চাঁপাইনবাবগঞ্জে কাঙ্খিত বৃষ্টি আম ও ধানের আশীর্বাদ

চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি : আমের রাজ্য চাঁপাইনবাবগঞ্জে বেড়ে উঠছে আমের গুটি। গাছ পরিচর্যা চলছে জোরেশোরে। এদিকে ইরি-বোরো ধানও মাঠে বেড়ে উঠছে। গত সেপ্টেম্বর মাসের পর দীর্ঘদিন উল্লেখযোগ্য বৃষ্টি না হওয়ায় গত রোববার দিবাগত রাত ১২টার দিক থেকে সোমবার ভোররাত পর্যন্ত থেমে থেমে কখনও হালকা আবার কখনও মাঝারি বৃষ্টিপাত হয়।
জেলার দুই বৃহত্তম উপজেলা সদর ও শিবগঞ্জে গড়ে পাঁচ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে কৃষি বিভাগ। জেলার অন্য তিন উপজেলা গোমস্তাপুর, নাচোল ও ভোলাহাটে ছিটেফোটা বৃষ্টি হয়েছে। বজ্রসহ বৃষ্টি হলেও ঝড় বা শিলাবৃষ্টি না হওয়ায় কিছুটা হলেও স্বস্তি পেয়েছেন জেলাবাসী ও কৃষকরা।
জেলা কৃষি বিভাগ সূত্র জানায়, জেলায় ৩৭ হাজার ৫০৪ হেক্টর জমির ৮১ লাখ ৪৫ হাজার ৪০টি আমগাছের ৯২ শতাংশে মুকুল আসার পর গুটি বেশ বড় হয়েছে। আমের জন্য চলতি মৌসুমের আবহাওয়া শুরু থেকেই যথেষ্ট অনুকূল বলছেন সংশ্লিষ্ট সকলেই। মৌসুমে শীতের তীব্রতা কম থাকায় বেশিরভাগ মুকুল এসেছে আগাম ও সময়মত।
চলতি মৌসুমের ডিসেম্বরে জেলার সর্বনিম্ন গড় তাপমাত্রা ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলেও জানুয়ারি থেকে তা ক্রমাগত বেড়ে যাচ্ছে বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ। তারা আরও জানায়, চলতি বছর হেক্টর প্রতি ১০ দশমিক ৩ মেট্রিকটন হিসেবে ৩ লাখ ৮৬ হাজার ২৯০ মেট্রিকটন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত হয়েছে। তবে সংশ্লিষ্ট অনেকেই আরও বেশি উৎপাদনের ব্যাপারে আশাবাদী।
গত মৌসুমে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল সাড়ে ৩ লাখ মেট্রিকটন ও উৎপাদন হয় ৩ লাখ ৪৮ হাজার ২৭৮ মেট্রিকটন। গত মৌসুমে ৭৩ থেকে ৭৫ শতাংশ গাছে মুকুল এসেছিল। গত বছর ২০২৪ সালে ১৩৩ মেট্রিকটন আম রপ্তানি হয়েছে মূলতঃ ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যে। এর আগের বছর ২০২৩ সালে হয়েছিল ৩৭৬ মেট্রিকটন। তবে এবার রপ্তানির পরিমাণ বাড়বে বলে আশাবাদী কৃষি বিভাগ ও ব্যবসায়ীরা।
আরও পড়ুনএদিকে জেলায় ৫১ হাজার ৯৩৫ হেক্টর জমিতে ইরি আবাদের লক্ষ্য থাকলেও বরেন্দ্র এলাকায় ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর আশঙ্কাজনক হারে নেমে যাওয়ায় সেচের দায়িত্বে থাকা বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ) সদর, নাচোল ও গোমস্তাপুর এলাকায় তাদের সেচের আওতাধীন আংশিক এলাকায় ধান চাষ নিরুৎসাহিত করে। উৎসাহিত করা হয় গম, সরিষা, মসুর, বুট, ধনিয়ার মত ফসল ও সবজি।
ফলে ধান চাষ কমে হয়েছে ৪৭ হাজার ৭৩০ হেক্টর জমিতে। হেক্টর প্রতি ৪ দশমিক ৬৭ মেট্রিকটন হিসেবে ২ লাখ ২২ হাজার ৮৯৯ দশমিক ১ মেট্রিকটন উৎপাদন আশা করা হচ্ছে। ধানের দানা শক্ত হয়ে এসেছে। এ মাসের শেষ থেকেই শুরু হবে আগাম ইরি কাটা। অপরদিকে ৩৯ হাজার ৯৫০ হেক্টর জমিতে আউশ রোপণের প্রস্তুতি শুরু করেছেন কৃষকরা। মাসখানেকের মধ্যেই আউশ রোপণ শুরু হবে। এখন মাঠে রয়েছে ভুট্টা, মুগ, তিল, হলুদের মত ফসল ও সবজি।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর উপ-পরিচালক ড. ইয়াছিন আলী বলেন, হালকা বৃষ্টি হলেও এসময় তা আম-ধানসহ সকল ফসলের জন্য উপকার বয়ে আনবে। আপাততঃ আম ও ধান চাষে বড় সমস্যা নেই।
মন্তব্য করুন