বগুড়ায় এলপিজি’র দাম নিয়ে ক্রেতা-বিক্রেতার বাকবিতন্ডা
হাফিজা বিনা : বাসায় রান্নার জন্য গ্যাস (এলপিজি) শেষ হয়ে যাওয়ায় চেলোপাড়া এলাকার গৃহিনী সুমনা তাদের পাড়ার এক খুচরা দোকানে যান গ্যাস সিলিন্ডার কেনার জন্য। সব কিছুই ছিল ঠিকঠাক। কিন্তু দাম দেয়ার সময় বাধে বিপত্তি।
সুমনা দাম দিতে চান ১০৭৪ টাকা। কিন্তু বিক্রেতা ১২ কেজির ওই সিলিন্ডারের দাম কোনভাবেই ১৪৩০ টাকার নিচে নেবেন না। এই নিয়ে দু’জনের মধ্যে শুরু হয় বাক-বিতন্ডা। সোস্যাল মিডিয়ায় একটি জনপ্রিয় টিভি চ্যানেলের অনলাইন পেজে এলপিজির দাম ১০৭৪ টাকা দেখেছেন বলে সুমনা দাবি করেন। খবরটি ভুয়া এবং গুজব বার বার বলেও বিক্রেতা সুমনাকে বিশ্বাস করাতে পারছিলেন না। শেষে তাদের বাক-বিতন্ডায় আশপাশে লোকজন জড়ো হয়।
গত কয়েকদিন হলো সামাজিক মাধ্যমে এলপিজি সিলিন্ডারের দাম কমা নিয়ে একটি নিউজ পোর্টালের পুরাতন পোস্ট নতুন করে ঘুরে ফিরে আসছে। আবার সেই পোস্টটি অনেকে শেয়ার করছে। যাচাই বাছাই না করে সেই পোস্টে কমেন্ট ও শেয়ার করছেন নিজের ওয়ালে। পোস্টটি ছিল এ রকম ‘১২ কেজি এলপিজি সিলিন্ডারের দাম কমে নতুন মূল্য ১ হাজার ৭৪ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
‘কম মূল্যে না পেলে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের হটলাইনে অভিযোগ জানানোর কথাও বলা হয়’। এভাবে ক্রেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে। এই পোস্টের পর স্থানীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অফিসে অনেকে ফোন করে অভিযোগ দিয়ে চলেছেন।
এদিকে প্রতি মাসের ধারাবাহিক মূল্য সমন্বয়ের ধারাবাহিক প্রক্রিয়া হিসেবে গত সোমবার জাতীয় এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন দেশের বাজারে সেপ্টেম্বর মাসের জন্য ১২ কেজির তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস (এলপিজি) সিলিন্ডারের দাম ভোক্তা পর্যায়ে ৪৪ টাকা বাড়িয়ে ১ হাজার ৪২১ টাকা নির্ধারণ করেছে। নতুন করে এই দাম নির্ধারণের তিনদিন আগে থেকেই এলপিজি’র দাম কমার এই ঘোষণা দেখা যায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।
এর আগে গত আগস্ট মাসে জুলাই মাসের দামের চেয়ে ১১ টাকা বৃদ্ধি করে দাম সমন্বয় করা হয়েছিল ১ হাজার ৩৭৭ টাকা। এলপিজি’র দাম কমার এই গুজব ও বিভ্রান্তিকর পোস্টের কারণে বেশিরভাগ ক্রেতা বিপত্তিতে পড়েছেন। বিক্রেতাদের সাথে দরদাম নিয়ে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হচ্ছে সর্বত্র।
আরও পড়ুনঅনেকে দোকানে গিয়ে সেনাবাহিনীকে অভিযোগ করার ভয় দেখাচ্ছেন নয়তো সমন্বয়কদের ডেকে এনে শায়েস্তা করাতে চাচ্ছেন। এমনই একজন এলপিজি ব্যবসায়ী বগুড়া বউ বাজারের আজিজুল হক। তিনি দীর্ঘদিন ধরে এই ব্যবসার সাথে জড়িত। তিনি জানান, গত কয়েকদিন হলো খুব অসুবিধার মধ্যদিয়ে ব্যবসা করতে হচ্ছে।
এমনিতেই বসুন্ধরাসহ বেশ কিছু গ্যাসের আগের মত সরবরাহ নেই। তার ওপর নতুন করে ফেসবুক্রে মাধ্যমে গুজব ছড়িয়ে ক্রেতা এবং বিক্রেতাদের মধ্যে একটা বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছে স্বার্থান্বেষীী মহল। তিনি আরও জানান, ফেইসবুকে এর আগেও সেনাবাহিনী ও বাজার দর নিয়েও গুজব ছড়ানো হয়েছিল। এই গুজব বা বিভ্রান্তি ছড়িয়ে ব্যবসায়ী এবং সাধারণ মানুষকে হেনস্তা করা হচ্ছে। এব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তপক্ষকে এগিয়ে আসতে হবে বলেও তিনি মনে করেন।
বগুড়া সদরের বারপুর এলাকার এলপিজি সিলিন্ডার গ্যাসের ডিলার সাদ এন্ড সাবিদ এন্টারপ্রাইজের রুহুল আমিন রাজু জানান, গ্যাসের দাম ১০৭৪ । এটা ২০২৩ সালের ১ জুনের সমন্বয় করা দামের হিসেব। এটা নতুন করে আবার পোস্ট দিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানো হয়েছে। বরং এ মাসে ৪৪ টাকা বাড়িয়ে দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১হাজার ৪২১ টাকা। দাম কমার এই গুজবের কারণে খুচরা বিক্রেতাদের সাথে সাথে তারাও নানা ধরণের সমস্যায় পড়ছেন।
বগুড়ার জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর বগুড়ার সহকারী পরিচালক মো. মেহেদী হাসান জানান, আসলে এলপিজি সিলিন্ডারের দাম কমেনি বরং ৪৪ টাকা বেড়েছে। বর্তমান মূল্য ১৪২১ টাকা। গত কয়েক দিন হলো ফেসইবুকের মাধ্যমে গত বছরের গ্যাসের দামের একটি পোস্ট ভাইরাল করে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে।
এ ব্যাপারে অনেকে ওই অধিদপ্তরের হটলাইনে অভিযোগ করলে তাদের জানানো হয়েছে এটা একটা গুজব। আপানারা বিভ্রান্ত হবেন না। বরং সবাইকে সতর্ক থাকার জন্য আহবান জানান এই কর্মকর্তা।
মন্তব্য করুন