ভিডিও

শিক্ষায় বাজেট বেড়েছে টাকার অঙ্কে, কমেছে জিডিপির হারে

প্রকাশিত: জুন ০৯, ২০২৪, ১০:৪৮ রাত
আপডেট: জুন ১০, ২০২৪, ০১:১৮ রাত
আমাদেরকে ফলো করুন

২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে শুধু শিক্ষায় বরাদ্দ ছিল ৮৮ হাজার ১৬২ কোটি টাকা। আর এবার ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট বরাদ্দ ৯৪ হাজার ৭১১ কোটি টাকা। সেই হিসাবে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের চেয়ে ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে টাকার অঙ্কে শিক্ষায় বরাদ্দ প্রস্তাব বেড়েছে ৬ হাজার ৫৪৯ কোটি টাকা।

এ বছর জিডিপির আকার ধার্য করা হয়েছে ৫৫ লাখ ৯৭ হাজার ৪১৪ কোটি টাকা। সেই হিসেবে শিক্ষা বাজেট জিডিপির ১ দশমিক ৬৯ শতাংশ। গত বাজেটে জিডিপির আকার ছিল ৫০ লাখ ৬ হাজার ৭৮২ কোটি টাকা। জিডিপি অনুযায়ী শিক্ষা বাজেট ছিল ১ দশমিক ৭৬ শতাংশ। সেই হিসেবে জিডিপির আকার অনুযায়ী আগের বছরের তুলনায় বরাদ্দ কমেছে।

গত বৃহস্পতিবার (৬ জুন) জাতীয় সংসদে ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের জন্য জাতীয় বাজেট প্রস্তাব আকারে উত্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী।

বাজেট বক্তব্যে তিনি জানান, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষায় ৪৪ হাজার ১০৯ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। যা চলমান ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ছিল ৪২ হাজার ৮৩৭ কোটি টাকা। এবার বেশি প্রস্তাব করা হয়েছে ১ হাজার ২৭২ কোটি টাকা।

অন্যদিকে অর্থমন্ত্রী কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ১১ হাজার ৭৮৩ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করেন, যা ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ছিল ১০ হাজার ৬০২ কোটি টাকা। সেই হিসেবে ১ হাজার ১৮১ কোটি টাকা বেশি প্রস্তাব করা হয়েছে।

 

আর প্রাথমিক ও গণশিক্ষায় ৩৮ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করেন, যা চলমান ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ছিল ৩৪ হাজার ৭২৩ কোটি টাকা। সেই হিসেবে ৪ হাজার ৯৬ কোটি টাকা বেশি বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে।

অর্থমন্ত্রীর বাজেট বক্তব্য অনুযায়ী শিক্ষার দুই বিভাগ এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় মিলিয়ে টাকার অঙ্কে ৬ হাজার ৫৪৯ কোটি টাকা বেশি বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে।

শিক্ষাবিদ ও শিক্ষা গবেষকরা বলছেন, টাকার অঙ্কে বাজেটে বরাদ্দ বাড়লেও বেশি বলা যাবে না। কারণ গত এক বছরের মূল্যস্ফীতির প্রভাব বিবেচনা করলে এই বছর বাড়তি অর্থ বরাদ্দ প্রস্তাব করা হলেও তা আগের বছরের তুলনায় একদিক থেকে কম। কারণ আগে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকায় যা কেনা যেতো এখন সেই টাকায় সমপরিমাণ পণ্য বা সেবা কেনা যাবে না। আর সে কারণে একে বেশি বলার সুযোগ নেই। তাছাড়া দেশের জিডিপির আকার বাড়লেও শিক্ষা বাজেট সে হারে বাড়েনি, বরং কমেছে।

প্রস্তাবিত বাজেটের তথ্য-উপাত্ত থেকে দেখা গেছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে জাতীয় বাজেট ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার মধ্যে শিক্ষা খাতে ৯৪ হাজার ৭১১ কোটি টাকা বরাদ্দের জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে, যা জাতীয় বাজেটের ১১ দশমিক ৮৮ শতাংশ। বিশেষজ্ঞদের মতে, আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী শিক্ষা খাতে জাতীয় বাজেটের ১৫-২০% বা জিডিপির ৪-৬% বরাদ্দ দেওয়ার অঙ্গীকার থাকলেও বাংলাদেশের বরাদ্দ উভয় মানদণ্ডে অনেক কম। যার নেতিবাচক প্রভাব প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ওপর পড়ে।

২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের ডিজিপির আকার ৫৫ লাখ ৯৭ হাজার ৪১৪ কোটি টাকা। শিক্ষা বাজেট জিডিপির ১ দশমিক ৬৯ শতাংশ। শিক্ষা খাতে বরাদ্দ স্ফীত করার লক্ষ্যে প্রতি বছরই কোনও না কোনও মন্ত্রণালয়ের বাজেট শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বাজেটের সঙ্গে যুক্ত করা হয়। এবার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের ১৩ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকা এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের ২ হাজার ৮৭৩ কোটি টাকা শিক্ষা বাজেটের সঙ্গে একত্রিত করে শিক্ষা খাতে মোট বরাদ্দ দেখানো হয়েছে ১ লাখ ১১ হাজার ১৫৭ কোটি টাকা। যা জাতীয় বাজেটের ১৩ দশমিক ৯৫ শতাংশ।

জাতীয় বাজেটে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে ছিল ১১ দশমিক ৫৭ শতাংশ, এর থেকে বেড়ে ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের জন্য বরাদ্দ ১১ দশমিক ৮৮ শতাংশ হয়েছে।

বাজেট বরাদ্দ নিয়ে জানতে চাইলে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা শিক্ষাবিদ রাশেদা কে চৌধুরী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘শিক্ষার্থীপ্রতি বরাদ্দ বাড়েনি। জিডিপির আকার অনুযায়ী বরাদ্দ বাড়েনি, বরং কমেছে। টাকার অঙ্কে বরাদ্দ বাড়লেও যেটুকু বরাদ্দ হয়েছে, মূল্যস্ফীতি অনুযায়ী অ্যাডজাস্ট হয়নি। মুদ্রাস্ফীতি অনুযায়ী সব ক্ষেত্রে অ্যাডজাস্ট করা হলেও শিক্ষা ক্ষেত্রে হয়নি, এ ক্ষেত্রে অগ্রাধিকারে আসেনি। মূল্যস্ফীতি অ্যাডজাস্ট করলে শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি বাড়ার কথা কিন্তু বাড়েনি।’

তিনি আরও বলেন, ‘এবার ভালো ভালো দুই-তিনটি দিক আছে। একটি হলো মিড-ডে মিলের কথা এসেছে, এটা প্রায় হারিয়ে যাচ্ছিল। এটার পরিসর বাড়ানো হয়েছে। টাকার অঙ্কে বেড়েছে এটা ভালো দিক। আইসিটির ওপর যথেষ্ট গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে, কিন্তু মাঠে ময়দানের অবস্থা কী আপনারা ভালো করেই জানেন। ডিজিটাল ল্যাবগুলোর কী অবস্থা? প্রশিক্ষিত শিক্ষক নেই, তার উদাহরণ হলো সিলেট শিক্ষা বোর্ডের ফলাফল বিপর্যয়। বেশিরভাগ জায়গায় শিক্ষক স্বল্পতা এবং দক্ষ, প্রশিক্ষিত শিক্ষকের অভাব। এগুলোর দিক নিরসনের দিকনির্দেশনায় দেখি প্রশিক্ষণের কথা বলা হয়েছে। শিক্ষকদের বেতন ভাতা বাড়াতে হবে। শুধু বাড়ালেই হবে না, প্রতিবছর দুঃখের সঙ্গে লক্ষ করি এডিপির টাকা ফেরত যাচ্ছে। শিক্ষা আর স্বাস্থ্য মিলিয়ে ১২ হাজার কোটি টাকা ফেরত গেছে। মানব সক্ষমতা বিনির্মাণের যে দুটি পিলার—শিক্ষা ও স্বাস্থ্য, যা দিয়ে সমাজ চলবে, সেই জায়গায় কিন্তু বাজেট ব্যবহারের দক্ষতা দেখতে পাচ্ছি না। যেখানে সেখানে বরাদ্দ ব্যবহার নয়, সেটা ব্যবহার এবং নিরীক্ষণের দক্ষতা প্রয়োজন। প্রতিবছর সরকার আইসিটির জন্য অর্থ দিচ্ছে, কিন্তু তারপরও প্রশিক্ষিত ইনস্ট্রাক্টর নেই, বাক্সবন্দি হয়ে থাকে বিভিন্ন যন্ত্রপাতি। ডিজিটাল ক্লাসরুমের অবস্থা কী সে তথ্য আমাদের কাছে নেই। এসব নিয়ে গবেষণা নেই। সব জায়গায় গবেষণার জন্য গুরুত্ব দেওয়া হলো, শিক্ষা গবেষণায় কেন দেওয়া হলো না। তাহলে গবেষণা যেমন হবে, ফলাফলও তেমন হবে।’

শিক্ষায় বাজেট বরাদ্দ বিষয়ে জানতে চাইলে শিক্ষা গবেষক কে এম এনামুল হক বলেন, ‘এই দুর্মূল্যের বাজারে বাংলাদেশের শিক্ষা বাজেটে টাকার অঙ্কে কমেনি এজন্য সন্তুষ্ট। কিন্তু বাংলাদেশে যে মুদ্রাস্ফীতি হয়েছে সে বিবেচনা করলে প্রকৃত অর্থে শিক্ষা বাজেট কমেছে। সরকার যখন বলছে মুখস্থনির্ভর পরীক্ষাভিত্তিক শিক্ষা পদ্ধতি থেকে বেরিয়ে একটি লার্নিং সোসাইটি প্রোমোট করার জন্য কারিকুলাম ঢেলে সাজিয়েছে, সেই ধরনের কার্যক্রম বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে এই অর্থায়ন পর্যাপ্ত নয়। এ জন্য শিক্ষা প্রশিক্ষণ, শিক্ষকদের লার্নিং ম্যাটেরিয়ালের জন্য প্রচুর টাকা বিনিয়োগ করতে হবে। যদি সরকার সেটা না করে তাহলে শিক্ষার জন্য পিতামাতার ব্যয় বা পারিবারিক ব্যয় অনেক বেড়ে যাবে। তাতে করে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর শিশুদের শিক্ষায় নানাবিধ ঝুঁকি মোকাবিলা করতে হবে। দ্বিতীয় কথা হচ্ছে, এবারের বাজেটে বাংলাদেশকে প্রচুর বৈদেশিক ঋণের সুদ পরিশোধ করতে হবে। অভ্যন্তরীণ ঋণ নিতে হবে, এই ঋণনির্ভর বাজেট বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে যথাসময়ে অর্থ ছাড় করা সম্ভব হবে না। এবং অনেক ক্ষেত্রে রিভাইস বাজেটে বরাদ্দ কমে যাওয়ার ঝুঁকি আছে। যা মানব সক্ষমতা উন্নয়নের ক্ষেত্রে বড় বাধা হবে। এ বাধা উত্তরণ করতে হলে শিক্ষাকে সরকারের বিশেষ অগ্রাধিকার দিয়ে শিক্ষা ক্ষেত্রে যথাসময় অর্থ ছাড় এবং উদ্ভাবনীমূলক প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে শিক্ষকদের ক্ষমতায়ন এবং নতুন শিক্ষক নিয়োগ এবং শিক্ষা সংক্রান্ত যত পদ আছে তা পূরণ করে শিক্ষাকে এগিয়ে নিতে হবে।



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS