বগুড়ার হুকমাপুর গ্রামের শত বছরের কূয়াটি এখন নানা রোগের ওষুধ
হাফিজা বিনা : বগুড়া সদরের নামুজার হুকমাপুর এলাকায় শত বছরের বেশি পুরনো এক কূয়াকে কেন্দ্র করে কিছু মানুষের মধ্যে কুসংস্কার বাসা বেঁধেছে। তারা এই কূয়ার পানি পান করছে মনের আশা পূরণ করতে ও বিভিন্ন রোগবালাই থেকে মুক্তি পেতে।
যদিও এই পরিবারের সদস্যের দাবি এই ব্যাপারে তারা কিছুই জানেন না। জন্মের পর থেকে এই কূয়া দেখে আসছেন। কূয়ার পানি ঠান্ডা এবং স্বচ্ছ হওয়ায় এখনও তারা এ্ই পানি পান করছেন। তাদের কোন সমস্যা হয় না। তবে মনের আশা পুরণ বা রোগ বালাই ভাল হয় কিনা তা তারা জানেন না।
বগুড়ার শহর থেকে ১২ কিলোমিটার পশ্চিম-উত্তরে নামুজা এলাকার হুকমাপুরের বাঘাবাড়িতে রাস্তার পাশে সেডের নিচে স্টিলের পাত দিয়ে মোড়ানো একটি কূয়া। তার পানিও টলটলে। সামনের দুই পিলারের সাথে শিকলে বাঁধা দুটি স্টিলের গ্লাস। পানি পান করে যেন কেউ হাতে করে সেই গ্লাস নিয়ে না যেতে পারে এজন্যই এ ব্যবস্থা।
মাঝে মাঝে এ পথ দিয়ে যাওয়া পথচারীরা তৃষ্ণায় ক্লান্ত হয়ে এই কূয়া থেকে ঠান্ডা পানি পান করে তৃপ্ত হন। যিনি এই কূয়াটি খনন করেছিলেন তার উদ্দেশ্যও ছিল তাই। সেই সাথে তার বিস্তৃত বাগানের গাছের গোড়্য়াও এই কূয়া থেকে পানি দেয়া হতো। এভাবেই কেটে গেছে কয়েক যুগ। এই কূয়া নিয়ে কিছু মানুষের মধ্যে এমন এক ধারণা সৃষ্টি হয়েছে যে, এই কূয়ার পানি পান করলে মনের বাসনা পূর্ণ হবে। আর তা থেকেই সাধারণ এই কূয়াকে অসাধারণ করে ফেলেছেন কিছু মানুষ।
এলাকায় গিয়ে এই পরিবারের ছেলে সত্তরোর্ধ্ব মুঞ্জু হাজীর সাথে কথা হয়। তিনি জানান, সেই সময় টিউবওয়েলের প্রচলন ছিল না সব বাড়িতে। বাড়ির প্রয়োজনীয় কাজ, জমিতে ও বাগানে সেচ এবং পথচারীদের তৃষ্ণা মেটানোর জন্য শত বছরেরও বেশি আগে ঐ এলাকার দানশীল ব্যক্তি তার দাদা আলহাজ এফএম মাহির উদ্দিন ও তার স্ত্রী ওছিমন বিবি এই কূয়াটি খনন করেছিলেন।
এরপর কেটে গেছে কয়েক যুগ। তার দাদা মারা যাওয়ার আগেই ১৯৫৫ সালে কূয়া সংলগ্ন জায়গায় তাদের পারিবারিক কবরস্থান নির্মাণ করে গেছেন। তিনি, স্ত্রী এবং তার সন্তানসহ তার পরিবারের মানুষ মারা যাওয়ার পর এই কবরস্থানে তাদের দাফন করা হয়। এরপর অনেক বছর পরে তাদের প্রবাসী চাচাত ভাই জিলহজ্ব কবরস্থানের পাশে ২০১৪ সালে হুকমাপুর শিক্ষা ও শান্তির এতিমখানা নামের দোতলা স্থাপনা গড়ে তোলেন।
আরও পড়ুনসেই সময় তিনি মানুষের সেবার জন্য নির্মাণ করা কূয়াটি স্মৃতি হিসেবে রাখার জন্য ওপরে ছাদ এবং স্টিলের পাত দিয়ে কূয়ার মুখটা বেঁধে দেন। যাতে কোন কীট-পতঙ্গ কূয়ায় প্রবেশ করে পানি পানের অযোগ্য না করে। এই পানি পান করে অসুস্থ হওয়ার কোন ঘটনা তার জানা নেই। তিনি আরও বলেন, তারা কেউ এখানে থাকেন না।
মাঝে মাঝে আসেন। তখন দেখেন, শুক্রবার মহাস্থান মাজারে যারা মানত করতে যান সেই সব মানুষ বাড়ি ফেরার সময় এই কূয়ার পাড়ে এসে দাঁড়িয়ে বোতল ভরে পানি নিয়ে যান এবং সেখানেও পান করেন। জিগ্যেস করলে তারা বলেন, শুনেছেন এই পানি পান করলে মনের আশা পূরণ হয়। যদিও তিনি বলেন, এ্টা তাদের মনে কেমন করে বিশ^াসযোগ্য হয়ে উঠলো তা তিনি জানেন না।
কূয়া সংলগ্ন এতিমখানার একজন শিক্ষক বলেন, এটা একটা পানি ব্যবহারের কূয়া। এই পানি অত্যন্ত ঠান্ডা এবং পরিস্কার। এজন্য এতিমখানার তিনিসহ অনেক শিক্ষার্থীরাও এই পানি পান করেন বেশি গরমের সময়্ । এছাড়াও পথে চলতে গিয়ে তৃষ্ণার্ত মানুষও পানি পান করেন। এছাড়া আর কিছু না। এসব বিশ্বাস করা ঠিক না। এটা কুসংস্কার।
এদিকে কূয়া সংলগ্ন চাতালে ধান শুকাচ্ছিলেন ষাটোর্র্ধ্ব আবু সাইদ ও ইমরোজা। কূয়া দেখিয়ে বলেন, তারা জন্মের পর থেকেই এই কূয়া দেখছেন তারাও তৃষ্ণা পেলে পানি পান করেন। তারা দেখেন মাঝে মাঝে এখানে লোকজন আসেন। কূয়ার পানি পান করেন এবং সাথে করে নিয়ে যান। বলেন এতে তাদের মনের বাসনা পূরণ হবে। তবে তা পুরণ হয় কিনা তা তারা জানেন না।
মন্তব্য করুন