আর একটি মৌলিক গল্পের অপেক্ষায় ববিতা
অভি মঈনুদ্দীন: প্রায় দশ বছর হলো নতুন কোনো সিনেমাতে অভিনয় করছেন না উপমহাদেশের আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন নায়িকা ববিতা। অস্কারজয়ী বিশ্বনন্দিত চলচ্চিত্র পরিচালক সত্যজিৎ রায়ের ‘অশনি সংকেত’ সিনেমার নায়িকা ববিতাকে নিয়ে সর্বশেষ নারগিস আক্তার ‘পুত্র এখন পয়সাওয়ালা’ সিনেমাটি নির্মাণ করেছিলেন। ২০১৫ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত এই সিনেমার পর আর নতুন কোনো সিনেমাতে অভিনয়ে দেখা যায়নি তাকে। অবশ্য এরপর অনেক চলচ্চিত্র নির্মাতাই তার কাছে গিয়েছেন, সিনেমার গল্প শুনিয়েছেন। কিন্তু ববিতার গল্প ভালো লাগেনি। ববিতা আবার যদি কখনো সিনেমাতে অভিনয়ে ফিরেন তেেব একেবারেই মৌলিক একটি গল্পের সিনেমাতে অভিনয় করবেন।
কানাডা থেকে মুঠোফোনে ববিতা এই প্রসঙ্গে তার অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে বলেন,‘ সত্যি বলতে কী বিগত প্রায় দশ বছরে অনেক নির্মাতাই গল্প শুনিয়েছেন। কিন্তু কারো গল্পই আসলে আমার মন ছুঁয়ে যায়নি, যাতে আমি অভিনয় করার আগ্রহ পাবো। কিন্তু এটাও সত্যি আমার এখনো চলচ্চিত্রে অভিনয় করার আগ্রহ আছে। আগ্রহ আছে এ কারণেই যে আমিতো মনেপ্রাণে একজন চলচ্চিত্রাভিনেত্রী। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত আমি অভিনয়ই করে যেতে চাই। কিন্তু বিগত দশ বছরে একটি ভালো গল্পের সিনেমাতে অভিনয় করার সুযোগ এলোনা আমার। এখনো আমি প্রতীক্ষায় আছি হয়তো একটি খুব ভালো মৌলিক গল্প আমার কাছে আসবে। পাশের দেশেই যদি তাকাই , এখনো তাদের দেশের জীবন্ত কিংবদন্তী অভিনয় শিল্পীদেরকে কেন্দ্র করেই গল্প এগিয়ে যায়, সিনেমা নির্মিত হয়। গল্পের কারণেই কিংবদন্তী শিল্পী সিনেমার প্রাণ হয়ে উঠেন। আর যারা তরুন শিল্পী থাকেন তারা সেই শিল্পী’র পাশে অভিনয় করে সিনেমাটিকে আরো অলংকৃত করে তোলেন। তারা প্রবল আগ্রহ নিয়ে কিংবদন্তীর সঙ্গে অভিনয় করেন। আমরা তা পর্দায় প্রাণভরে উপভোগ করি। কিন্তু আমাদের দেশে এখনো এই ধরনের সিনেমা নির্মাণে সাহস পাননা নির্মাতারা। একজন শ্রদ্ধেয় আলমগীর ভাই, সোহেল রানা ভাই’সহ আরো অনেকেই বেঁচে আছেন। তাদের নিয়ে এখনো ভালো ভালো গল্পের সিনেমা হতে পারে। অথচ তাদের অনেকেই আমারই মতো বহুবছর যাবত সিনেমার সাথে সম্পৃক্ত নেই। আমরা আমাদের অভিজ্ঞ শিল্পীদের কাজে লাগাতে পারছিনা। তাই আমার এই সময়ে এসে একটু আফসোসই হয় যে আমি জীবনের শেষপ্রান্তে এসে একটি ভালো মৌলিক গল্প পেলাম না যাতে আমি মন প্রাণ দিয়ে নিজেকে পূর্ণ নিবেদিত করে অনেক কষ্ট করে অভিনয় করতে পারি। হয়তো সেই সময় আসবে, জানিনা তা কবে।
আরও পড়ুনববিতা বাংলাদেশের একজন সফল চলচ্চিত্র অভিনেত্রী এবং প্রযোজক। তিনি বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের ৭০-র দশকের সেরা অভিনেত্রী ছিলেন। ববিতা ৩৫০ এর বেশি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। তিনি ১৯৭৫ সালে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রবর্তনের পর টানা তিনবার শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর পুরস্কার লাভ করেন। এছাড়া ১৯৭৬, ১৯৭৭, ১৯৮৫ সালে সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার পান। ১৯৯৬ সালে শ্রেষ্ঠ প্রযোজক, ২০০২ ও ২০১১ সালে পার্শ্ব চরিত্রে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে ভূষিত হন। ২০১৬ সালে তাকে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের আজীবন সম্মাননা পুরস্কার প্রদান করা হয় ।
মন্তব্য করুন