ভিডিও বুধবার, ১৫ জানুয়ারি ২০২৫

শবে বরাত মুক্তির রাত

ছবি সংগৃহীত

শবে বরাতে রহমত ও মাগফেরাত

হাদীস: মুয়ায ইবনে জাবাল (রাঃ)-এর রেওয়ায়েতে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, আল্লাহ তাআলা শাবান মাসের ১৫তম রাতে সকল সৃষ্টির প্রতি মনোনিবেশ করেন এবং সকলকে মাগফেরাত করে দেন। কিন্তু মুশরিক ও বিদ্বেষ পোষণকারীকে ক্ষমা করা হয় না (তাবরানী)। বায়হাকীর রেওয়ায়েতে আরও আছে, আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী, গিটের নিচ পর্যন্ত লুঙ্গি-পাজামা পরিধানকারী, মদ্যপানে অভ্যস্ত ব্যক্তি এবং অন্যায়ভাবে হত্যাকারীকেও এ রাতে ক্ষমা করা হয় না।

হাদীস: হযরত আয়েশা(রাঃ) বলেন,এক রাতে আমার নিদ্রাভঙ্গ হলে আমি রাসূলুল্লাহ(সাঃ)-কে বিছানায় পেলাম না। আমি তার তালাশে বের হলাম এবং মদীনার কবরস্থান বাকীতে গিয়ে পেয়ে গেলাম। তিনি আমাকে দেখে বললেন, তুমি শংকিত হয়ে পড়েছিলে যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল তোমার প্রতি অবিচার করবেন? (অর্থাৎ তোমার পালার রাত হওয়া সত্ত্বেও আল্লাহর রাসুল অন্য কোনো পত্নীর কাছে গিয়ে রাত কাটাবেন।) আমি আরয করলাম, হ্যাঁ, আমার তাই ধারণা হয়েছিলো যে আপনি অন্য কারও কাছে চলে গেছেন।

তিনি বললেন, (না, আমি তা করিনি, বরং বাকীতে এসেছি। কারণ, এটা দোয়ার রাত।) আল্লাহ তাআলা শাবানের ১৫তম রাতে নিকটতম আকাশের দিকে বিশেষ মনোযোগ দেন এবং কলব গোত্রের ছাগলের চুলের চেয়েও অধিকসংখ্যক মানুষকে মাগফেরাত দান করেন। (তিরমিযী)

হাদীস: হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেন,রাসূলে করীম (সাঃ) আমাকে বললেন, তুমি জান, এ রাতে অর্থাৎ শাবানের ১৫তম রাতে কি হয়? আমি আরয করলাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ, বলুন, কি হয়? তিনি বললেন, এ রাতে এমন প্রত্যেক শিশুর নাম লিখে দেয়া হয়, যে পরবর্তী বছর ভূমিষ্ঠ হবে। এছাড়া প্রত্যেক এমন ব্যক্তির নাম লিখে দেয়া হয়, যে পরবর্তী বছর ইন্তেকাল করবে (আল্লাহ তো সব কিছু জানেন।

তবে প্রশাসনিক কাজে নিযুক্ত ফেরেশাতদেরকে এসব লোকের তালিকা হস্তান্তর করা হয়।) এ রাতে নেক আমলসমূহ উপরে তুলে নেয়া হয় (অর্থাৎ কবুলিয়তের পর্যায়ে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।) এ রাতে মানুষের রিযিক বিতরণ হয়। হযরত আয়েশা(রাঃ) বলেন, আমি আরয করলাম, ইয়া রাসূলূল্লাহ, আল্লাহর রহমত ছাড়া কেউ জান্নাতে দাখিল হবে না- একথা ঠিক নয় কি? জওয়াবে তিনি তিনবার বললেন, হ্যাঁ, আল্লাহর রহমত ছাড়া কেউ জান্নাতে দাখিল হবে না।

আমি বললাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ, আপনিও আল্লাহর রহমত ছাড়া জান্নাতে দাখিল হবেন না? একথা শুনে তিনি মাথায় হাত রাখলেন এবং বললেন, আমিও জান্নাতে দাখিল হতে পারবো না- যে পর্যন্ত আল্লাহর রহমত আমাকে ঢেকে না নেয়। একথাটিও তিনি তিনবার বললেন। (মেশকাত)

আরও পড়ুন


রাতে দোয়া ও এবাদত এবং দিনে রোযাঃ
হাদীস: হযরত আলী (রাঃ)-এর রেওয়ায়েতে রাসূলূল্লাহ(সাঃ) এরশাদ করেন,যখন শাবানের ১৫তম রাত আসে, তখন তোমরা তাতে নামাযে দন্ডায়মান থাক এবং এর দিনের বেলায় রোযা রাখ। আল্লাহ তাআলা এ রাতে সূর্যাস্তের সময় থেকেই নিকটতম আকাশের দিকে বিশেষ দৃষ্টি দেন এবং বলেন, কোনো মাগফেরাত প্রার্থী আছে কি? আমি তাকে মাগফেরাত দিবো। কোনো রিযিক প্রার্থী আছে কি? আমি তাকে রিযিক দিবো। কোনো বিপদগ্রস্ত আছে কি? আমি তাকে বিপদ থেকে উদ্ধার করবো। এমনিভাবে তিনি বলতে থাকেন, কেউ অমুক বস্তু প্রার্থনাকারী আছে কি? সোবহে সাদেক পর্যন্ত আল্লাহ তাআলা এমনিভাবে বলতে থাকেন। (ইবনে মাজা)


হাদীস সমূহের সারমর্ম:

শবে বরাত সম্পর্কে উপরে কয়েকটি রেওয়ায়েত থেকে জানা যায়, যে, (১) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) শাবান মাসে অন্যান্য মাসের তুলনায় অধিক রোযা রাখতেন। বরং দু'চার দিন বাদে এ মাস নফল রোযার মধ্যেই অতিবাহিত করতেন। (২) শাবানের ১৫তম রাত নফল নামাযে অতিবাহিত করা উচিত। (৩) শাবানের ১৫ তারিখে রোযা রাখা উচিত। (৪) এ রাতে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) গোরস্থানে গমন করতেন, কিন্তু সেখানে কোনো মেলা বসেনি, আলোকসজ্জাও করা হয়নি এবং অনেক মানুষ সেখানে যায়নি। (৫) শাবানের ১৫তম রাতে নিকটতম আকাশের দিকে আল্লাহ তাআলার বিশেষ দৃষ্টি থাকে এবং বিপুলসংখ্যক গোনাহগারের মাগফেরাত হয়, কিন্তু নিম্নোক্ত লোকদের মাগফেরাত হয় না- বিদ্বেষ পোষণকারী, আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী, লুঙ্গি কিংবা পাজামা গিটের নিচ পর্যন্ত পরিধানকারী, পিতা-মাতার অবাধ্য ব্যক্তি, মদ্যপানে অভ্যস্ত ব্যক্তি, অন্যায় খুনী ব্যক্তি।

উপরোক্ত হাদীসসমূহ থেকে আরও জানা যায় যে, আল্লাহপাক শবে বরাতে পরবর্তী বছরে জন্মগ্রহণকারী ও মৃত্যুবরণকারীদের সম্পর্কে ফয়সালা করেন। কার কখন মৃত্যু হবে এবং জীবন লাভ করবে, তা আল্লাহ তাআলার সব সময়ই জানা। কিন্তু এ রাতে ফেরেশতাদেরকে জীবনলাভকারী ও মৃত্যুবরণকারীদের তালিকা প্রদান করা হয়। এছাড়া এ রাতে সৎকর্মসমূহ কবুলিয়তের স্তরে উন্নীত করা হয়।

রিযিকও এ রাতেই নাযিল করা হয়, অর্থাৎ সারা বছরে কে কতোটুকু রিযিক পাবে, তার জ্ঞান ফেরেশতাদেরকে দেয়া হয়। আরও জানা যায় যে, শবে বরাতে আল্লাহপাক বলতে থাকেন, রিযিক প্রার্থী কেউ আছে কি? আমি তাকে রিযিক দিবো। কোনো বিপদগ্রস্ত আছে কি? আমি তাকে নিরাপত্তা দিব।

মাগফেরত প্রার্থী কেউ আছে কি, যাকে আমি মাগফেরাত দিবো? অতএব, মুমিন বান্দার উচিত সমগ্র শাবান মাসে খুব বেশি নফল রোযা রাখা, শবে বরাতে যিকির, দোয়া ও নামায পড়া এবং ১৫ তারিখে রোযা রাখা। কোনো পুরুষ গোরস্থানে চলে গেলে সেটাও ঠিক, কিন্তু সেখানে দল বেঁধে না যাওয়া এবং আলোকসজ্জাও না করা চাই।

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

বগুড়ায় সাবেক এমপি রিপুর জামিন নামুঞ্জুর জামিন হয়নি শফিক-তুফানেরও 

নেত্রকোনায় শিক্ষক হত্যার বিচার দাবিতে মানববন্ধন

 দেশের বাজারে বাড়লো সোনার দাম

ছিনতাই করে পালানোর সময় আদমদীঘিতে আটক ৩

মুন্সীগঞ্জে ২৮ কেজি গাঁজাসহ মাদক ব্যবসায়ী গ্রেফতার

৪০ শতাংশ ভোট না পড়লে আবারও নির্বাচনের প্রস্তাব