সাধ এবং সাধ্যের মধ্যে ঈদের কেনাকাটার জন্য
স্বল্প আয়ের মানুষের ভরসা বগুড়ার হকার্স মার্কেট

হাফিজা বিনা : ছোট মেয়ে সুমাইয়াকে শহরের ঈদ মার্কেটে আলোর ঝলকানি দেখানোর জন্য বাবা আব্দুস সালাম এসেছিলেন বগুড়ার রানার প্লাজায়। মেয়ে চলন্ত সিঁড়ি দিয়ে ওপরে উঠেই সামনের এক দোকানে একটি বেবি ফ্রক পছন্দ করে। দাম ২৫শ’ টাকা। কিন্তু মেয়ের জন্য তিনি বাজেট করে এনেছেন ১২শ’ টাকা।
নিম্ন আয়ের এই বাবা মেয়ে এবং স্ত্রী হাছনাকে নিয়ে চলে আসেন তাদের বাজেটের বগুড়া হকার্স মার্কেট। এখান থেকে তিনি ছয়শ’ টাকা দিয়ে জামা এবং চারশ’ টাকার সেন্ডেল কিনে মেয়েকে শান্ত করেন। মেয়েও জামা পেয়ে ভুলে যায় শহরের অভিজাত মার্কেটের দামি জামাকে।
ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে বগুড়ার মার্কেটগুলোতে জমে উঠেছে কেনাকাটা। উচ্চবিত্তরা নগরীর নামিদামি শপিংমল থেকে কেনাকাটা করলেও স্বল্প আয়ের মানুষের ভরসা শহরের হকার্স মার্কেট ও সড়কের পাশের ফুটপাতের বাজারগুলো। এখানে শিশুদের পোশাকসহ বড়দের শার্ট, প্যান্ট, টি-শার্ট, পাঞ্জাবি-পাজামা, সালোয়ার-কামিজ, জুতা-মোজা, স্যান্ডেল, ব্যাগ, বেল্টসহ নানা ধরনের পণ্য পাওয়া যায়।
অনেকেই মার্কেট ঘুরে দর-দাম দেখছেন, আবার অনেকে কিনে নিয়ে গলদঘর্ম হয়ে বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন। এই মার্কেটে শুধুমাত্র যে স্বল্প আয়ের মানুষের ভিড় তা কিন্তু নয়। এখানে বেশ কিছু দোকানে অনেক দামি দামি গজ কাপড় ছাড়াও অন্যান্য পণ্য পাওয়া যায়। রমজানের শুরু থেকেই দোকানগুলোতে পা ফেলানোর জায়গা নেই। ঈদ উৎসবের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে ততই যেন এই মার্কেটে জমে উঠেছে স্বল্প আয়ের মানুষসহ সব ধরনের ক্রেতাদের ঈদের কেনাকাটা। হকার্স মার্কেটের বিক্রেতা ছামছুল আলম করতোয়া’কে বলেন, এ বছর বেচাবিক্রি প্রথম থেকেই ভালো। তবে গত ৮ তারিখের পর থেকে আরও জমে উঠেছে।
এই মার্কেটে এখন পর্যন্ত শিশুদের পোশাকের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। শিশুদের জন্য মাত্র ১৫০ থেকে হাজার টাকার মধ্যে ভালো মানের পোশাক পাওয়া যাচ্ছে। নারীদের সালোয়ার কামিজের জন্য গুনতে হচ্ছে ৬শ’-২ হাজার টাকা। এছাড়াও ছেলেদের শার্ট-প্যান্ট ও পাঞ্জাবি সবই হাজার টাকার মধ্যে কেনাকাটা করছেন ক্রেতারা।
আরও পড়ুনকেনাকাটা করতে আসা একটি প্রতিষ্ঠানের বিক্রয় প্রতিনিধি আশরাফুল ইসলামের সাথে কথা হয় একটি দোকানে। তিনি করতোয়া’কে বলেন, সব জিনিস পত্রের দাম বেড়েছে। কিন্তু আমাদের মত নিম্ন আয়ের মানুষের বেতন বাড়েনি। অল্প আয়ের মধ্যে থেকেই বছরজুড়ে ঈদের জন্য স্ত্রী কিছু টাকা জমিয়েছিলেন। সেই টাকার সাথে তিন হাজার টাকা যোগ দিয়ে স্ত্রী ও ছেলেমেয়ের জন্য সব রকমের কেনাকাটা শেষ করেছি। এই মার্কেটে তাদের মত মানুষেরা সাধ এবং সাধ্যের মধ্যে কেনাকাটা করতে পারে।
হকার্স মার্কেট থেকে ৬০০ টাকায় বৌ এর জন্য থ্রিপিস কিনেছেন রিকশাচালক আমজাদ হোসেন। আরও কিনলেন স্যান্ডেল ২৫০ টাকায়। তিনি বলেন, আমাদের মতো নিম্নবিত্ত আর দিনমজুরদের জন্য হকার্স মার্কেট ভরসার জায়গা। এ দোকানগুলোর বাইরে কেনাকাটা করার সামর্থ্য আমার নেই।
মার্কেটের নিম্নবিত্ত্ব ও মধ্যবিত্ত্ব পরিবারের জন্য নিত্যনতুন ও ফ্যাশনেবল গজ কাপড়ের দোকান রাহীমনি। এখানে কথা হয় কয়েকজন রিতু, সাথী, শান্তা ও মনি নামের তরুণীর সাথে । তারা বলেন, প্রায় একই ধরনের কাপড় নিউ মার্কেট ও বিপণী বিতানে অনেক দাম। এখানেও দাম নেয় তবে তা ঈদের জন্য সাশ্রয়ী। এই দোকান ছাড়াও এই মার্কেটে বেশ কিছু দোকানে বেশ ভাল মানের কাপড় মিলছে।
এখানে ভারত, পাকিস্তান, চায়নার টিস্যু, জর্জেট, চিকেনের জামার সাথে সাথে ওড়না ম্যাচিং করে পাওয়া যাচ্ছে। দোকানের বিক্রয়কর্মী আরমান করতোয়া’কে জানান, অনেকে আসেন যারা একটু ডিজাইন করে জামা বানাতে চান তারা এই কাজ করা কাপড়গুলো নিয়ে দর্জিকে দিয়ে স্টাইলিস্ট পোশাক বানিয়ে ঈদে অনন্যা হয়ে উঠেন। এই জন্যই এই মার্কেটে সব ধরনের ক্রেতাদের এত ভিড়।
মন্তব্য করুন