ভিডিও

বনভূমি রক্ষা প্রয়োজন

প্রকাশিত: অক্টোবর ২১, ২০২৪, ০৬:১২ বিকাল
আপডেট: অক্টোবর ২১, ২০২৪, ০৬:১২ বিকাল
আমাদেরকে ফলো করুন

বাংলাদেশকে বলা হতো সবুজ নিসর্গের দেশ। সে পরিস্থিতি ক্রমেই নিস্প্রভ হয়ে পড়ছে আমাদের ভুলে। দেশের প্রয়োজনের তুলনায় বনভূমি অনেক কম। এর মধ্যেও বিগত পতিত সরকারের আমলে বনখেকোদের হাত থেকে বনকে বাঁচানো যায়নি। অর্থলিপ্সার কারণে অক্সিজেনের জোগান দেওয়া গাছ নির্বিচারে নিধন করা হয়েছে বিগত আওয়ামী সরকারের আমলে।

পত্র-পত্রিকায় এ নিয়ে বিগত পনের বছর ধরেই প্রচুর লেখালেখি হয়েছে কিন্তু দুর্নীতিবাজ আওয়ামী সরকার কখনো এর প্রতিকার করেনি বরং তাদেরই লোকজন বছরের পর বছর ধরে বনাঞ্চল হাতিয়ে নিয়েছে। আর এতে মদদ দিয়েছে তখনকার প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ, দুর্নীতিবাজ কিছু আমলা ও বন বিভাগের একশ্রেণির অসাধু কর্মকর্তা।

বন কেটে বসত হয়েছে সভ্যতার আদি পর্বে। কিন্তু বসতের প্রয়োজনেই মানুষকে বন সৃষ্টিও করতে হয়েছে। মানুষ থাকলে তার নি:শ্বাস-প্রশ্বাস, ফলমূল শস্যের জন্য চারপাশে গাছগাছালি, ফসলের মাঠও থাকতে হবে। এক সময় মানুষ সেই প্রয়োজন অস্বীকার করেনি। তার ভেতরে পরিবেশ চেতনা ও সৌন্দর্য বোধও কাজ করেছে।

তারপর মনুষ্য বসতির প্রসার ঘটায় এবং জমির ওপর মানুষের চাপ বাড়তে থাকায় জীবিকার প্রয়োজন, ভোগ বিলাস, বিত্তের লালসা মানুষকে তাড়িত ও অন্ধ করে ফেলতে থাকলে এক শ্রেণীর আত্মঘাতী মানুষ বনদখল ও তা উজাড় করে শিল্প-কারখানা, বাড়িঘর নির্মাণে উন্মত্ত হয়ে ওঠে। নানাভাবেই দেশের অতি মূল্যবান বনভূমি, বনসম্পদ লুন্ঠিত হয়ে চলেছে।

যেখানে একটি দেশের মোট আয়তনের ২৫ শতাংশ বনভূমি থাকা অত্যাবশ্যক, সেখানে বন উজাড় হতে হতে আজ তা ৬-৭ শতাংশে এসে ঠেকেছে। সংবাদপত্রের খবর অনুযায়ী পতিত আওয়ামী সরকারের আমলে সংসদে জানানো হয়েছিল, দেশের দুই লাখ ৬৮ হাজার একর বনভূমি বেদখল হয়েছে। চাষাবাদ, রাস্তাঘাট নির্মাণ, বসতি স্থাপনের পাশাপাশি শিল্পায়ন, নগরায়ণ ইত্যাদি কারণে বনভূমি দখল হয়েছে।

বনায়নের জোরদার উদ্যোগ নেই। কিন্তু নানাভাবে বন ধ্বংসের অপ্রক্রিয়া চলছিলোই। বিভিন্ন বলবান গোষ্ঠী কিম্বা অপশক্তির কুঠারাঘাতে নির্বিচার, নিষ্ঠুর কোপে বনজসম্পদের বিনাশ করে গেছেন তারা, ফলে সংকুচিত হয়েছে বনভূমি। প্রকৃতিদত্ত সম্পদ কিংবা ক্ষেত্র বিনষ্ট করে ডেকে আনা হচ্ছে সর্বনাশ। বন ধ্বংসের প্রক্রিয়া বন্ধ করতে না পারলে ভবিষ্যৎ ঝুকির মাত্রা আরও স্ফীত হবে এবং আগামী প্রজন্ম সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলদের দায়িত্ব পালনে তাদের ব্যর্থতার জন্য আত্মবিনাশী ছাড়া অন্য কোনো অভিধায় অভিহিত করবে না।

কোনো কোনো সূত্রের দাবি, বাংলাদেশে এখন বনভূমির পরিমাণ ৫ শতাংশের নিচে এসেছে এবং দ্রুত তা কমছে। তাই বনভূমি রক্ষার কাজটিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে হবে এখন। আমাদের বনায়নের জোরদার উদ্যোগ নেই, কিন্তু নানাভাবে বন ধ্বংসের প্রক্রিয়া অতীত থেকে চলে আসছেই।

বিশ্ব জুড়ে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব এখন স্পষ্ট। জলবায়ুর পরিবর্তনের ফলে নিয়মিতভাবে দাবদাহ, ঘুর্নিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগও বাড়ছে। একই সঙ্গে বাড়ছে সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতাও। এ ছাড়া বনের গাছ কেটে ফেললে সেটিও জলবায়ু পরিবর্তনে বিরূপ প্রভাব ফেলে।

কারণ গাছ কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্রহণ করে এবং বিপুল পরিমাণ বন উজাড় হলে বায়ুতে ক্ষতিকর এই গ্যাসের পরিমাণ বেড়ে যায়। অর্থাৎ বন ধ্বংস করে মানুষ বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির পথ আরও উন্মুক্ত করে দিচ্ছে। ব্যাপক শিল্পায়নের শুরু থেকে জীবাষ্ম জ্বালানির ব্যবহার যত বেড়েছে, পৃথিবীর বায়ু মন্ডলে বেড়েছে কার্বন গ্যাসের ঘনত্ব। আর এর প্রভাবে বাড়ছে বিশ্বের তাপমাত্রা, যা বদলে দিচ্ছে জলবায়ু, ডেকে আনছে বিপর্যয়। জলবায়ু পরিবর্তনের এই গতিকে আরও ত্বরান্বিত করছে বৃক্ষ নিধন।

বনভূমির পরিমাণ কমে যাওয়ায় দিন দিন প্রকৃতি ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করছে। বজ্রপাত, অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি, হঠাৎ বন্যা, ঝড়, তাপমাত্রা বৃদ্ধিই তার নমুনা। যে কোনো মূল্যে ভূমি দস্যুদের হাত থেকে বনভূমিকে রক্ষা করতে হবে। প্রাকৃতিক বিপর্যয় থেকে মুক্তি এবং সরকারি সম্পত্তি রক্ষা করতে হলে বন রক্ষার বিকল্প নেই।



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS