পাপোশ বানিয়ে স্বাবলম্বী বালিয়াডাঙ্গীর সামসাদ আক্তার
মনসুর আলী : ঠাকুরগাঁওয়ে পাপোশ বানিয়ে স্বাবলম্বী নারী উদ্যোক্তা হয়েছেন সামসাদ আক্তার। কঠোর পরিশ্রমে পাল্টে গেছে তার জীবনের চিত্র। একদম জিরো থেকে বনে গেছেন হিরো। এলাকার বেকার নারীদের তিনি এখন আইডল। করেছেন ৪শ’ শ্রমিকের কর্মসংস্থান ।
বলছিলাম ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার বিশ্রামপুর গ্রামের সফল উদ্যোক্তা সামসাদ আক্তারের গল্প। স্বাবলম্বী হওয়ার প্রত্যাশায় ইএসডিও থেকে প্রশিক্ষণ ও ঋণ নিয়ে ৬ টি মেশিন ও কিছু সুতা ক্রয় করে স্বামীর সহযোগিতায় পাপোশ তৈরির কারখানা শুরু করেন মোছা: সামসাদ আক্তার । স্বল্প টাকার পুঁজি নিয়ে তৈরি করা সে কারখানা থেকে বর্তমানে তিনি কোটিপতি। নিজে স্বাবলম্বী হওয়ার পাশাপাশি সামসাদ আক্তার এলাকার অনেক বেকার যুবক ও নারীদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছেন।
স্বামী মো: হযরত আলীর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার পর থেকেই সামসাদ আক্তারের সংসারে লেগেছিল অভাব অনটন। খেয়ে না খেয়ে কোনরকমে দিনাতিপাত করতেন তারা। অভাবের সংসারে কিভাবে অভাব থেকে মুক্ত হওয়া যায় এবং স্বামীর পাশাপাশি বাড়তি কিছু করে আয় করা যায় সেই চিন্তায় মগ্ন থাকতেন তিনি। এরপরে তিনি সিদ্ধান্ত নেন একটি পাপোশ তৈরির কারখানা দেবেন। সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ীই নেন প্রশিক্ষণ ও ইএসডিও থেকে ঋণ। এরপরে সেই ঋণের টাকা দিয়ে শুরু করেন পাপোশ তৈরির কারখানার কাজ। তিনি বাড়িতে থেকে পাপোশ তৈরি করার কাজকর্ম দেখাশোনা করতেন আর তার স্বামী সাহায্য করতো তা বাজারে বিক্রি করতে। এভাবেই ধীরে ধীরে তাদের ব্যবসার পরিধি বৃদ্ধি হতে থাকে। ৬টি মেশিন দিয়ে শুরু করা পাপোশ কারখানায় বর্তমানে রয়েছে ৩শ’টি মেশিন। তার কারখানাটিতে এখন শুধুমাত্র পাপোশ নয় তৈরি হচ্ছে ফ্লোরম্যাট, শতরঞ্জি, কার্পেট, ওয়ালমেট, ট্যাপেস্টিক ও টেবিলম্যাট। তার তৈরি এসব পণ্য এখন যাচ্ছে আড়ং, আরএফএলসহ বিভিন্ন ব্র্যান্ড শপে। শুধু তাই নয়, এসব পণ্য যাচ্ছে দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিদেশের মাটিতেও। তার স্বপ্ন তার কারখানাটি একদিন গড়ে উঠবে আধুনিক কারখানা হিসেবে। সৃষ্টি হবে আরও অনেক মানুষের কর্মসংস্থান।
মোছা: সামসাদ আক্তার বলেন, খুব কষ্টে একটা সময় দিন যাপন করছিলাম। ব্যবসা শুরু করার চিন্তা মাথায় ছিল কিন্তু মূলধন ছিল না। সেই সময় আমাদের পাশে এসে দাঁড়ায় ইএসডিও। ইএসডিওর কারণে আজকে আমরা স্বাবলম্বী। একটা সময় অর্ধাহারে অনাহারে দিনযাপন করতাম এখন আমরা কোটিপতি। সব খরচ বাদ দিয়ে প্রতি মাসে ২ লক্ষ টাকা আয় করি।
এই যাত্রায় নিরলস ভাবে তাকে সহযোগিতা করে যাচ্ছেন তার স্বামী হযরত আলী। তিনি বলেন, একটা সময় আমাদের কিছুই ছিল না আর এখন আমাদের পাঁচটি ফ্যাক্টরি রয়েছে। প্রায় ১শ’ নারীকে বাড়ি বাড়ি মেশিন দিয়েছি। তারা বাড়িতে বসে পণ্য উৎপাদন করে আমাদেরকে সরবরাহ করে। এখন ভবিষ্যতে ইএসডিওর সহযোগিতা নিয়ে আমরা বড় পরিসরে আধুনিক ফ্যাক্টরি গড়ে তুলতে চাই। এবং আরও অনেক মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে চাই।
তাদের কারখানায় কর্মরত শ্রমিক ফারজানা আক্তার বলেন, আমি পড়ালেখার পাশাপাশি এই কারখানায় কাজ করি। এই কারখানায় কাজ করে আমার যে আয় হয় তা দিয়ে আমার পড়াশোনার খরচ চলে পাশাপাশি আমি পরিবারেও কিছু দিতে পারি।
অপর শ্রমিক রফিকুল বলেন, পড়াশোনা শেষ করে আমি বেকার ছিলাম। এই কারখানায় কাজ করার মাধ্যমে আমার বেকারত্ব দূর হয়েছে। আমার মত আরও অনেক বেকার ছেলে এখানে কাজ করে তাদের বেকারত্ব ঘুচিয়েছে। এখান থেকে যা আয় হয় তা দিয়ে আমার সংসার চলে।
পাপোশ কারখানায় কাজ করা একজন গৃহিণী বলেন, স্বামীর সামান্য আয় দিয়ে সংসার চলত না। তাই আমি এখানে কাজ করি। এখন দুজনের ইনকাম দিয়ে সংসার খুব ভালো চলে। সন্তানদের পড়ালেখা করাতে পারছি। নিজের শখ আহ্লাদ পূরণ করতে পারছি।
ইএসডিওর এপিসি মো: আইনুল হক বলেন, আমরা তাকে প্রশিক্ষণ এবং ঋণ প্রদান করেছি। এছাড়াও তার পণ্য বাজারজাতকরণে সহযোগিতা করেছি। আমাদের এ সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে
আরও পড়ুন
মন্তব্য করুন