বগুড়ায় অবাধে যত্রতত্র বিক্রি হচ্ছে জ্বালানি তেল
শাওন রহমান : অনুমতি ছাড়াই বগুড়ার যত্রযত্র বিক্রি হচ্ছে জ্বালানি তেল। চাহিদা বাড়ায় বাড়ছে জ্বালানি তেল বিক্রির অবৈধ দোকানের সংখ্যাও। এর ফলে পরিবেশ দূষণের পাশাপাশি মারাত্মক দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন সাধারণ মানুষ।
অথচ পেট্রোলিয়াম সংক্রান্ত আইন অনুসারে বিস্ফোরক পরিদপ্তরের লাইসেন্স ছাড়া কোনো দোকানে জ্বালানি তেল বিক্রি করা যাবে না। জ্বালানি তেল বিক্রির জন্য আধাপাকা ঘর, অগ্নিনির্বাপক সিলিন্ডার, মজবুত ও ঝুঁকিমুক্ত সংরক্ষণাগার, ফায়ার সার্ভিস, পরিবেশ অধিদপ্তর, বিস্ফোরকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের অনুমতিপত্র এবং ট্রেড লাইসেন্স থাকা বাধ্যতামূলক। কিন্তু অসাধু ব্যবসায়ীরা এসব লাইসেন্সের তোয়াক্কা না করে শুধু ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে জ্বালানি তেলের ব্যবসা পরিচালনা করছেন।
বিস্ফোরক পরিদপ্তর সূত্র জানায়, আইনানুযায়ী দাহ্য পদার্থ হওয়ায় লাইসেন্স ছাড়া কেউ পেট্রোল বা অকটেন বিক্রি করতে পারবেন না। কিন্তু দুই হাজার লিটার পর্যন্ত ডিজেল বিক্রি করা যায়। অনুসন্ধানে জানা যায়, এসব নিয়মনীতি উপেক্ষা করে শুধু বগুড়া পৌর শহরেই শতাধিক জ্বালানি তেল বা পেট্রোলিয়াম জাতীয় পদার্থ বিক্রির দোকান গড়ে উঠেছে।
এসব দোকান যেমন অবৈধ, তেমনি এদের তেল সংগ্রহ পদ্ধতিও অবৈধ। এছাড়াও বগুড়ার প্রতিটি উপজেলাসহ প্রত্যন্ত গ্রামগঞ্জের বন্দরে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে অগণিত অবৈধ জ্বালানি তেল বিক্রির দোকান। পেট্রোলিয়াম সংক্রান্ত আইন অনুসারে, বিস্ফোরক পরিদপ্তরের লাইসেন্স ছাড়া কোনো দোকানে জ্বালানি তেল বিক্রি করা যাবে না।
অথচ সাধারণ ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে, এমনকি কোনো বৈধ কাগজপত্র ছাড়াই এসব প্রতিষ্ঠান জ্বালানি তেল বিক্রি করছে। সরকারি এসব নীতিমালার তোয়াক্কা না করেই জেলার সর্বত্র ছোট-বড় বাজারে অবাধে বিক্রি হচ্ছে নানা দাহ্য পদার্থ। আর খোলাভাবে জ্বালানি তেল বিক্রিতে সাধারণ মানুষ থাকে প্রতিটি মুহূর্তে আতঙ্ক আর উৎকণ্ঠায়। ওষুধের দোকান, মুদি দোকান ও কাপড়ের দোকান থেকে ইলেক্ট্রিক দোকানেও চলছে অকটেন, ডিজেল, পেট্রোল ও কেরোসিন বিক্রি।
বিভিন্ন পেট্রোল পাম্প থেকে সংগৃহীত এবং চোরাইপথে আসা গ্যাস কনডেনসেট বা তলানিসহ অন্যান্য নিম্নমানের পদার্থ মিশিয়ে ভেজাল তেল বিক্রির অভিযোগ রয়েছে। মাপে কম দেওয়াও অবৈধ তেল ব্যবসায়ীদের আরেকটি প্রবণতা। বিভিন্ন দোকানে দুই লিটার, এক লিটার অথবা আধা লিটারের প্লাস্টিকের বোতলে পেট্রোল, অকেটন ও ডিজেল ভরে পসরা সাজিয়ে রাখা হয়।
যে কেউ ইচ্ছে করলেই এ সব বোতল ভর্তি জ্বালানি তেল কিনে ব্যবহার করতে পারেন যে কোনো কাজে। এ সব দোকানে ভেজাল তেল সরবরাহের পাশাপাশি পরিমাণে কম ও লিটারে ৫ থেকে ১০ টাকা দাম বেশি রাখায় একদিকে প্রতারিত হচ্ছেন ক্রেতারা, অন্যদিকে গাড়ির ইঞ্জিনের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে।
আরও পড়ুননাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক পেট্রোল বিক্রেতা জানান, মোটরসাইকেল চালকদের চাহিদার কারণেই তারা পেট্রোল বিক্রি করে থাকেন। পেট্রোল পাম্পের চেয়ে প্রতি লিটারে পাঁচ টাকা বেশি রাখেন। পেট্রোল পাম্প দূরে হওয়ায় বা বিপদকালে মোটরসাইকেল চালকেরা খুশি হয়েই ৫-১০ টাকা বেশি দেন। আর পেট্রোল বিক্রি করতে আলাদা যে লাইসেন্স লাগে, সে সম্পর্কে তারা জানেন না বলে দাবি করেন। প্রশাসনের পক্ষ থেকেও কখনো এ ব্যাপারে তাদেরকে কিছু বলা হয়নি।
জানা যায়, এ সব নিম্নমানের ভেজাল তেল ব্যবহার করায় গাড়ির ইঞ্জিনের মারাত্মক ক্ষতি হয়। পাশাপাশি এর কালো ধোঁয়ায় পরিবেশও দূষিত হচ্ছে। এই তেলে যাত্রীদের চোখ জ্বলে এবং ইঞ্জিন থেকেও বেশি শব্দ হয়। এ সব ভেজাল তেলে গাড়ির মাইলেজ কমে যায়। বগুড়াতে অবৈধ তেল বিক্রির দোকানে বেশ কয়েকটি আগুনের ঘটনায় প্রাণহানীর মতো ঘটনাও ঘটেছে। তবুও থেমে নেই অনুমোদনহীন জ্বালানি তেল বিক্রির কারবার।
এ অঞ্চলের পেট্রোল পাম্প মালিকদের সংগঠন সূত্র জানায়, রাজশাহী ও রংপুর বিভাগে প্রায় সাড়ে ৪শ’ পেট্রোল পাম্প রয়েছে। এরমধ্যে বগুড়ায় রয়েছে অন্তত ৮০টি। বগুড়াতে ৬২টি পেট্রোল পাম্পের পরিবেশ ছাড়পত্র আছে বলে জানিয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তর বগুড়া অফিস।
এছাড়াও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের প্রত্যায়ন সাপেক্ষে ৬৫টি পেট্রোল পাম্পের ফায়ার সার্ভিস অনুমতিপত্র নবায়ণ করা আছে বলে জানা গেছে। এর বাইরে যেসব প্রতিষ্ঠান বা দোকান জ্বালানি তেল বিক্রি করছে তাদের বেশিরভাগেরই নেই প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও অনুমোদন।
জানতে চাইলে বগুড়ার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট পি এম ইমরুল কায়েস বলেন, অবৈধ জ্বালানি তেল বিক্রি বন্ধে আমাদের নিয়মিত অভিযান চলছে। পাশাপাশি বিশেষভাবে এ ব্যাপারে আরও জোরদার অভিযান পরিচালনা করা হবে।
মন্তব্য করুন