬ ফেব্রুয়ারি ইমেইলটি লেখেন। এতে তিনি এমন বার্তা দিয়েছিলেন, রোহিঙ্গা ও লেবাননে তারা যে খাদ্য সহায়তা দেন সেটির জন্য যেন তারা যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে।
ইমেইলটি পাঠানো হয়েছিল ইউএসএইডের মানবিক সহায়তা বিষয়ক ব্যুরো প্রধান টিম মিসবার্গারকে। এতে তাকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল একটি মেমো তৈরি করার জন্য। যেটিতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওর নজর আকর্ষণ করে তাকে অভিহিত করতে বলা হয়েছিল, যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তার ওপর মিয়ানমারের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী ও লেবানন কতটা নির্ভরশীল।
এছাড়া মারোক্কো বলেছিলেন, যদিও তাদের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সহানুভূতি রয়েছে। কিন্তু তারা যে তাদের অবস্থান পরিবর্তন করছেন সেটি যেন উল্লেখ করা হয়। বিশেষ করে ধীরে ধীরে সহায়তা বন্ধ করার ব্যাপারে জোর দেওয়ার কথা বলেছিলেন তিনি।
একটি সূত্র জানিয়েছে, মার্কিন এ কর্মকর্তা রোহিঙ্গা ও লেবাননকে আরও সহায়তা দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে সন্দিহান ছিলেন।
বার্তাসংস্থা রয়টার্স শনিবার (১৪ মার্চ) এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, এ ইমেইলের ব্যাপারে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কোনো মন্তব্য করেনি। এছাড়া এ দুই মার্কিন কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তারা উত্তর দেননি। এছাড়া মিইসবার্গ পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে রোহিঙ্গা ও লেবাননের সহায়তা নিয়ে কোনো মেমো পাঠিয়েছিলেন কি না সে ব্যাপারেও রয়টার্স নিশ্চিত হতে পারেনি। ২০২২ সালে যুক্তরাষ্ট্রই ঘোষণা দিয়েছিল রোহিঙ্গারা হলো গণহত্যার শিকার মানুষ।
আরও পড়ুনএদিকে ট্রাম্প গত ২০ জানুয়ারি শপথ নিয়েই ৯০ দিনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের বিদেশি সহায়তা বন্ধ করে দেন। তবে একটি সূত্র জানিয়েছে, রোহিঙ্গা ও লেবাননের মানুষদের জন্য খাদ্য সহায়তা বন্ধ হওয়া রক্ষা পায় ২৪ ফেব্রুয়ারি পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিরও জরুরি খাদ্য সহায়তা অব্যাহত রাখার নির্দেশনার কারণে। তিনি ট্রাম্পের সব ধরনের সহায়তা বন্ধ থেকে ‘খাদ্য সহায়তাকে’ ছাড় দিতে বলেছিলেন। এর চারদিন পর জীবনরক্ষাকারী সব ওষুধ, চিকিৎসা সহায়তা, খাদ্য, আশ্রয়, জীবিকা সহায়ক, সরবরাহ এবং এসব সহায়তা পৌঁছে দিতে যুক্তিসঙ্গত প্রশাসনিক খরচকে ট্রাম্পের নিষেধাজ্ঞা থেকে ছাড় দিতে নির্দেশনা দেন তিনি।
রোহিঙ্গাদের সবচেয়ে বেশি খাদ্য সহায়তা দিয়ে থাকে যুক্তরাষ্ট্র। ২০১৭ সাল থেকে এখন পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের ২দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার দিয়েছে তারা।
জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, মিয়ানমারের ১০ লাখ রোহিঙ্গা নাগরিক কক্সবাজারের দারিদ্রপীড়িত ক্যাম্পগুলোতে অবস্থান করছে। রোহিঙ্গা পরিবারগুলোর ৯৫ শতাংশই বেঁচে থাকার জন্য মানবিক সহায়তার ওপর নির্ভরশীল। মিয়ানমারের রাখাইনে গণহত্যা থেকে বাঁচতে লাখ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে চলে আসে। কেউ কেউ মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ভারত ও থাইল্যান্ডসহ অন্যান্য জায়গায় আশ্রয় নিয়েছে।
এ মাসের শুরুতে জাতিসংঘ সতর্কবার্তায় জানায়, অর্থভাবে রোহিঙ্গাদের ভাতা ১২ দশমিক ৫০ ডলার থেকে ৬ ডলারে নামিয়ে আনতে হতে পারে। গতকাল শুক্রবার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে যান জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। সেখানে তিনি প্রতিশ্রতি দেন, এই সহায়তার পরিমাণ যেন কোনোভাবেই না কমে সেজন্য তিনি চেষ্টা করবেন।
সূত্র: রয়টার্স
মন্তব্য করুন